ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হুমকির মুখে বসত ভিটা

শরীয়তপুরে থামছে না বালু উত্তোলন

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শরীয়তপুরে থামছে না বালু উত্তোলন

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ১৫ ফেব্রুয়ারি ॥ জেলার ভেদরগঞ্জ, নড়িয়া, জাজিরা ও গোসাইরহাট উপজেলাসহ ৬টি উপজেলার বিভিন্নস্থানে নদী থেকে অবৈধভাবে অবাধে চলছে বালু উত্তোলনের কাজ। নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নদী গর্ভে হারাচ্ছে তাদের ঘর-বাড়ি, বসত-ভিটা। উপজেলা প্রশাসনের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বছরের পর বছর এ অবৈধ কাজ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ দ্বারাই থামানো যাচ্ছে না শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্থানে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কাজ। বছরের পর বছর জেলার বিভিন্নস্থানে প্রশাসনের নাকের ডগায় এ অবৈধ কাজটি চললেও প্রশাসন অনেকটা নির্বিকার। তবে প্রশাসন বলছে, তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ড্রেজিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের জেল-জরিমানা ও মেশিন জব্দ করা হচ্ছে। জেলা সদরসহ ৬টি উপজেলার বিভিন্নস্থানে নদীতে শতাধিক ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে বালুদস্যুরা অবাধে বালু উত্তোলন করছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। একদিকে বালুদস্যুরা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা আর অন্যদিকে নদী ভাঙ্গনে ঘর-বাড়ি, বসত-ভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কিছু কিছু ড্রেজিং মেশিন চালকদের জেল-জরিমানা করেছেন। এদিকে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নদী থেকে বালু উত্তোলনকারী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শরীয়তপুর জেলা সদরসহ নড়িয়া, জাজিরা, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও গোসাইরহাট উপজেলার বিভিন্ন জায়গাঁয় পদ্মা ও মেঘনার শাখা নদীতে শতাধিক স্থানে অবৈধভাবে ড্রেজিং দিয়ে বালু উত্তোলনের হিড়িক পড়েছে। শুধু নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর লঞ্চঘাট থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়নপুর লঞ্চঘাট পযর্ন্ত দীর্ঘ প্রায় ৪০ কিলোমিটার পদ্মার শাখা নদীতে ৪০টিরও বেশি ড্রেজিং মেশিন বসানো হয়েছে। খোজঁ খবর নিয়ে জানা গেছে, নড়িয়া উপজেলার ঘরিসার, হালইসার, নন্দনসার, ডিংগামানিক, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্ত্তিকপুর, রামভদ্রপুর, নারায়নপুর, কোড়ালতলী, চরপায়াতলী, সখিপুর, উত্তর তারাবুনিয়া, দক্ষিণ তারাবুনিয়া, ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা, দক্ষিণ ডামুড্যা, গোসাইরহাট উপজেলার ইদিলপুর, কোদালপুর, জাজিরা উপজেলার কাজিরহাট, নাওডোবা, কু-েরচর, বিলাশপুরসহ জেলার শতাধিক স্পটে চলছে অবৈধ ড্রেজিং মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু ও মাটি উত্তোলনের কাজ। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, নড়িয়া উপজেলার ডিংগামানিকের মানিক মেম্বার, ঘরিসারের বাবুল খা, স্বপন, ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর গ্রামের আকরাম, রেজাউল, ইয়াছিন মৃধা, ভেদরগঞ্জের মোসলেম, আলী আজম, বাবুল চকিদার, মিন্টু মিয়া, সোলাইমান, সখিপুরের জামাল, সেকেন্দার, কিরণ নগরের বাচ্চু মাল, গোসাইরহাটের বাচ্চু বকাউলসহ শতাধিক ব্যক্তি ড্রেজিং মেশিন দিয়ে মাসের পর মাস নদী থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন করলেও উপজেলা প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ড্রেজিং মেশিন মালিকরা জানান, তপশিল অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের কিছু লোককে ম্যানেজড করেই তারা এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। নদী থেকে যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। ভেদরগঞ্জ এলাকার সিদ্দিক মিয়া বলেন, নদীতে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে তার কয়েক শতাংশ ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বালু উত্তোলনের ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর ব্রিজ ও ভেদরগঞ্জ কলেজঘাট ব্রিজের গোঁড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে ধসে পড়ার হুমকিতে রয়েছে। এছাড়াও নদীতে অবৈধ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের ফলে এসব এলাকায় নদীর পাড়ে অবিস্থিত আবাদি জমি ও ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। এদিকে জেলা শহরসহ উল্লেখিত ৪টি উপজেলার বিভিন্নস্থানে প্রধান প্রধান সড়কের উপর দিয়ে ড্রেজিংয়ের পাইপ বসানোর কারণে রাস্তায় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। তাছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন ঘর-বাড়ির ওপর দিয়ে ড্রেজিংয়ের মোটামোটা পাইপ বসানোর কারণে অনেক সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান মুঠোফোনে বলেন, আমরা মোবাইলকোর্ট দিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা করেছি। এখনও যারা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×