ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কবরস্থানের পাহাড় কাটছে এনজিও

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কবরস্থানের পাহাড় কাটছে এনজিও

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত একাধিক এনজিও দেশের প্রচলিত আইনকে তোয়াক্কা করছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। পাহাড় কাটা আইন উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা সেবার নামে পাহাড় কেটে সমতল করে ফেলছে তারা। এতে দীর্ঘদিনের পুরনো কবরস্থানও বাদ পড়ছেনা। স্থানীয়দের একটি পুরনো কবরস্থানের পাহাড় কাটার সময় মৃত ব্যক্তিদের হাড়-চুলও পাওয়া গেছে বলে মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন। এ খবর বাইরে প্রচার হলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে গ্রামবাসী। এনজিও কর্মীরা তড়িগড়ি করে স্থানীয় শ্রমিক বাদ দিয়ে এনজিও এমএসএফ রোহিঙ্গাদের নিয়োজিত রেখে বালুখালী পশ্চিম পাড়া কবরস্থানের পাহাড় কর্তন করে চলছে। এতে ওই এনজিওর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। পাশাপাশি তাদের ক্ষোভ বাড়ছে রোহিঙ্গাদের প্রতি। এছাড়াও থাইংখালীতে এনজিও আইওএম সমানতালে পাহাড় কর্তন করে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোহিঙ্গা সেবার নামে একাধিক এনজিও পাহাড় কেটে সাবাড় করলেও এক্ষেত্রে বনবিভাগের কর্মীরা অসহায় বলে জানা গেছে। বিদেশী এনজিও কর্মকর্তাদের অবাধ বিচরণে এক প্রকারে জিম্মি বনবিভাগ। এসব দেখে হতবাক স্থানীয় জনতা। নীরব পরিবেশবাদীরা, নিথর জনপদ। অক্ষত পাহাড়গুলো নির্বিচারে নিধন চলছে উখিয়ায়। কাটা হচ্ছে টিলাও। রোহিঙ্গাদের সেবার নামে বাজার বসানো এবং এনজিওর বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে ভরাট করছে ধানী জমি, খালের পাড়, ঝিল বা বর্ষার পানি দাঁড়াবার জমি। আইওএম কর্তৃক থাইংখালীতে পাহাড় নিধনের চিত্র দেখেও বনবিভাগের কর্মচারীরা চোখ বন্ধ করে হাঁটে। সাড়ে পাঁচ মাস আগে সামাজিক বনায়ন শেষ করেছে রোহিঙ্গারা। পরিবেশ রক্ষার বৃক্ষগুলোও কেটে সাবাড়। বালুখালী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নুর আহমদ, ফজল করিম, ছৈয়দ করিম, রহমত উল্লাহ ফকির ও আবুল কালাম সিকদারসহ অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মানবিক কারণে আমাদের বাড়ি ভিটা পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের দখলে দিয়েছি। হাজার হাজার একর বনবিভাগের ও স্থানীয়দের চাষযোগ্য জমি দখল করে রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। ওসব রোহিঙ্গাদের কারণে গ্রামের বহু লোকের ক্ষেত-খামার এবং চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সেবার নামে প্রায় ৭০ রছরের পুরনো কবরস্থান কেটে হাসপাতাল নির্মাণ করে চলছে এনজিও এমএসএফ। যুবলীগ নেতা ও স্থানীয় মেম্বার নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প এ-১ এর পাশাপাশি পশ্চিমপাড়া এলাকায় এমএসএফ কর্তৃক রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে কবরস্থানের পাহাড় কাটা হচ্ছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চতুর্দিকে বেড়ার ঘেরা দিয়ে ভেতরে কবরস্থানের পাহাড় কেটে চলছে তারা। এটি দেশের প্রচলিত আইনকে উপেক্ষা করার পাশাপাশি মুসলমানদের কবরকে পদদলিত করার শামিল। ওই কবরস্থানে মৌলানা, সর্দার-মাতব্বর সহ বহু ধর্মগুরুদের কবর রয়েছে। পাহাড় কাটার সময় বহু মৃত ব্যক্তির হাড় ও মহিলাদের চুল পাওয়া গেছে এবং তা পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কবরস্থানের পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে গ্রামবাসী ফুঁসে উঠেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ওই এনজিওর স্থানীয়রা মানববন্ধন করে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সরকারের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনার উদ্যোগ নিয়েছে। জানা গেছে, উখিয়ার বালুখালী পশ্চিমপাড়ার স্থানীয়দের দাফন করার কবরস্থান হচ্ছে ওই পাহাড়টি। দীর্ঘ ৬ যুগ ধরে ওই পাহাড়ে মুসলিম পরিবারের স্থানীয় মৃত ব্যক্তিদের দাফন করে আসছে। কিন্তু এমএসএফ কর্মীরা তা তোয়াক্কা না করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কবরস্থানটি কেটে সমতল করে চলছে। স্থানীয়রা ওই পাহাড়টি বনবিভাগের বলে জানিয়েছেন। পশ্চিমপাড়ার সর্দার-মাতব্বররা বলেন, পাহাড়ের মালিকানা যারই হোক- দীর্ঘদিনের কবরস্থান কেটে পবিত্রতা নষ্ট করার অধিকার ওই এনজিওর নেই। রোহিঙ্গাদের সেবার নামে কিছুসংখ্যক এনজিও ক্যাম্পে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে গ্রামবাসী প্রতিবাদ না করলেও কবরস্থান কাটার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা সোচ্চার হয়ে উঠেছে বলে জানান তারা। দুর্নীতিপরায়ণ ওসব এনজিওর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গ্রামবাসী উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সূত্র জানায়, এনজিও এমএসএফ ওই জায়গা নিজেদের আয়ত্তে (দখলে) নিতে জেলা প্রশাসন অথবা বনবিভাগের কাছ থেকে কোন ধরনের অনুমতি নেয়নি বলে জানা গেছে। পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের কর্মকর্তা বলেন, শুধু বেসরকারী সংস্থা নয়, সরকারী কাজেও পাহাড় কাটতে হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে। কবরস্থানের খোঁজ পাওয়া যায়নি এবং পাহাড় কাটা সত্য নয় দাবি করে এমএসএফ এর ফিল্ড কমিউনিকেশন্স কর্মকর্তা মোস্তফা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ওই জায়গাটি এমএসএফ কর্তৃক ব্যবহার করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছে কি না তা যাচাই করে জানানো হবে। এদিকে সরকারের পাশাপাশি উখিয়া-টেকনাফে ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গার মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে ১০৫টি এনজিও সংস্থা। বেশির ভাগ এনজিও সংস্থা আশ্রয় ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ক্ষেত্রে দায়িত্বরত কতিপয় এনজিও’র বিরুদ্ধে পুকুরচুরির অভিযোগ উঠেছে। এসব এনজিও গুণগত মানসম্পন্ন ত্রাণ বিতরণের নামে নিম্নমানের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যে সমস্ত ত্রাণ সামগ্রী উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে খোলাবাজারে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। বুধবার রাতে ভেজাল চাল ভর্তি একটি ট্রাক জব্দ করেছে কক্সবাজার সদর ইউএনও। বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে ৯টি এনজিওর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর নিকট প্রতিবেদন পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন।
×