ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আয় ৫২৮৯ কোটি ॥ সরকারের ফোর-জি তরঙ্গ নিলাম

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আয় ৫২৮৯ কোটি ॥ সরকারের ফোর-জি তরঙ্গ নিলাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার ফোর-জি (চতুর্থ প্রজন্মের) তরঙ্গের নিলাম ও তরঙ্গের প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার সুবিধা বিক্রি করে ভ্যাটসহ পাঁচ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা আয় করেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে তরঙ্গ নিলাম করে বিটিআরসি। নিলামে অংশ নেয় বাংলালিংক ও গ্রামীণফোন। এই দুই মোবাইল অপারেটর মোট ৩ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকার ফোর-জি তরঙ্গ বরাদ্দ নিয়েছে। বাকি টাকা এসেছে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার মাধ্যমে। নিলাম অনুষ্ঠান শেষে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাজাহান মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই দিন তরঙ্গ নিলাম করে সরকারের কোষাগারে আমরা সোয়া ৫ হাজার কোটি টাকা জমা করতে সক্ষম হয়েছি। তরঙ্গ নিলামে পেয়েছি ৩ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। টু-জি ও থ্রি-জি সেবার জন্য বরাদ্দ করা তরঙ্গে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার মাধ্যমে (যাতে ওই তরঙ্গ যে কোন প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা যায়) গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবির কাছ থেকে সরকার পেয়েছে এক হাজার ৪৪৫ দশমিক শূন্য ৮ কোটি টাকা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের ৪টি মোবাইল অপারেটর ফোর-জি তরঙ্গ নিলামে অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিলামে অংশ নিয়েছে বাংলালিংক ও গ্রামীণফোন। দ্বিতীয় বৃহত্তম অপারেটর রবি তাদের হাতে থাকা তরঙ্গ প্রযুক্তি নিরপেক্ষতায় রূপান্তর করে ফোর-জি সেবা দেবে। এমন একটি পরিকল্পনা কথা জানানো হয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটিসেল নিলামে অংশ না নেয়ায় তাদের পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভবনা নেই। তারা যদি নিলামে অংশ নিত তাহলে মোবাইল সেবা দেয়ার একটা সুযোগ ছিল। এ দিকে, প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার সুবিধা পেতে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ পাবে অপারেটররা। টেলিটক ফোর-জি সেবায় আসতে চাইলে ওই সময়ের মধ্যে তাদের প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার সুবিধা নিতে হবে। চারটি ব্লকে এক হাজার ৮০০ মেগাহার্টজে (প্রথম ব্লক- ৫ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ, দ্বিতীয় ব্লকে ৫ মেগাহার্টজ করে দুটি এবং দুই দশমিক ৪ মেগাহার্টজ আরেকটি ব্লক) ও ২১০০ মেগাহার্টজের ৫টি ব্লকে (প্রতি ব্লকে ৫ মেগাহার্টজ করে) নিলাম হয়েছে। গ্রামীণফোন ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড তরঙ্গ কিনেছে। বাংলালিংক কিনেছে ২১০০ মেগাহার্টজ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গ। বাংলালিংক এক হাজার ১১৯ কোটি টাকায় ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড ও এক হাজার ৪৩৯ কোটি টাকায় ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের মোট ১০ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে। গ্রামীণফোন ১ হাজার ২৮৪ কোটি টাকায় কিনেছে ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ফোর-জি লাইসেন্স ও তরঙ্গ ব্যবহারের অনুমতিপত্র অপারেটরগুলোর কাছে হস্তান্তর করা হবে। অপরেটররা ইচ্ছে করলে মহান ২১ ফেব্রুয়ারি থেকেই ফোর-জি চালু করতে পারেন। তরঙ্গ নিলাম অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার উপস্থিত। নিলাম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিটিআরসি স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ। বাংলালিংকের সিইও এরিক অস ও গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি আলাদা দু’টি টেবিলে বসে নিলাম ডাকে অংশ নেন। পরে নিলাম অনুষ্ঠানে শেষে বাংলালিংকের সিইও এরিক অস সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গ্রাহকদের ভাল মানের সেবা দিতেই তারা বিপুল পরিমাণ তরঙ্গ কিনেছেন। গ্রাহকদের চাহিদা মতো তারা ফোর-জি সেবা দিতে পারবেন। অন্যদিকে বিকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। এখানে গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি বলেন, আমাদের প্রযুক্তি নিরপেক্ষে স্পেক্ট্রামের সঙ্গে নতুন এই স্পেক্ট্রাম যোগ হওয়ায় গ্রামীণফোন দেশের সবচেয়ে আধুনিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেরা ফোর-জি সেবা দিতে দৃঢ় অবস্থানে পৌঁছে গেল। ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড ফোর-জি, এলটিই বিস্তারে সবচেয়ে কার্যকরী স্পেক্ট্রাম। গ্রামীণফোনের নতুন ক্রয় তার শীর্ষস্থানকে আরও জোরদার করেছে। এর আগে প্রতিষ্ঠানটি তার সম্পূর্ণ টু-জি স্পেক্ট্রামের জন্য টু-জি প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা চেয়ে আবেদন করলে বিটিআরসি তা অনুমোদন করেছে। ইতোমধ্যে গ্রামীণফোন তার নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন করেছে, ফলে গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্ন এইচডি ভিডিও ও লাইভ টিভি স্ট্রিমিং, ঝকঝকে ভিডিও কল এবং দ্রুতগতির ডাউনলোড করতে পারবেন গ্রামীণফোনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেটওয়ার্কে। গ্রামীণফোনের আধুনিক নেটওয়ার্ক উপভোগ করার জন্য গ্রাহকদের তাদের থ্রি-জি সিম পরিবর্তন করে ফোর-জি সক্ষম সিম গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
×