ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্লোরিডার হাইস্কুলে নির্বিচার গুলি, নিহত ১৭

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ফ্লোরিডার হাইস্কুলে নির্বিচার  গুলি, নিহত ১৭

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় একটি স্কুলে ঢুকে নির্বিচার গুলি চালিয়ে ১৭ জন শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে এক দুর্বৃত্ত। এতে আহত হয়েছে প্রায় এক ডজন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। ঘটনার পরপরই হত্যার দায়ে ওই স্কুলেরই এক সাবেক ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার বিকেলে মিয়ামি থেকে ৭২ কিলোমিটার উত্তরের মধ্যবিত্ত অধ্যুষিত এলাকা পার্কল্যান্ডের মার্জরি স্টোনম্যান ডগলাস হাই স্কুলে এ নির্মম ঘটনা ঘটে। স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এ ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। -খবর এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের। খবরে বলা হয়, স্কুল ছুটির কিছুক্ষণ আগে ১৯ বছর বয়সী নিকোলাস ক্রুজ একটি অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে স্কুলে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় বলে পুলিশ জানিয়েছে। ক্রুজ স্কুলটির সাবেক ছাত্র। শৃঙ্খলাজনিত কারণে তাকে সেখান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। গুলির ঘটনায় নিহতরা ছাড়াও আরও ডজন খানেক আহত হয়েছে বলে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে টুইট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর টেলিভিশন ফুটেজে ঘটনার সময়কার ভীতিকর পরিস্থিতি উঠে এসেছে বলে একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ফুটেজগুলোতে আতঙ্কিত শিক্ষার্থীদের মাথার উপরে হাত তুলে স্কুলভবন থেকে হুড়োহুড়ি করে বের হয়ে আসতে দেখা গেছে, ডজনের ওপর পুলিশ সদস্য ও জরুরী বিভাগের কর্মকর্তারা তখন ছুটছেন ঘটনাস্থলের দিকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে শুনে ফ্লোরিডার দুই সিনেটরও পরে গণমাধ্যমকে ঘটনার বিবরণ জানিয়ে বলেন, বন্দুকধারী ক্রুজ গ্যাস নিরোধক মুখোশ পরে, অ্যাসল্ট রাইফেল, গুলির কার্তুজ ও হ্যান্ড গ্রেনেড নিয়ে ছুটির কিছুক্ষণ আগে স্কুল ভবনে প্রবেশ করে ফায়ার এ্যালার্ম বাজিয়ে দেয় এবং শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের শ্রেণীকক্ষ থেকে বের হয়ে হলওয়েতে আসতে বাধ্য করে। “এরপরই শুরু হয় নৃশংসতা,” সিএনএনকে বলেন সিনেটর বিল নেলসন। সিনেটর মার্কো রুবিও পরে টুইটারে ঘটনার প্রায় একই রকম বর্ণনা দেন। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোকে স্কুলটির কর্মচারী ও আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা গুলি শুরু হওয়ার পরপরই ফায়ার এ্যালার্মের শব্দ শুনতে পান বলে জানান। এরপর মুহূর্তের মধ্যে তিন হাজার তিনশ’ শিক্ষার্থীর স্কুলজুড়ে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়; সবাই হলরুমের দিকে ছুটলেও পরে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে নিয়ে লুকিয়ে পড়তে সাহায্য করেন। সিবিএস নিউজে সম্প্রচারিত এক মোবাইল ভিডিও ক্লিপে স্কুলটির শ্রেণীকক্ষের ভেতরে বন্দুকধারীরা এলোপাতাড়ি গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। ওই ভিডিওতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে , গুলির মধ্যেই শোনা যাচ্ছিল আতঙ্কিত তীব্র চিৎকার। ঘটনার কিছু সময় পর স্কুলের কাছাকাছি একটি এলাকা থেকে বন্দুকধারীকে গ্রেফতার করা হয় বলে সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়। ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রুজ প্রথমে স্কুল ভবন থেকে ছুটে বেরিয়ে আসা আতঙ্কিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পালিয়ে যান। ভিডিও ফুটেজ দেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে শণাক্ত করে এবং ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তাকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়। কয়েক ঘণ্টা পর এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রোয়াড কাউন্টির শেরিফ স্কট ইসরায়েল বন্দুকধারীর নাম নিশ্চিত করেন। ক্রুজ কোনো ঝামেলা ছাড়াই আত্মসমর্পণ করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এসময় তার কাছ থেকে একটি এআর-ফিফটিন-স্টাইল রাইফেল ও গুলির বেশ কয়েকটি কার্তুজ পাওয়া যায়। “এটা ছিল ভয়াবহ। কোন কিছু বলা সম্ভব নয়,” বলেন স্কট। স্কুল ভবনের ভেতর থেকে ১২ জনের লাশ উদ্ধারের কথা জানান তিনি। ভবনের বাইরে পাওয়া যায় আরও দুটি লাশ, রাস্তায় মেলে একটি। আহতদের মধ্যে পরে দুজন হাসপাতালে মারা যান। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বেশ কয়েকজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি আছেন জানালেও তাৎক্ষণিকভাবে কারও পরিচয় দিতে পারেননি তিনি। কাছাকাছি দুটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গুলির ঘটনায় আহত ১৩ জনকে চিকিৎসা দেয়ার কথা জানিয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর। স্কুলটির সাবেক এক শিক্ষার্থী জিলিয়ান ডেভিস জানান, মার্জরি স্টোনম্যান ডগলাস হাই স্কুলে পড়ার সময় ক্রুজ মার্কিন সামরিক বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়া জুনিয়র রিজার্ভ অফিসার প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিল। “মাঝে মাঝেই সে ছুরি ও বন্দুক নিয়ে আশ্চর্য সব কথা বলতো, যদিও কেউই তার কথাকে গুরুত্ব দিত না,” রয়টার্সকে বলেন ১৯ বছর বয়সী জিলিয়ান, যিনি নিজেও স্কুলটির জুনিয়র রিজার্ভ অফিসার প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। ক্রুজকে ‘বন্দুকের জন্য পাগল’ আখ্যা দেন স্কুলের বর্তমান শিক্ষার্থী চ্যাড উইলিয়াম্সও। “অহেতুক ফায়ার এ্যালার্ম বাজানোর মতো বিরক্তিকর আচরণের জন্য পরিচিত ছিল সে, অসামাজিক ধরনের ছিল,” বলেন ১৮ বছর বয়সী উইলিয়ামস। প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী কাইল ইয়োওয়ার্ড জানান, নতুন শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষেই বন্দুকধারী বেশি গুলি চালায়। গুলির পরও পুলিশ আসার আগ পর্যন্ত অনেকেই শ্রেণীকক্ষে লুকিয়ে ছিল বলেও ভাষ্য তার। ২০১২ সালে কানেকটিকাটের একটি স্কুলে গুলিতে ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলিতে হওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী গুলির ঘটনাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। বিশ্বব্যাপী উদযাপিত ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র দিনে ফ্লোরিডার স্কুলে এ গুলির ঘটনা পুরো যুক্তরাষ্ট্রকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। ফ্লোরিডার গবর্নর রিক স্কট একে ‘শয়তানি কাজ’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। নিহতদের শেষকৃত্য এবং আহতদের চিকিৎসার সব খরচ অঙ্গরাজ্যই বহন করবে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি ঘোষণা দিয়েছেন। মার্কিন স্কুলগুলোতে শিশু, শিক্ষক থেকে শুরু করে সবাই এখনকার মতো আর কখনও এতটা অনিরাপদবোধ করেনি বলে টুইটারে বলেছেন ট্রাম্প। হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন তিনি।
×