ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুশফিকের ফেরা, সৌম্যের প্রথম অর্ধশতক

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মুশফিকের ফেরা, সৌম্যের প্রথম অর্ধশতক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ম্যাচের আগে তার খেলা নিয়েই ছিল শঙ্কা। নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম কব্জিতে আঘাত পেয়েছিলেন অনুশীলনের সময়। সেই শঙ্কা ভেঙ্গে বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি২০ ম্যাচেই খেলতে নামেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে নেমেই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক হাঁকান মুশফিক। গত ৩১ ম্যাচ এবং ২৬ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে ৩০-এর উর্ধ ইনিংস ছিল মাত্র একটিই। বাজে সেই সময়টা কাটিয়ে নিজেকে ফিরে পেলেন তিনি। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন ৬৬ রানে। আর ক্যারিয়ারের ২৭তম টি২০ খেলতে নেমে অবশেষে প্রথম টি২০ অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন বাঁহাতি ওপেনার সৌম্য সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে বাজে সময় যাওয়ার কারণে দল থেকেই ছিটকে গিয়েছিলেন ২৪ বছর বয়সী এ ওপেনার। তবে টি২০ ক্রিকেটে বেশ ভাল সময়ই কাটছিল তার। তবে প্রথমবার দেখা পেলেন অর্ধশতকের। ৫১ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র টি২০ শতক হাঁকিয়েছিলেন ওপেনার তামিম ইকবাল। ওই সময়টাতে নিজেকে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু এ দু’জনই সে সময় বেশ কয়েকবার দাবি করেছিলেন টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক। কিন্তু সেটার প্রমাণ পাওয়া যায়নি গত ৪ বছর ৪ মাসে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালের ৬ নবেম্বর মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ক্যারিয়ারের প্রথম ও একমাত্র ফিফটি হাঁকিয়েছিলেন মুশফিক। ২৯ বলে করেছিলেন কাঁটায় কাঁটায় ৫০ রান। এরপর গত ৩১ ম্যাচের ২৬ ইনিংস ব্যাট করে সর্বোচ্চ ৪৭ রানের একটি ইনিংস উপহার দিতে পেরেছিলেন। সেটিও ছিল মিরপুরে ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এরপর আর কোন ম্যাচেই ৩০-এর বেশি রান আসেনি মুশফিকের ব্যাট থেকে। ক্রমেই যেন এক অন্ধকার গহ্বরে ডুবে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশের এ ব্যাটিং স্তম্ভ। সাধারণত ৪ নম্বরেই ব্যাটিং করেন তিনি টি২০ ম্যাচে। ব্যাটিং করেছেন ৫, ৬ এমনকি ৭, ৮ এমনকি ৯ নম্বরেও ৫ ইনিংসে। তবে বৃহস্পতিবার মুশফিক প্রথমবারের মতো ব্যাট হাতে নামেন ৩ নম্বরে। শুরু থেকেই বেশ সাবলীল ভঙ্গিতে খেলতে থাকেন তিনি। অথচ সর্বশেষ ১৫ ইনিংসে তিনি যে ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তাতে করে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচয়টাই যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল। সর্বশেষ ১৫ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে- ২৪*, ১৬*, ৪, ৪, ১২, ৪, ০, ১৮, ১৫*, ১১, ০, ৮, ১৫, ১৩ ও ২ রান। অর্থাৎ ১২.১৭ গড়ে মাত্র ১৪৬ রান করতে পেরেছিলেন মুশফিক। বৃহস্পতিবার মিরপুর দেখল পুরনো মুশফিককে। তিনি দ্বিতীয় উইকেটে সৌম্যের সঙ্গে ৫১ রানের জুটি গড়েন মাত্র ৩৭ বলে। সৌম্য আউট হয়ে যাওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন মুশফিক। নিজের ৬২তম ম্যাচে নেমে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক হাঁকান ৩৭ বলে। তখন পর্যন্ত কোন ছক্কা হাঁকাননি, ৬টি চার মেরেছিলেন। তবে ফিফটির পর কিছুটা চড়াও হন তিনি। বাকি ৭ বলে ১৬ রান করেন ১ চার, ১ ছক্কায়। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ক্যারিয়ার সেরা ৬৬ রানে। ৪৪ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৭ চার, ১ ছক্কা। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে মাত্র ৪৭ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়ে দলকে সর্বোচ্চ টি২০ ইনিংস গড়ার পথ তৈরি করে দেন। অবশ্য মুশফিকের আগেই বড় সংগ্রহের ভিত দিয়েছিলেন সৌম্য। এ আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান প্রথম থেকেই চড়াও হন শ্রীলঙ্কার বোলারদের ওপর। শ্রীলঙ্কার অভিষিক্ত পেসার মাদুশাঙ্কার করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই তুলে নেন ১৭ রান। এরপরও ঝড় থামেনি সৌম্যের ব্যাটে। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ১ উইকেট হারিয়ে ৭১ রান। ইনিংসের দশম ওভারে ধনঞ্জয়ার বলে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পূর্ণ করেন সৌম্য মাত্র ৩০ বলে। এরপরই অবশ্য আউট হয়ে যান ৩২ বলে ৬ চার, ২ ছক্কায় ৫১ রান করে। এই ফিফটির জন্য ২৭ ম্যাচ অপেক্ষা করতে হয়েছে সৌম্যকে। তিনি এই ২৭ ম্যাচের মধ্যে অন্তত ৫ বার ছুঁতে পারতেন অর্ধশতক। সর্বোচ্চ ৪৮ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন তিনি ২০১৬ সালের ২ মার্চ মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে। এছাড়াও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৪৩ (খুলনা, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬), নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪২ (মাউন্ট মঙ্গানুই, ৮ জানুয়ারি ২০১৭), দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪৭ (ব্লুমফন্টেইন, ২৬ অক্টোবর ২০১৭) এবং ৪৪ (পচেফস্ট্রুম, ২৯ অক্টোবর ২০১৭) রানের ইনিংসগুলোকে অর্ধশতকে রূপ দিতে পারেননি সৌম্য। সর্বশেষ ৬ ম্যাচেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন যথাক্রমে ৩৯, ৪২, ২৯, ৩৪, ৪৭ ও ৪৪ রান। এর সবগুলোই হতে পারতো অর্ধশতক। সেগুলোতে আক্ষেপ সঙ্গী হলেও বৃহস্পতিবার কাক্সিক্ষত ফিফটি পেয়ে গেলেন তিনি।
×