ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মনিরামপুর ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণার কার্যক্রম সফল হয়নি

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মনিরামপুর ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণার কার্যক্রম সফল হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মনিরামপুরে ভিখারীদের জন্য তৈরি দোকানঘরগুলো কাজে আসছে না। উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট-বাজারে ৫-৬টি করে দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছিল ইট ও টিন দিয়ে। কিন্তু ভিক্ষুকদের মধ্যে সেগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। আবার কোন কোন এলাকায় বরাদ্দ দেয়া হলেও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ না দেয়ায় সেখানে দোকান পেতে বসতে পারছেন না ভিক্ষুকরা। ফলে আগে যারা ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন, তারা সেই পেশা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেননি। আর সরকারের ভিক্ষুকমুক্ত মনিরামপুর ঘোষণার কার্যক্রম সফলতা পায়নি। উপজেলাজুড়ে ভিক্ষুকদের জন্য কোথায়, কয়টি দোকানঘর তৈরি করা হয়েছে এবং এগুলো তৈরিতে কত টাকা খরচ হয়েছে তার কোন হিসাবও ইউএনও দফতরে পাওয়া যায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরের সহকারী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এসব কাজ তৎকালীন ইউএনও স্যার নিজেই করতেন। ফলে আমার কাছে পুরোপুরি তথ্য নেই। ইঞ্জিনিয়ার অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।’ সম্প্রতি উপজেলার হেলাঞ্চি ও পাড়দীয়া বাজারে গিয়ে ভিক্ষুকদের জন্য তৈরি দোকানগুলো খালি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। দোকানের মালিক না থাকায় আশপাশের কোন কোন দোকানিকে সেগুলো ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এদিকে উপজেলার সিলেমপুর বাজারে ভিক্ষুকের জন্য বরাদ্দ একটি দোকান বেদখল হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় এক ব্যক্তি প্রভাবশালীদের সহায়তায় দীর্ঘদিন দোকানটি দখল করে আছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। খেদাপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘শুধু হেলাঞ্চি গ্রামেই ১০ ভিক্ষুক আছে। আজ পর্যন্ত কাউকে কোন দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তারা সবাই এখনও ভিক্ষা করছে।’ পাড়দীয়া বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ভিখারীদের জন্য তৈরি করা চারটি দোকানঘর খালি পড়ে আছে। ঘরগুলোর পাশের দোকানদার আকরাম হোসেন একটি দখলে নিয়ে সার বিক্রি করছেন। আর মোতালেব নামে এক ব্যক্তি একটি দখলে নিয়েছেন। প্রতি হাটবারে তিনি সেখানে বসে তরকারি বিক্রি করছেন। বাকি দুটি ঘর খালি রয়েছে।স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউনুস আলী বলেন, ‘ঘরগুলো তৈরির সময় আমাদের কারও পরামর্শ নেয়া হয়নি। তৎকালীন ইউএনও নিজেই সব করেছেন। আমার ওয়ার্ডে ১৬ ভিক্ষুক আছে। জানা মতে, তাদের কাউকে দোকানগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। সবাই এখনও ভিক্ষা করে যাচ্ছে।’ উপজেলার কাশিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম আহাদ আলী বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের কালারহাট বাজারে সরকারীভাবে তৈরি পাঁচটি ঘর খালি পড়ে আছে।’ খুলনা বিভাগকে ভিক্ষুকমুক্ত করার কর্মসূচীর অংশ হিসেবে মনিরামপুরের ৫৫৮ ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মনিরামপুর উপজেলার সব সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের একদিনের বেতনভাতা ‘কেটে নেয়া’ হয়েছিল। একই সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা থেকে সহায়তা নিয়ে মোট নয় লাখ ৩৫ হাজার ৯৪৫ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তার মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ভিক্ষুকদের জন্য দোকান তৈরি ও তাদের মধ্যে ছাগল বিতরণসহ আনুষঙ্গিক কাজে আট লাখ ৮৪ হাজার ৭১০ টাকা খরচ করা হয়েছে। তবে কার্যত এই টাকা খরচ তেমন কোন কাজে আসেনি বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয়রা। পুনর্বাসনের আগে উপজেলায় যত ভিখারী ভিক্ষাবৃত্তি করতেন এখনও তারাই একই কাজ করে চলেছেন। জানতে চাইলে মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘কীভাবে মনিরামপুর উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করা যায় সেই বিষয়ে মনিটরিং চলছে। দ্রুত এই ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা নেয়া হবে।’ চাঁপাইয়ে ভিক্ষুক কমছে স্টাফ রিপোর্টার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে জানান, জেলাজুড়ে ভিক্ষুক ও অভাবী লোকের সংখ্যা কমে আসার কারণে বিত্তবান পরিবার যারা নানানভাবে অর্থ সাহায্য দিতে তারা বেকায়দায় পড়েছে। বিশেষ করে পরিবারের কেউ মারাগেলে চল্লিশাসহ নানান অনুষ্ঠানে পাচ্ছে না অভাবী লোক ও ভিক্ষুক। এমনকি কোরবানির ঈদের মাংস বিতরণ, চামড়ার টাকা ও রোজার সময়ে ফেতরার টাকা বিতরণ করার সময় অভাবী ও ভিক্ষুক খুঁজে পাচ্ছে না। ১৯৮৪ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হওয়ার পর থেকে অভাব, অনাটন এবং গরিবী হটাও শুরু হয়েছে। জেলায় ৪টি পৌরসভা, ৩৩ ওয়ার্ড, ১৩৪টি মহল্লা, ৫ উপজেলা, ৪৫টি ইউনিয়ন, ৪৩০টি মৌজা এবং ১,১৩৬টি গ্রাম বইছে উন্নয়নের ধারা। সে সঙ্গে কমছে গরিব ও অভাবী লোকের সংখ্যা। গত ১০ বছরে অভাবনীয় উন্নয়নের কারণে এবং মোট জনসংখ্যার অধিকাংশ নানান উপয়ে উপার্জনের কারণে গরীব ও ভিক্ষুক শূন্য হয়ে পড়েছে অনেক গ্রাম। জেলার ১৬ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ বিদেশে অবস্থান করছে। যার কারণে প্রায় প্রতিটি গ্রামে দেখা যাবে একাধিক আধুনিক অট্টালিকা। যা সম্পন্ন করা হয়েছে আধুনিক টাইলস লাগিয়ে।বিদেশী রেমিটেন্সের কারণেই স্থানীয় ইসলামী ব্যাংকের ৪টি শাখা সর্বোচ্চ অর্থের লেনদেন করছে। জেলাজুড়ে বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধিক শাখা ভাল ব্যবসা করছে। এর পাশাপাশি বর্তমান সরকারের দুই টার্মের অভূত পূর্ব উন্নয়নের কারণে বরেন্দ্রসহ চরাঞ্চল এবং গ্রামীণ জনপদে অসংখ্য পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
×