ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একাধিক স্মারক ও চুক্তি সই হবে

সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। এলক্ষ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে দেশটির উদ্যোক্তাদের ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করতে চায় সরকার। একই সঙ্গে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়ার ব্যাপারেও সরকারের আগ্রহ রয়েছে। শীঘ্রই সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সিঙ্গাপুর সফর করেছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এ সফর দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জানা গেছে, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সিঙ্গাপুর থেকে ২ হাজার ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা আমদানি করা হয়েছে। বিপরীতে ওই সময়ে রফতানি হয়েছে মাত্র ৩৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। যদিও জনশক্তি রফতানি ও রেমিটেন্স আহরণে সিঙ্গাপুর দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিবছর দেশটিতে জনশক্তি রফতানি বাড়ছে। সম্প্রতি দেশটির বিনিয়োগকারীরা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সেবাখাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের এই বিনিয়োগ আনতেই এখন সরকারের যত চেষ্টা। ইতোমধ্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সিঙ্গাপুরের উদ্যোক্তাদের এফডিআই (ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্ট) বাড়ানোর অনুরোধ করেছে। এক্ষেত্রে সংস্থাটির পক্ষ থেকে ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে। দেশটির সঙ্গে বিনিয়োগ, আমদানি-রফতানি বৃদ্ধিতে করুনীয় নির্ধারণে এফবিসিসিআই এবং সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের (এসবিএফ) যৌথ উদ্যোগে ইতোমধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও সভা হয়েছে। এছাড়া সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে দেশটি সফরে রয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ইতোমধ্যে তিনি সিঙ্গাপুরের উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এছাড়া বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুর একটি এমওইউ স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সরকার ঘোষিত স্পেশাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি জানান, সরকার বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিনিয়োগে উদারনীতি গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনে বিনিয়োগকৃত অর্থ সম্পূর্ণ ফেরত নেয়া যাবে, এ বিষয়ে আইন দ্বারা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। তাই সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বেশি লাভবান হবেন। সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীরা চাইলে এক বা একাধিক ইকোনমিক জোন বরাদ্দ দেয়া হবে। কারণ সরকার ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টকে (এফডিআই) বিশেষ গুরুত্ব ও সহযোগিতা দিচ্ছে। এদিকে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়িক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ, সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা ও সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ অনেক পণ্য সিঙ্গাপুরে রফতানি করে। বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী সিঙ্গাপুরে কাজ করছে। সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্য রফতানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি, পর্যটন, সেবাখাত ও বিদ্যুত খাতে সিঙ্গাপুরের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশটির উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী জনকণ্ঠকে বলেন, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে এদেশের পর্যটন, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো এবং সেবাখাতে তাদের বিনিয়োগ প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশটির উদ্যোক্তারা একক অথবা যৌথ বিনিয়োগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে ইতোমধ্যে ওয়ানস্টপ সার্ভিসের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এছাড়া বেসরকারী খাতের কোন সহযোগিতা প্রয়োজন হলে সেটাও উদ্যোক্তারা নিতে পারবেন। তিনি বলেন, দেশে সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়ছে। বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে। সিঙ্গাপুরের উদ্যোক্তারা এ সুযোগ গ্রহণ করে লাভবান হতে পারেন। এছাড়া পণ্য রফতানিতে সিঙ্গাপুর কোটা ও শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলে বাণিজ্য বৈষম্য কমে আসবে। এটাও সরকারের আলোচনায় থাকা উচিত বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। এদিকে আঙ্কটাডের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে এফডিআই আকর্ষণে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজেড) কথা উল্লেখ করা হয়। এসইজেডে বিনিয়োগে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আরোপ নেই। এছাড়া বিনিয়োগে সরাসরি উন্নয়ন এবং নির্মাণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আমদানিকে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছে। বিদেশী উদ্যোক্তারা এই সুযোগ নিতে পারছেন। বাংলাদেশে এখন পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে। বিশে^র মধ্যে উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ। এছাড়া অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার বিদেশী অর্থায়ন আনতেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ভারত, চীন, জাপান, রাশিয়া ও সৌদি আরবের মতো সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ।
×