ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চার তরুণের অভিষেক

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চার তরুণের অভিষেক

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ১২ বছর আগে টি২০ ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ক্ষুদ্রতম ফরমেটের এ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই দীর্ঘ সময়ে ৬৯ ম্যাচ খেলেছে দল। এর মধ্যে মাত্র দুটি ম্যাচে একসঙ্গে অনুপস্থিত ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও ওপেনার তামিম ইকবাল। ২০১৩ সালে ৩১ মার্চ শ্রীলঙ্কা এবং ৬ নবেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দুটিতে এ দুই সেরা ক্রিকেটারকে ছাড়া খেলেছিল বাংলাদেশ। দীর্ঘ ৪ বছর ৪ মাস পর আবার এ দু’জনকে একসঙ্গে বাইরে রেখে একাদশ সাজাতে হয়েছে। দু’জনই ইনজুরির কারণে দলে নেই। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেছেন চার তরুণ। অফস্পিন অলরাউন্ডার ১৮ বছর বয়সী আফিফ হোসেন ধ্রুব, উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ২০ বছর বয়সী জাকির হোসেন, বাঁহাতি স্পিনার ২৬ বছর বয়সী নাজমুল ইসলাম অপু ও ২৫ বছর বয়সী অলরাউন্ডার আরিফুল হকের অভিষেক হয়েছে বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি২০ ম্যাচে। এর আগে ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বশেষবার এক টি২০ ম্যাচে ৪ জনের অভিষেক করিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং টেস্ট সিরিজে দলের ব্যর্থতার পর একেবারে নতুন চেহারা পায় টি২০ স্কোয়াড। সাকিব ইনজুরিতে পড়ায় এবং বেশ কয়েকজনের সাম্প্রতিক টি২০ পারফর্মেন্স বাজে হওয়ার কারণে ৫ জন আনকোরা মুখকে দলে টানা হয়। ফিরিয়ে আনা হয় ৩ জনকে এবং বাদ পড়েন ৭ ক্রিকেটার। ম্যাচের দু’দিন আগে তামিমের হাতের পেশিতে টানা লাগায় তার খেলা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়। মুশফিকুর রহীমও কব্জিতে আঘাত পান। সে কারণে দলে বদলি হিসেবে আসেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন। তবে শঙ্কা কাটিয়ে বৃহস্পতিবারের ম্যাচে খেলতে নামেম মুশফিক, নামা হয়নি তামিমের। শেষ পর্যন্ত ম্যাচে ৪ নতুন মুখের অভিযান শুরু হলো। এর আগে কোন ফরমেটেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি আফিফ, জাকির, অপু ও আরিফুল। বৃহস্পতিবার ম্যাচের আগে নতুন ক্যাপটা হাতে নিয়ে ‘স্নেক ড্যান্স’ দেয়ার মতো করলেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তারপর হাসিমুখে সেই ক্যাপ পরালেন নাজমুল ইসলাম অপুর মাথায়। কারণ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) উইকেট পাওয়ার পর ¯েœক ডান্স করেই পরিচিতি পেয়েছিলেন অপু। আফিফের মাথায় ক্যাপ পরিয়েছেন তামিম, জাকিরকে ক্যাপ পরান মুশফিক এবং আরিফুলের মাথায় পরান জাতীয় দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। দুই বছর আগে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজন নিয়মিত ক্রিকেটারকে বাইরে রাখা হয়েছিল। ওই ম্যাচে এক সঙ্গে অভিষেক হয়েছিল চার জনের। টি২০ ক্যাপ পরেছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আবু হায়দার রনি, মুক্তার আলী ও মোহাম্মদ শহীদ। শঙ্কা কাটিয়ে বৃহস্পতিবারের ম্যাচে ফেরেন মুশফিক। কিন্তু সাকিবের পর তামিমও খেলতে পারলেন না। চার বছর পর অপরিহার্য এ দুই ক্রিকেটারকে ছাড়াই টি২০ খেলতে নামে বাংলাদেশ দল। টি২০ ক্রিকেটে কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসেবে আফিফ ৫ উইকেট নিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন ২০১৬ সালের বিপিএলে রাজশাহী কিংসের হয়ে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ২১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে। এর মধ্যে ছিল ক্রিস গেইলের উইকেট। আর মাত্র শেষ হওয়া অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন সহ-অধিনায়ক। তিনি ছোটদের এ বিশ্বকাপে সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হয়েছেন ৭ ম্যাচে ৮ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ৪টি হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। আর গত নবেম্বর-ডিসেম্বরের বিপিএলে খুলনার হয়ে সাবেক দল রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে তার ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংসটিও যথেষ্ট আলোচিত। আর গত কয়েক বছর ধরেই ২০ বছর বয়সী জাকির ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। সেই সঙ্গে উইকেটরক্ষক হিসেবেও আলো ছড়িয়েছেন। রাজশাহী কিংসের হয়ে বিপিএলের সর্বশেষ আসরে ৮ ম্যাচে ২৪.১৪ গড়ে ১৬৯ রান করেন তিনি। আর অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর দল খুলনা টাইটান্সে খেলেছিলেন গত বিপিএলে আরিফুল ও আফিফ। মিডল অর্ডারে ব্যাট করা আরিফুল ১২ ম্যাচের ১১ ইনিংসে ২৯.৬২ গড়ে ২৩৭ রান করেন। দেশী ব্যাটসম্যানদের তালিকায় সাকিব, সাব্বির রহমান, মুশফিকদের পেছনে ফেলে পাঁচ নম্বরে জায়গা করে নেন। বিপিএলের মতো ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টগুলোতে ধারাবাহিক পারফর্মেন্স করার কারণে একাধিকবার জাতীয় দলের নির্বাচকদের ভাবনায় এসেছিলেন তিনি। অবশেষে যাত্রা শুরু হলো তার। ২০১৭ বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন দল রংপুর রাইডার্সের সবচেয়ে ‘এন্টারটেইনার’ ক্রিকেটার ছিলেন নাজমুল অপু। বারবার নিজের বাঁহাতি স্পিনে রহস্যের ফাঁদে ফেলেছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের। সঙ্গে সাপের মতো নাচে তার উদযাপন বাড়তি নজর কেড়েছিল দর্শকদের। ১০ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় দশ নম্বরে ছিলেন।
×