ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাসন্তী রঙের উৎসব, আজ বইয়ের সঙ্গে ভালবাসা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বাসন্তী রঙের উৎসব, আজ বইয়ের সঙ্গে ভালবাসা

মোরসালিন মিজান ॥ ফুল ফুটুক, না ফুটুক/ আজ বসন্ত...। কোথাও ফুল ফুটেছে। ভরে উঠেছে মনের বাগান। কোথাও মরুদ্যান। ফুল ফুটেনি। বুকে দুঃখের চাষ। দীর্ঘশ্বাস। না পাওয়ার ব্যথা। এর পরও সবার হতে এসেছে বসন্ত। আজি দখিন-দুয়ার খোলা-/এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো...। মঙ্গলবার বিকেলে প্রবেশ দুয়ারগুলো খুলে দেয়ার পরপরই গ্রন্থমেলায় এসেছিল বসন্ত। শুধু আসেনি, উপচে পড়েছিল। আছড়ে পড়েছিল। নতুন বইয়ের পাতা উল্টাতেই যে মৃদু মন্দ হাওয়া, সেই হাওয়ার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল পহেলা ফাল্গুন। বাসন্তী রঙের দোলায় দুলেছে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এভাবে ১৩তম দিনে এসে বদলে গিয়েছিল মেলার চেহারা। সকাল থেকে শাহবাগ-চারুকলা-টিএসসি। বিকেলে গ্রন্থমেলা। পুরনো চিন্তার মানুষেরা, তারুণ্যকে অস্বীকার করে আসা বুড়োরা ফাল্গুনের হাওয়াটিও গায়ে মাখতে পারেনি। কত মানুষ একটু আগেভাগে মেলায় ঢুকার জন্য ছটফট করেছে। সুযোগ করে দিতে পারেনি বাংলা একাডেমি। একাত্ম হতে পারেনি পাঠকের আবেগের সঙ্গে। সাধারণ দিনগুলোর মতোই মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় খুলে দেয়া হয় মেলা। তখনই নামে জনস্রোত। পথ চিনে সামনে এগোতে হয় না। স্রোত ঠেলে নিয়ে যায় প্রিয় গন্তব্যে। প্রাণের মেলায় প্রবেশ করে যে দৃশ্যটি দেখা হয়, বারবার দেখা, এর পরও মন নেচে ওঠে। প্রাণ ভরে যায়। কম বেশি দুঃখ বেদনা তো আছেই। এর পরও কী আশ্চর্য মনটা মরেনি! বাসন্তী রঙে সুন্দর সেজে এসেছিলেন তারা। ছেলেরা পাঞ্জাবি। শাড়িতে কুচি তুলে এসেছিল মেয়েরা। কাঁচা হলুদ রঙের পোশাকে কম সুন্দর বা কম সুন্দরী মনে হয়নি কাউকে। উৎসবপ্রিয় বাঙালীর মনের রংটাই হয়ে ওঠেছিল মুখ্য। সন্ধ্যার আগে আগে অন্যপ্রকাশের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখ ছানাভরা! প্যাভিলিয়নের ভেতরে বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি পরে বসেছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। নতুন ভাঁজ খোলা পাঞ্জাবি। কাঁচা হলুদ রঙে মোটামুটি ধুয়ে মুছে গিয়েছিল ‘মন্ত্রী মিনিস্টার’ ব্যাপারটা। অনুমান করতে কষ্ট হয় না, এটি তাঁর সচেতন প্রয়াস। সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজন ফাল্গুনকে ভালবেসেই সামনে রেখেছিলেন। এভাবে অসাম্প্রদায়িক বাঙালীর উৎসবগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার, এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যেন তাগিদ দেন তিনি। বইয়ের সঙ্গে যুক্ত করেন বসন্তকে। বলেন, বইমেলার সঙ্গে ফাল্গুনের মিলন ঘটল। এটি তো খুবই সুন্দর। আমরা আমাদের ঋতুগুলোকে নানানভাবে উদযাপন করছি। অসাম্প্রদায়িক চেতনার উৎসব ধীরে ধীরে আমাদের নিয়মিত সংস্কৃতি চর্চার অংশ হয়ে উঠছে। চর্চাটা যত বাড়বে ততই অশুভ অসুন্দর পিছু হটবে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। ইট বিছানো পথ দাবি বাকি স্টল মালিকদের ॥ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কয়েকটি পথে ইট বিছানো রয়েছে। এসব পথ ধরে হেঁটে গেলেই হলো, হাতের ডানে বামে পড়বে বইয়ের স্টল। প্যাভিলিয়ন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটি বৈষম্য করা হয়েছে বলে অনেকদিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন কয়েকজন প্রকাশক। জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম জানান, দুই ধারে স্টল আছে এমন ৮টি পথে ইট বিছানো হয়নি। ফলে অনেকেই সেদিকে আর যান না। যাওয়া হয় না। এতে করে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রকাশকরা। এ অবস্থায় সংস্কৃতিমন্ত্রী মেলা পরিদর্শনে গেলে ক্ষতিগ্রস্তরা তার কাছে অভিযোগ জানান। তোফাজ্জল নামের এক প্রকাশক বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গেই ছিলেন মেলার সদস্য সচিব জালাল আহমেদ। বাকি পথগুলোতে দ্রুত ইট বিছানোর ব্যবস্থা করতে তাকে নির্দেশ দেন মন্ত্রী। ১৫০ নতুন বই ॥ মেলার ১৩তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৫০টি। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘নারীর নিরাপদ পরিসর ও পরিবেশ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুশী কবির। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুলতানা কামাল, হোসনে আরা শাহেদ, সুভাষ সিংহ রায় এবং নূরুন্নাহার মুক্তা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়শা খানম।
×