ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মেলবোর্নে ছুরিকাঘাত ॥ সোমা ও তার বোন জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মেলবোর্নে ছুরিকাঘাত ॥ সোমা ও তার বোন জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশী শিক্ষার্থী মোমেনা সোমা অনলাইনে আইএস ও আল-কায়েদাসহ জঙ্গী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উপকরণ দেখে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। পরবর্তীতে সোমা তার ছোটবোন আসমাউল হুসনাকেও জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করে। তবে তাদের সঙ্গে কোন জঙ্গী সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। মনিরুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মোমেনা সোমা নামের এক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে সেখানকার পুলিশ। সেই সূত্র ধরে তার বাসায় আমরা অভিযান চালাই। সেখানে থাকা তার ছোট বোন হুসনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সে নিজেও জঙ্গীবাদে জড়ায়। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার আসমাউল হুসনাকে জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন ওপেনসোর্স এবং অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলে আমরা এসব তথ্য পেয়েছি। মোমেনা পড়াশোনার জন্য ১ ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া যায়। এর আগে তুরস্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় পরে অস্ট্রেলিয়া যায়। অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার আগে সে তার ছোট বোন আসমাউল হুসনাকে বলেছিল, সেখানে গিয়ে একটা অঘটন ঘটাবে। যদি বাংলাদেশের পুলিশ তার বাসায় আসে সেখানেও যেন অন্তত একজন পুলিশকে হত্যা করে সে শহীদ হয়। (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান জানান, জঙ্গীবাদে জড়িয়ে সিরিয়ায় চলে যাওয়া নজিবুলাহ আনসারীর সঙ্গে মোমেনা সোমার সম্পর্ক ছিল। ২০১৪ সালের শেষ দিকে তাদের বিয়ে হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু নজিবুলাহর পরিবার সেটা না চাওয়ায় বিয়েটা হয়নি। পুলিশের ধারণা, ওই সময় সোমা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৫ সালে সোমার মা মারা যাওয়ার পর সে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। নজিবুলাহ রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করেছে। এরপর মালয়েশিয়ান মেরিন একাডেমিতে পড়তে যান। সেখান থেকে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৬ সালে তার সঙ্গে পরিবারের শেষ যোগাযোগ হয়। জঙ্গীবাদে জড়িয়ে মোহ ভঙ্গ হয়ে দেশে ফিরে পুলিশের কাছে দেয়া গাজী সোয়ানের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, সোয়ানের সঙ্গে নজিবুলাহর তুরস্কে দেখা হয়েছে। কিন্তু এরপর বারবার যোগাযোগ করেও সে আর নজিবুলাহর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। সোয়ানের ধারণা, নজিবুলাহ তুরস্ক সীমান্তে মারা গেছেন। গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করার অভিযোগে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী মোমেনা সোমাকে (২৪) গ্রেফতার করে সে দেশের পুলিশ। অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ বলছে, মোমেনা আইএসের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। তার ব্যাপারে খোঁজ নিতে রবিবার রাতে ঢাকার কাজীপাড়ায় তাদের বাসায় যায় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের দল। একপর্যায়ে সুমনা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তার ওপর ছুরি নিয়ে আক্রমণ চালান। পুলিশের অন্য সদস্যরা তাকে ধরে ফেলেন। দেশের অন্য কোন জঙ্গী সংগঠন বা হোলি আর্টিজানে হামলাকারী জঙ্গীদের সঙ্গে তার কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। দেশের কোন জঙ্গী সংগঠন বা ব্যক্তির সঙ্গে দুই বোনের যোগাযোগ ছিল কী না তা জানতে চাইলে মনিরুল জানান, কোন জঙ্গী সংগঠন বা হলি আর্টিজানে হামলাকারী কারও সঙ্গে এদের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
×