ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইতিহাসে এই প্রথম বিদেশে অনুশীলন

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ইতিহাসে এই প্রথম বিদেশে অনুশীলন

রুমেল খান ॥ স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে এ পর্যন্ত যা হয়নি এবার সেটাই হতে যাচ্ছে। আর সেই ঘটনার পেছনে আছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) প্রচেষ্টা। বিষয়টি খুলেই বলা যাক। অতীতে দেখা গেছে জাতীয় দল গঠন করে তাদের অনুশীলন করানো হয়েছে ঢাকা বা বিকেএসপিতে। এবারও সেটা হবে। কিন্তু তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন আরেকটি দিক, সেটা হলো এই প্রথমবারের মতো লাল-সবুজ বাহিনী নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত অনুশীলন করবে বিদেশের মাটিতে। তাও আবার একাধিক দেশে। বিষয়টিতে নতুনত্ব এখানেই। আগামী ৪-১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ‘সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে’র খেলা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রস্তুতির জন্য আগামী ২৭ মার্চ লাওসে অনুষ্ঠিত ‘ফিফা টায়ার-১ আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচে’র খেলায় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল অংশ নেবে। এ প্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের একটি আবাসিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। খেলোয়াড়রা ওইদিনই ম্যানেজার সত্যজিৎ দাশ রূপুর কাছে রিপোর্ট করে সন্ধ্যার সাভারের জিরানির বিকেএসপির উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে তারা আন্তর্জাতিক হোস্টেলে থেকে অনুশীলন করবেন। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কর্মসূচী অবহিতকরণের লক্ষ্যে মঙ্গলবার বাফুফে ভবনের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বাফুফের সভাপতি কাজী মোঃ সালাহ্উদ্দিন, বাফুফে সহ-সভাপতি ও ন্যাশনাল টিমস্ কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ, বাফুফে সদস্য ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বাবু, বাফুফে সদস্য ও টিম ম্যানেজার সত্যজিৎ দাশ রূপু, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান প্রশিক্ষক এ্যান্ড্রু অর্ড, ফিটনেস কোচ মারিও লেমোস এবং বাফুফের টেকনিক্যাল এ্যান্ড স্ট্রাটেজিক ডিরেক্টর পল স্মলি। সেপ্টেম্বরে সাফকে সামনে রেখেই মূলত বিকেএসপিতে জাতীয় দলের অনুশীলন শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। তার আগে কাতার ও থাইল্যান্ডে অনুশীলন এবং লাওসে ফিফা প্রীতি ম্যাচও খেলবেন মামুনুলরা। স্বপ্নের ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সালাউদ্দিন। সেই স্বপ্ন ব্যর্থ হলেও সেই কাতারেই যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে বিশ্বকাপে খেলতে নয়, পুনঃজীবন পেতে অনুশীলন ক্যাম্পে। তার আগে বিকেএসপিতে দু’সপ্তাহ কঠোর অনুশীলন করবেন মামুনুলরা। ২৮ ফেব্রুয়ারি কাতারে অনুশীলনের জন্য গেলেও দলটি দেশে ফিরবে ১৪ মার্চ। এরপর ১৯ মার্চ থাইল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা হবে জাতীয় ফুটবল দল। সেখানে ২১ ও ২৩ মার্চ স্থানীয় দু’টি ক্লাবের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলবে লাল-সবুজের দল। সেখান থেকেই দু’দিন পর তারা পৌঁছাবে লাওসে স্বাগতিক জাতীয় দলের বিপক্ষে একটি ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলতে। সেখান থেকে আবার ২৭ মার্চ ঢাকায় ফিরবে দলটি। এভাবেই চলবে সাফের প্রস্তুতি। ফেডারেশন কাপ, প্রিমিয়ার লীগ ও স্বাধীনতা কাপে নয় মাস খেলা ফুটবলারদের ক্লান্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সালাউদ্দিনের ভাষ্য, ‘মেসিতো সারা বছরই ফুটবল খেলে। আবার বিশ্বকাপের জন্য আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে যোগ দেয়। কই, তাকে তো এমন ক্লান্তির ছাপ দেখা যায় না। তাহলে আমাদের ফুটবলাররা এত কাহিল হবে কেন?’ কাজী নাবিল বলেন, ‘গত নয় মাস ছেলেরা খেলার মধ্যেই ছিল। তাই তাদের নিয়ে অনুশীলন করতে কোন সমস্যা হবে না অর্ডের।’ পুরনো ও নতুন মিশেলে তৈরি করা হয়েছে জাতীয় ফুটবল দল। তবে সহসাই আবাহনীর সাত ফুটবলারকে পাচ্ছেন না অর্ড। এএফসি কাপের জন্য ওই ফুটবলারদের ছাড়েনি ঢাকা আবাহনী। এ বিষয়ে অর্ডের কথা, ‘আবাহনী এএফসি কাপ খেলবে। তারাও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে। যে কারণে এখন তাদের ফুটবলারদের দলে নেয়া হয়নি। তবে পরবর্তীতে তারা ক্যাম্পে যোগ দেবে।’ দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে আবারও জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের আনাগোনা। মামুনুল ইসলাম, হেমন্ত ভিনসেন্টের মতো পরিচিত মুখের পাশাপাশি মতিন মিয়াদের মতো নতুন মুখও আছে। প্রায় ১৬ মাসের বিরতির পর আবারও জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাম্প শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। কোচ এন্ড্রু অর্ডের তত্ত্বাবধানে জাতীয় দল পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা। যা আগে কখনও পায়নি। নতুন দল নিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করার প্রত্যাশা অর্ডের। আর বাফুফে সভাপতি সরাসরি একটা কথাই বললেন। সুযোগ-সুবিধা যতই দেয়া হোক মাঠে ভাল করতে হলে খেলতে হবে দলের ফুটবলারদেরই। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন জানালেন, ‘এ ধরনের প্রোগ্রাম বাংলাদেশে এবারই প্রথম। এর আগে এদেশে এ ধরনের প্রোগ্রাম হয়নি। আমাদের পক্ষ থেকে জাতীয় দলকে যতটুকু সুযোগ-সুবিধা দেয়া প্রয়োজন আমরা দেয়ার চেষ্টা করেছি। বাকিটা করতে হবে দলের খেলোয়াড়দের। কারণ মাঠে খেলাটা তো আমরা খেলে দিতে পারব না । খেলতে হবে তাদেরই।’ যদিও আগে জাতীয় দলকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও তারা সাফল্য পায়নি। তবে তাই বলে বসে থাকতে চান না বাফুফে বস। নতুন উদ্যমে আবারও চেষ্টা করতে চান। এ প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আগে ভাল রেজাল্ট হয়নি বলে কি চেষ্টা না করে বসে থাকব? আমি তো বলতে পারব না আমরা আগের টিম ভাল করেনি বলে খেলব না!’ দীর্ঘ ১৬ মাসের বিরতি শেষে আবারও জাতীয় দলের ক্যাম্প। দীর্র্ঘ এ বিরতি কী বাফুফের পরিকল্পিত? নাকি বাধ্য হয়েই এতদিন দূরে রাখতে হয়েছে জাতীয় দলকে? উত্তরে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কোন গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট ছিল না। জাতীয় দলের ক্যাম্প হলে লীগ বন্ধ করতে হয়। লীগে যাতে কোন বাধা না পড়ে সে কারণেই দেরিতে ক্যাম্প করা।’ জাতীয় দলের ক্যাম্পে দীর্ঘদিন নিয়মিত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম। কথা হলো তার সঙ্গে। জানালেন, ‘দলে নতুন মুখ যারা এসেছেন তারা ভালমানের। এবারের দলে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। কোচ আমাদের ডেকে জানতে চেয়েছেন কার কি সমস্যা আছে। কারও বিশ্রাম দরকার কিনা। যাদের বিশ্রাম দরকার হবে তাদের বিকেএসপিতে কয়েকদিন বিশ্রাম দেয়া হবে।’ এবারই প্রথম জাতীয় দলে ঠাঁই হয়েছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবে খেলা চমক জাগানো স্ট্রাইকার মতিন মিয়ার। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর সুযোগ পেয়ে অনেক খুশি এই নবাগত স্ট্রাইকার, ‘অল্প সময়ে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া অবশ্যই আমার জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব যাতে কিছু একটা করতে পারি।’ প্রাথমিক দলে ঠাঁই পাওয়া ৩৫ ফুটবলারের ২৬ জন মঙ্গলবারই চলে গেছেন বিকেএসপিতে। বাকি ৯ ফুটবলার চট্টগ্রাম আবাহনীর এবং আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের। সদ্য শেষ হওয়া স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে খেলেছে এই দুই দল। আর তাই দুই দল থেকে ডাক পাওয়া খেলোয়াড়দের কিছুদিনের বিশ্রাম দিয়েছেন কোচ। তারা দলের সঙ্গে যোগ দেবেন আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি।
×