ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একাই এক শ’ এ্যাগুয়েরো...

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

একাই এক শ’ এ্যাগুয়েরো...

টি ইসলাম তারিক ॥ ক্যারিয়ারের তুঙ্গে অবস্থান করছেন সার্জিও এ্যাগুয়েরো। আর্জেন্টাইন এই স্ট্রাইকার ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড গড়েছেন ২০১৭ সালের নবেম্বর মাসে। ধারাবাহিক দুর্দান্ত পারফরমেন্স ধরে রেখেছেন ২৯ বছর বয়সী এই ফুটবলার। সবশেষ ১০ ফেব্রুয়ারি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে এক ম্যাচে একাই চার গোল করে গৌরবময় রেকর্ড গড়েছেন। গত শনিবার রাতে ইপিএল লিচেস্টারের জালে এ্যাগুয়েরো চার চারবার বল পাঠান। তাতেই নিজেদের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে সাবেক চ্যাম্পিয়ন লিচেস্টার সিটিকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে শিরোপার পথে থাকা ম্যানসিটি। ম্যাচের ৭৭ মিনিটে সফরকারী দলের গোলরক্ষকের ভুলে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করে এ্যাগুয়েরো। লিচেস্টারের গোলরক্ষকের দুর্বল শট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তার মাথার ওপর দিয়ে জালে জড়ান দিয়াগো ম্যারাডোনার মেয়ে জামাই। মৌসুমে এটা তার তৃতীয় হ্যাটট্রিক। ম্যাচের শেষ মিনিটে ২০ গজ দূর থেকে জোরালো শটে নিজের চতুর্থ ও দলের পঞ্চম গোল করেন অ্যাগুয়েরো। প্রিমিয়ার লীগে হ্যাটট্রিক সংখ্যায় এখন হ্যারি কেন ও এ্যাগুয়েরো সমান। দুজনই করেছেন ৮টি করে হ্যাটট্রিক। সামনে শুধু রবি ফাউলার (৯) ও এ্যালান শিয়েরার (১১ হ্যাটট্রিক)। তবে এ্যাগুয়েরো একটি জায়গায় ছাপিয়ে গেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের বাকি সবাইকে। প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে এ্যাগুয়েরোই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি এক ম্যাচে ন্যূনতম চার গোল করেছেন তিনবার। ২০১৪ সালে টটেনহ্যামের বিপক্ষে সিটির ৪-১ গোলের জয়ে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার একাই করেছিলেন সবকটি গোল। পরের বছর নিউক্যাসলের বিপক্ষে সিটির ৬-১ ব্যবধানের জয়ে এ্যাগুয়েরো করেছিলেন ৫ গোল। এবার ৪ গোলের দেখা পেয়েছেন লিচেস্টারের বিরুদ্ধে। ২০১১ সালে সিটিতে যোগ দেয়ার পর এবারই প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে টানা সাত ম্যাচে গোল করেছেন অ্যাগুয়েরো। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এবারসহ টানা পঞ্চম মৌসুম ন্যূনতম ২৫টি করে গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। ৩২ ম্যাচে এ পর্যন্ত এ্যাগুয়েরোর গোলসংখ্যা ২৮। এর মধ্যে লীগে করেছেন ২১ গোল, অর্থাৎ কেনের থেকে তিনি পিছিয়ে মাত্র ২ গোলে। অ্যাগুয়েরোর প্রশংসা করে সিটি কোচ পেপ গার্ডিওলা বলেন, অ্যাগুয়েরো ক্লাবের একজন সত্যিকারের কিংবদন্তি। তিনি বিশেষ মেধার অধিকারী। সাবেক বার্সিলোনা কোচ বলেন, ফ্রেব্রুয়ারি মাসেই ৭২ পয়েন্টে পৌঁছে যাওয়া অবশ্যই বিশেষ কিছু। এটি অসাধারণ ব্যাপার। অনুভূতি জানাতে গিয়ে অ্যাগুয়েরো বলেন, শেষ গোলটি ছিল আমার কাছে অসাধারণ। কারণ দীর্ঘদিন পর আমি বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার ওই গোলটি করতে পেরেছি। নিজের এমন ভুরি ভুরি গোলের জন্য আর্জেন্টাইন তারকা সতীর্থ ডি ব্রুইনের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেন। বলেন, সৌভাগ্যবশত কেভিন ডি ব্রুইনে আমাদের জন্য খেলে, গোল করতে সাহায্য করে। আমি খুব খুশি কারণ অধিকাংশ গোলই তার সাহায্যে হয়েছে আর আমার শুধু বলে শট নিতে হয়েছে। সে দারুণ খেলোয়াড় এবং বিশ্বের সবদলই তাকে পেতে চাইবে। সাবেক অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ তারকা আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব খুশি। কারণ গোলগুলো দলের জয়ে সাহায্য করেছে এবং অবশ্যই সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আশাকরি আমরা এভাবে এগিয়ে যেতে পারব। গত বছরের নবেম্বরে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে গোল করে সিটির হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়েন অ্যাগুয়েরো। মজার বিষয়, শ্বশুড় ম্যারাডোনা যে মাঠে খেলে নিজেকে লাইমলাইটে আনেন সেই মাঠ নেপলসের সানপাওলো স্টেডিয়ামেই ইতিহাসের অংশ হন এ্যাগুয়েরো। যে জার্সি পরে এ্যাগুয়েরো এই মাইলফলকে পৌঁছান সেটি তার ৯ বছর বয়সী পুত্র কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনার নাতি বেঞ্জামিনকে উপহার হিসেবে দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন এ্যাগুয়েরো। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই জার্সির্টি আমার সন্তানের জন্য। সে এই জার্সিটি পাবার জন্য আমাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে বলেছে, অতিসত্বর তুমি গোল করতে যাচ্ছ। আমার জন্য জার্সিটি নিয়ে আসবে। তাই আমি এই জার্সিটি আমার ছেলের জন্য নিয়ে যাব। আর্জেন্টিনা থেকে আমার পরিবারও আমাকে ফোন করে বলেছে যে তারা আমার খেলাটি দেখছে। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ম্যারাডোনার কন্যা জিয়ানিনা ম্যারাডোনা অ্যাগুয়েরোর স্ত্রী। তিনি এমন এক মাঠে এই মাইলফলকে পৌঁছেছেন যেখানে শ্বশুর ম্যারাডোনা ১৯৮৪- থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত আইকন হিসেবে ফুটবল খেলেছেন।
×