ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ময়মনসিংহে নাট্যভূমির ‘রাজাবলি’

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ময়মনসিংহে নাট্যভূমির ‘রাজাবলি’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন দল নিয়মিতভাবে নাট্যচর্চা করে আসছে। ঢাকার বাইরের তেমনি একটি নাট্য সংগঠন ময়মনসিংহের অনসাম্বাল থিয়েটার। নিয়মিত নাট্যচর্চার পাশাপাশি বিভিন্ন দলকে নাট্য আন্দোলনে শরিক করতে প্রথমবারের মতো ২০১৮ সালে বছর ব্যাপী বিশেষ নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছে দলটি। ময়মনসিংহ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এই উৎসবে সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন জেলার একটি করে নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় টঙ্গীর অন্যতম নাট্যদল নাট্যভূমির বর্তমান প্রযোজনা ‘রাজাবলি’ নাটকের প্রদর্শনী হবে। নাট্যভূমির ১৯তম প্রযোজনা রবীন্দ্রনাথ অনুসৃত ও ‘বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার’ শিল্প-নির্দেশনায় রচিত ড. মুকিদ চৌধুরীর ‘রাজাবলি’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন শাহজাহান শোভন। রাজাবলি নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন সিফাত বন্যা, এসএম রায়হান রিপন, মিঠুন খান, মুর্শিকুল আলম, রাজিব চন্দ্রশীল, শাহজাহান শোভন, শারমিন কলি, আখি নূর, শিশির আহমেদ সোহেল, অপু, আবদুল রশিদ, কিরণ ঘোষ, এইচএম রিজভী, মনসুর আহমেদ, প্রতাপ চন্দ্র বর্মণ, ইমরান হোসেন, তাসলিমা আক্তার দৃষ্টি, উজ্জ্বল লস্কর, সামছুল ইসলাম স্বপন প্রমুখ। নাটকে নেপথ্য কর্মীরা হলেন মীর ময়নুল হোসনে শিপলু, জাহাঙ্গীর রনি, আবদে রাব্বি নিঝুম প্রমুখ। ‘রাজাবলি’ ত্রিপুরার রাজপরিবারের ইতিহাস নিয়ে রচিত একটি নাটক। নাটকে প্রেমের অহিংস পূজার সঙ্গে হিংস্র শক্তি পূজার বিরোধিতাই মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। পূজায় নৈবেদ্যর নামে পশুবলির মতো একটি জঘন্য প্রথার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ত্রিপুরার মহারাজা গোবিন্দমাণিক্য মন্দিরের পুরোহিত রঘুপতির ঈর্ষার কারণ হন। ঈর্ষাকাতর রঘুপতি দেবতার তুষ্টির কথা বলে ক্ষেপিয়ে তোলেন প্রজা-ভক্তদের এবং মহারাজাকে বলি বা হত্যা করতে এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। রঘুপতির সব ষড়যন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে গোবিন্দমাণিক্য পশুবলি প্রথা বন্ধ করে অসুর শক্তিকে পরাস্ত করে মানবিক শক্তির উদ্বোধন ঘটান ত্রিপুরায়। এমন ঘটনা নিয়েই নাটক ‘রাজাবলি’। মানুষ তার দুই চোখ দিয়ে সবকিছু দেখতে পায় কিন্তু নিজেকে চেনার জন্য তার প্রয়োজন হয় দর্পণের, যে নিজেকে চিনতে পেরেছে সেই সার্থক, সেই সার্থকতার খোঁজে, ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা বললেই পরিবর্তন হয় না- এর জন্য প্রয়োজন ইতিবাচকভাবে পরিবর্তিত দেহ, মন, আত্মায় একাত্ম হওয়া। তাতেই পাওয়া যায় পূর্ণাঙ্গ জীবন। নানা কাহিনীর ঘাত-প্রতিঘাতের পর এই নাটেকর শেষে দেখা যায় যে অজ্ঞান রাক্ষস পাষাণ রঘুপতির রক্ত গোমতীর জলের মতো সিক্ত করে পবিত্র ত্রিপুরার মৃত্তিকা, জয়ী হয় প্রেমের অহিংস পূজা, স্বতন্ত্র ভাবনা মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি, জয়ী হন গোবিন্দ মাণিক্য। নাটকের গল্প যেমন উত্তেজনাপূর্ণ, তেমনি পোশাক ও অঙ্গসজ্জা একেবারেই এই সময়েরল, সময়োপযোগী সব মিলিয়ে নাটকটি দশকের আশা জাগাবে এই প্রত্যাশা। ‘বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার’ শিল্পধারার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে অঙ্গ ও জীবন সম্পর্ক; অর্থাৎ মানুষের বাস্তব সঙ্গে অঙ্গ-ব্যবহারে নন্দন-সৌন্দর্যের জগৎ সৃষ্টি করা, সঙ্গে থাকা আবশ্যক মানসিক ও কাল্পনিক জগৎটিও; অর্থাৎ হৃদয়, বাসনা, অঙ্গ, অভিজ্ঞতা, কল্পনা, নন্দন, বুদ্ধিপ্রবৃত্তি, রুচি-এসবের সম্মিলিত সমাবেশ। মানুষ খ--অখ-ভাবে নিজের কথা, পরের কথা অপ্রাকৃতিক প্রকৃতির কথা প্রকাশ করে; ঠিক তেমনি, ‘বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার’ খ--অখ- অঙ্কে বিশাল ক্যানভাসে একটি পূর্ণ বা অপূর্ণ জীবনগাঁথা প্রদর্শন করে, তবে নন্দন সৌন্দর্য থাকা একান্ত প্রয়োজন। যেখানে নন্দন-সৌন্দর্যের অভাব, যেখানে রুঢ়তা ও জড়তার অভাব থাকে না; আর তাই, একে যাই বলা হোক না কেন, কোন মতেই ‘বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার’ বলা যায় না। ‘বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার’ শিল্পধারার বাস্তব-সত্য প্রকাশিত হয়; হয় অপরূপ অপূর্ব সৌন্দর্য-নন্দনের উদ্ভব। প্রকাশ পায় মানুষের দ্বন্দ্ব-দ্বেষ, দ্বৈধ-দ্বিধা, প্রাকৃতিক-অপ্রকৃতি, অপ্রাকৃতিক-প্রকৃতি, প্রাণহৃদয়বৃত্তি, আশা-আকাক্সক্ষা, নিরাশা-অনাকাক্সক্ষা, নতুন-পুরাতন জীবনচিত্র। ‘বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার শিল্পধারা থাকা একান্ত আবশ্যক বাঙালীর উপাদান, মৃত্তিকা-পরিবেশ, উপমা-রূপক, কীর্তি-ঐতিহ্য, ভাষা-শব্দ সবই। এই ‘বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার’ শিল্পধারার জনক ড. মুকিদ চৌধুরী।
×