ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

অমর একুশে গ্রন্থমেলার কথাই বলতে হবে আগে। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকার খুব উল্লেখযোগ্য আয়োজন এটি। মাসব্যাপী আয়োজন বাঙালীর ভাষা সংগ্রামের গৌরবময় স্মৃতি ধারণ করে আছে। এ কারণেই বড্ড আবেগের বড় ভালবাসার এই মেলা। প্রাণের মেলা শুরু হয়েছিল গত ১ ফেব্রুয়ারি। এরই মাঝে আয়ুর অর্ধেক ফুরিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল ১৫তম দিন। বাকি দিনগুলো চলে যাবে তুফানের গতিতে। হয়ত তাই বই কেনায় মন দিয়েছেন পাঠক। এখন বিক্রি বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে। প্রায় সব স্টল ও প্যাভিলিয়নের সামনে ঢুঁ মারছেন পাঠক। অবশ্য ঢুঁ মারা বললে এখন ভুল হবে। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বই দেখছেন। অনেকের হাতেই পছন্দের বইয়ের দীর্ঘ তালিকা। বাকিরা বইয়ের বিষয় দেখে, লেখকের নাম দেখে বই কিনছেন। মেলায় বইও এসেছে প্রচুর। বাংলা একাডেমির হিসাব বলছে, গত ১৪ দিনে মেলায় এসেছে ১ হাজার ৯৩২টি। ভাল বই এত হয় না। হবে না। মেলায় আসছে অনেক মন্দ মানহীন বইও। তবুও বই। কত যে আবেগ দিয়ে লেখা। কত কিছু যে বলে ফেলার চেষ্টা। দেখে অবাক হতে হয়। এখানেই শেষ নয়, অনেকে নিজের টাকা খরচ করে বই বের করছেন। প্রচার চালাচ্ছেন সাধ্যমতো। লোকে তার বই লেখার খবরটি জানুক। জানাতে পারলেই খুশি। এবার কিছু বইয়ের কথা হোক। নতুন লেখকরা কবিতাই লিখছেন বেশি। এই যেমন ইছামতি প্রকাশনী থেকে মেলায় এসেছে মুহাম্মদ মামুন মিয়ার প্রথম কবিতার বই ‘নারী।’ বাবা ছেলে একসঙ্গে কবিতা লিখছেন এমন উদাহরণও আছে। হায়দার বসুনিয়া লিখেছেন ‘অমোঘ সায়াহ্ন’ এবং ‘হংস সংলাপ ও রঙিন চশমা।’ তার ছেলে শাহাজাদা বসুনিয়া লিখেছেন ‘সাহকাহন’ ও জলতরঙ্গের ছোঁয়া।’ একসঙ্গে এই চারটি বই মেলায় এনেছে বিশ্ব সাহিত্য ভবন। সুমন রায়হান লিখছেন আগে থেকেই। এবারের মেলায় এসেছে তার কবিতার বই ‘নদীও জলে নামে।’ প্রকাশ করেছে দি রয়েল পাবলিশার্স। বই পড়ে জানা যাচ্ছে বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কেও। তেমন একটি বই ‘হৃদ স্পন্দন।’ লিখেছেন ডাঃ তৌফিকুর রহমান ফারুক। প্রকাশ করেছে ডাঃ টি রহমান কার্ডিয়াক কেয়ার ফাউন্ডেশন। অনেক বন্ধু সুহৃদ একত্রিত হয়েও বই লিখেছেন। তেমন একটি বইয়ের শিরোনাম ‘স্বপ্নচূড়া ৯৬৯৮।’ ১৯৯৬ সালে এসএসসি এবং ১৯৯৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় বসেছিলেন এমন বেশ কয়েকজন লেখকের লেখা নিয়ে বইটি প্রকাশ করেছে তা¤্রলিপি। বইটি সম্পাদনা করেছেন আশরাফুল ইসলাম সাগর ও সাদিয়া সুলতানা। মেলা মঞ্চেও নিয়মিতভাবে চলছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় ‘আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আহমদ কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ এবং এম আবদুল আলীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বলার অপেক্ষা রাখে না, এভাবে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত বই উৎসবে মেতে থাকবে ঢাকা। অবশ্য এখন বসন্তের বাতাসটুকুও বইছে। দারুণ উৎসমুখর রাজধানী। আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে/এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায় ...। বসন্তের সেই গান হচ্ছে এখনও। গত মঙ্গলবার ছিল পহেলা ফাল্গুন। এদিন বর্ণাঢ্য বর্নিল আয়োজনে বাঙালী বরণ করে নেয় ঋতুরাজ বসন্তকে। বরাবরের মতোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় আয়োজন করা হয় বসন্ত উৎসবের। এদিন সব বয়সী মানুষ বাসন্তী রঙে সেজে ঘর থেকে বের হন। উৎসবে যোগ দেন তারা। অজানা এক পুলক ভেতরে ছিল, সেটি স্থির থাকতে দেয়নি কাউকে। সবাই মিলে শহর ঘুরে বেড়িয়েছেন। এরই মাঝে অবশ্য ঢুকে পড়েছিল ভালবাসার বিশেষ দিবস ভ্যালেন্টাইন ডে। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিবস উদযাপিত হয়। বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয় এখন। শহর ঢাকার তরুণ প্রজন্ম এদিন লাল রঙে সেজে ছিলেন। তার পর যুগল পথচলা। নিজেদের মতো করে বেড়ানো। একটু খুনসুঁটি। প্রেম। সব মিলিয়ে রাজধানী ঢাকার গত সপ্তাহটি বেশ কেটেছে।
×