ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চিনি আহরণ কমেছে ১.১৫ ভাগ

রাজশাহী চিনিকলে অতিরিক্ত আখেও অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রাজশাহী চিনিকলে অতিরিক্ত আখেও অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত আখ সংগ্রহ করেও চলতি মৌসুমে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি রাজশাহী চিনিকল। ফলে এবারও সরকারী বিপুল অংকের অর্থের লোকসান প্রায় নিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলছে, আখ থেকে চিনি আহরণের অনুপাত কমে যাওয়ায় অর্জিত হয়নি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। রাজশাহী চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, চলতি চিনি উৎপাদন মৌসুমে আখ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭৩ হাজার মেট্রিক টন। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আখ সংগ্রহ হয়েছে ৯৩ হাজার ৯৫ মে. টন। ৭৩ হাজার মে. টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল সাড়ে পাঁচ হাজার মে. টন। কিন্তু অতিরিক্ত অনেক টাকা ব্যয় করে বাড়তি ২০ হাজার ৯৫ মে. টন আখ সংগ্রহ করেও চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ৯৩ হাজার ৯৫ মে. টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৪৮ মে. টন। এসব আখে চিনি আহরণের অনুপাত হার শতকরা ৫ দশমিক ৮৫ ভাগ। এই চিনি আহরণের অনুপাতের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫ ভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের ১৭ নবেম্বর রাজশাহী চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু হয়। ওই সময় থেকেই শুরু হয় আখ সংগ্রহ অভিযান। চাষীদের কাছ থেকে প্রতিমণ আখ কেনা হয় ১২৫ টাকা দরে। অতিরিক্ত আখ কিনে গত ২৩ জানুয়ারি সংগ্রহ অভিযান শেষ ঘোষণা করেছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। এই সময়ের মধ্যে আখ মাড়াইও হয়েছে। কিন্তু উৎপাদনে রয়েছে ঘাটতি। উৎপাদনে কেন ঘাটতি, জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলেন, অনেক সময় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের মতো বৈরী আবহাওয়ার কারণে আখের চিনি আহরণের অনুপাত কমে যায়। এছাড়া জমি থেকে সময় মতো আখ কাটা না হলেও কমে আহরণের অনুপাত। আবার আখ কেটে দীর্ঘ সময় ধরে সুগার মিলে ফেলে রাখলেও কমে যায় আহরণের অনুপাত। কৃষি কর্মকর্তা বলেন, রাজশাহী চিনিকল ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। কলের পুরনো যন্ত্রপাতিগুলো কর্মক্ষমতা হারিয়েছে। যন্ত্রের কর্মক্ষমতা কমলেও আখ থেকে চিনি আহরণের অনুপাত হার কমে যায়। মূলত এই চার কারণে এবার আখের চিনি আহরণের অনুপাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ফলে অতিরিক্ত আখ দিয়েও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি চিনিকল। চিনিকল কর্তৃপক্ষ জানায়, মিলজোন এলাকায় এবার মোট ৮ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৩৩০ হেক্টর আখ কেটে নেয়া হয়েছে। এতে ফলন পাওয়া গেছে তিন লাখ ৪৩ হাজার মে. টন। অতিরিক্ত আখেও চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশফাকুর রহমান বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আখের চিনি আহরণের অনুপাত কমে গেছে। পুরনো যন্ত্রের কারণেও উৎপাদন কমতে পারে। তবে আখ সংগ্রহের পর তা ফেলে রাখা হয়নি বলে দাবি করেন চিনিকলের এই শীর্ষ কর্মকর্তা। আশফাকুর রহমান বলেন, গত বছর চাষীদের কাছ থেকে ১১০ টাকা মণ দরে আখ কেনা হয়েছিল। এ বছর কেনা হয়েছে ১২৫ টাকায়। আগামী মৌসুমে আরও ১৫ টাকা বৃদ্ধি করে আখ কেনা হবে ১৪০ টাকায়। আখের দাম বৃদ্ধি করায় চাষীরা চিনিকলে আখ দিতে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু জমিতে মানসম্মত আখ উৎপাদন না হওয়ায় চিনি উৎপাদন ভাল হচ্ছে না বলেও মনে করেন তিনি। জানা গেছে, রাজশাহী চিনিকলে চাহিদার তুলনায় যুক্ত আছে অতিরিক্ত জনবল। মৌসুম শেষে প্রতিবছরই মিলের গুদামে বিপুল পরিমাণ চিনি অবিক্রীত থাকে। চাহিদা থাকলেও বিক্রি না হওয়ায় পরের বছর তা কম দামে বিক্রি করতে হয়। এতে আটকে থাকে টাকা। ফলে বাড়ে লোকসানের বোঝা। এভাবে গত এক যুগে প্রায় সাড়ে তিন শ’ কোটি টাকা লোকসান করেছে রাজশাহী চিনিকল।
×