ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বর্তমানে ১৩ লাখ টন, জুনে দাঁড়াবে ১৮ লাখ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বর্তমানে ১৩ লাখ টন, জুনে দাঁড়াবে ১৮ লাখ

তপন বিশ্বাস ॥ নাজুক পরিস্থিতি কাটিয়ে সরকারের খাদ্য মজুদ এখন রেকর্ড পর্যায়ে উন্নীত হতে যাচ্ছে। বর্তমানে এই মজুদ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৩ লাখ মেট্রিক টন। জুনে মোট মজুদ ১৮ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। এর আগে সর্বোচ্চ মজুদ ছিল ২০১৫ সালের অক্টোবরে ১৬ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন। খাদ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে মোট খাদ্য মজুদ রয়েছে সাড়ে ১৩ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল ১০ লাখ মেট্রিক টন। বাকি সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন গম। তিনি বলেন, জুনের মধ্যে চালের মজুদ দাঁড়াবে ১৫ লাখ মেট্রিক টন, যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করবে। গমের মজুদ আর না বাড়লেও এর সঙ্গে যে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন গম রয়েছে, তা নিয়ে মোট মজুদ দাঁড়াবে সাড়ে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। দেশে খাদ্য মজুদে এটি নতুন রেকর্ড গড়বে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার ১২ ফেব্রুয়ারির খাদ্য অধিদফতরের তথ্যমতে দেশে বর্তমানে মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৪২ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল রয়েছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ২৭৪ মেট্রিক টন এবং গম ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৮০৪ মেট্রিক টন। গত ডিসেম্বরে তৎকালীন খাদ্য সচিব মোঃ কায়কোবাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, জানুয়ারিতে মজুদ খাদ্যের পরিমাণ ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে এবং জুনে ১৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে। ইতোমধ্যে মজুদের পরিমাণ সাড়ে ১৩ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। জুনে মজুদ ১৮ লাখ মেট্রিক টনে ছাড়িয়ে যেতে পারে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী সরকারের মজুদ ৮ লাখ মেট্রিক টন থাকতে হবে। এই পরিমাণ খাদ্য মজুদ থাকলে তা সন্তোষজনক বলে ধরা হয়। বর্তমানে মজুদের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। খাদ্য মজুদে নতুন রেকর্ড হবে। তিনি বলেন, আগামী মার্চ থেকে সারাদেশে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী চালু করা হবে। দুই-একদিনের মধ্যে রাজধানীতে ওএমএসের মাধ্যমে চাল বিক্রি শুরু হবে। মার্চ থেকে সারাদেশে ওএমএস কর্মসূচী চলবে। আটার জন্য রাজধানীতে ওএসএস চালু রয়েছে। এবার আমন সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে মোট ৩ লাখ মেট্রিক টন আমন চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী ৩৯ টাকা দরে এ চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে সংগ্রহ অভিযান চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি-২০১৮ পর্যন্ত। এবার প্রতি কেজি আমন চাল উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৩৭ টাকা। গত বছর ৩৩ টাকা দরে ৩ লাখ মে. টন চাল সংগ্রহ করে সরকার। ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে সংগ্রহ অভিযান ১৫ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত চলে। সেবছর প্রতি কেজি চাল উৎপাদনে খরচ হয়েছিল ২৯ টাকা। সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে মোট খাদ্য মজুদের ধারণক্ষমতা রয়েছে প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। সরকারী তথ্যমতে ঢাকার বাজারে খাদ্যশস্যের বর্তমান খুচরা বাজার মূল্য সরু চাল ৫৭ থেকে ৬৮ টাকা। মাঝারি চাল ৪৬ থেকে ৫৬ টাকা। মোটা চাল ৪১ থেকে ৪৩ টাকা। আর খোলা আটার মূল্য ২৬ থেকে ২৮ টাকা। হাওড় এলাকায় আগাম বন্যা আসা, ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে বোরো ফসল ঘাটতি হওয়ায়, চাল আমদানিতে শুল্কারোপ করার সিদ্ধান্তে সরকারে মজুদ প্রায় তলানীতে নেমে আসে। মজুদ কমে যাওয়ায় মেয়াদের শেষ দিকে এই সুযোগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল একটি গোষ্ঠী উঠে পড়ে লাগে। সরকার বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে। চাল আমদানিতে শুল্ক তুলে দেয়ার পাশাপাশি সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির কারণে ক্রমান্বয়ে সরকারের মজুদ বাড়তে থাকে। বর্তমানে এই মজুদ পরিস্থিতির শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে। আগামী জুনে এটি একটি নতুন রেকর্ড় গড়তে যাচ্ছে।
×