ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার মুক্তির দাবিতে বিএনপির ফের তিন দিনের কর্মসূচী

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদার মুক্তির দাবিতে বিএনপির ফের তিন দিনের কর্মসূচী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভসহ ৩ দিনের নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঘোষিত কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে, আগামীকাল শনিবার সারাদেশে গণস্বাক্ষর, ১৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার জেলা প্রশাসকদের কাছে স্মরকলিপি এবং ২০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সারাদেশে বিক্ষোভ। কর্মসূচী ঘোষণাকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের নীলনক্সা অনুযায়ী বিরোধীদলের নেতাকর্র্মীদের যেভাবে মামলায় জড়ানো হচ্ছে তাতে মামলা চালাতেই তাদের সারা জীবন শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, নীলনক্সা হচ্ছে বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করা। যেন খালেদা জিয়া ও বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে। ৩ দিনের কর্মসূচী পালন শেষে রাজধানীতে একটি বড় সমাবেশ করতে চায় জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হবে। কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেবে বলে আশা করি। তবে সমাবেশের তারিখের বিষয়ে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে জানানো হবে। এছাড়া বিএনপি নিয়মিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে অন্যবারের মতো এবারও ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। ২২ ফেব্রুয়ারি আমরা পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের আরও নীলনক্সার মধ্যে রয়েছে নতুন আদালত সৃষ্টি এবং একটা মামলাকে ভেঙ্গে দুইটা করা। বিস্ফোরকের জন্য একটা মামলা, ভাংচুরের জন্য আরেকটা মামলা। অর্থাৎ বিরোধীদল যারা করবে তাদের এই মামলা মোকাবেলা করতে করতেই সারাটা জীবন চলে যাবে। তাদের মৃত্যুবরণ করতে হবে এ মামলা ফেস করতে করতেই। এই ভয়াবহ নির্যাতনের অবস্থা আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে। উদ্দেশ্য একটাই তারা দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চায় এবং আগামী নির্বাচনে তারা আবার জয়ী হতে চায়। মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা মামলায়’ সাজা দেয়া এবং তাকে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত’কারাগারে রাখাকে চরমতম নির্যাতন। তাই আমরা এর নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আমরা শুনেছি, অতীতে মধ্যযুগে যে ধরনের কারা নির্যাতন করা হতো, আমরা শুনেছি ব্রিটিশ ঔপনিবেসিক আমলে স্বদেশি আন্দোলনে যারা ছিলেন দেশের জন্য যারা লড়াই করেছিলেন, তাদের যেভাবে কারাগারে নিক্ষেপ করা হতো, যে নির্যাতন করা হতো, তার চেয়ে যন্ত্রণা ও নির্যাতন আজকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কোন অংশে কম করা হচ্ছে না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আমরা যে কর্মসূচীগুলো দিচ্ছি, সেই কর্মসূচীগুলো একেবারেই শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচী। কিন্তু সরকার সেগুলো করতে দিচ্ছে না। ঢাকায় বুধবার আমাদের ৪টা পর্যন্ত যে অনশনের কর্মসূচী ছিলে, সেটাকে সংকুচিত করে একটার মধ্যে পুলিশ শেষ করতে বলেছে। এছাড়া আমাদের বেশ ক’জন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের কোন স্পেসই দেয়া হচ্ছে না। এই স্পেস না দেয়া থেকেই বোঝা যায় তারা কোন নীলনক্সা তৈরি করেছে কিভাবে তারা বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচনে যেতে চান। মির্জা ফখরুল বলেন, সারাদেশে নাশকতার কথা বলে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত সাড়ে চার হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা পরিষ্কার করে বলছি, আমরা শান্তি চাই, আমরা কোন সংঘাত চাই না। আমরা দেশে একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা তৈরি করতে চাই, যে অবস্থার মধ্যে আমরা আগামী নির্বাচনে জনগণ যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেই অবস্থা তৈরি করতে চাই। সেই লক্ষ্যেই আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দিচ্ছি। খালেদা জিয়ার রায়ের সার্টিফাইড কপি ও সাজা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, এই শঙ্কা আমাদের প্রথম থেকেই শুরু হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে মামলা শেষ করায়। শঙ্কা তৈরি হয়েছে, যেখানে তাকে রাখা হয়েছে সেখান থেকে। রায়ের কপিতে সই করতে এক সপ্তাহ লেগে গেল। আমরা এখনও সার্টিফাইড কপি পাইনি। সার্র্টিফাইড কপি পাওয়ার বিষয়টি এরপর আবার কি হবে। আমরা আশঙ্কা করছি শুধু রায়ের ব্যাপার নয় আরও কি কি আসবে আমরা জানি না। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান বরবত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আতাউর রহমান ঢালী, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
×