ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাপাসিয়ায় সড়কসহ ভূমিধস ॥ যোগাযোগ বন্ধ

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কাপাসিয়ায় সড়কসহ ভূমিধস ॥ যোগাযোগ বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ কাপাসিয়ায় সোমবার শীতলক্ষ্যা নদীর পার্শ্ববর্তী কাপাসিয়া-শ্রীপুর আঞ্চলিক সড়কের দস্যু নারায়ণপুরে সড়ক ও সড়কের পাশের কলাবাগানসহ প্রায় দুই হাজার বর্গফুট জমি সমতল থেকে প্রায় ১০ ফুট দেবে গেছে। এতে কাপাসিয়া ও শ্রীপুরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। একই এলাকায় একাধিকবার ভূমি দেবে যাওয়ার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ভূমি ধসের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানায়, কাপাসিয়া উপজেলার দস্যু নারায়ণপুর এলাকার প্রায় সবাই সোমবার ভোর রাতে ঘুমিয়েছিল। ভোর ৫টার দিকে হঠাৎ গাছপালার মড় মড় ও শোঁ শোঁ শব্দে তারা জেগে উঠেন। পরে বাড়ির বাইরে বের হয়ে তারা ভূমি ধসের ঘটনার ভয়াবহতা দেখতে পান। এ সময় ওই এলাকার দস্যু নারায়ণপুর বাজারের পূর্বপাশে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়সহ দক্ষিণ তীরের প্রায় ৬শ’ ফুট দীর্ঘ এবং ৩শ’ ফুট প্রশস্ত এলাকা জুড়ে ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এতে ১৬ ফুট প্রস্থের প্রায় ৬শ’ ফুট দীর্ঘ কাপাসিয়া-শ্রীপুর আঞ্চলিক সড়ক, গাছপালা এবং সড়কের পাশের কলা ও ফলবাগানসহ জমি সমতল থেকে প্রায় ১০ ফুট গভীরে দেবে গেছে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ভূমি দেবে যাওয়া অংশের দক্ষিণ পাশে অন্ততঃ ১৫টি বাড়ি এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ওই এলাকায় এ পর্যন্ত চার বার ভূমিধসের (দেবে যাওয়ার) ঘটনা ঘটেছে। পর পর চারবার ভূমিধসের কারণে ওই এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে আবাসিক এলাকার দিকে ঢুকে পড়েছে। সোমবারের এ ঘটনার পর থেকে কাপাসিয়া-শ্রীপুর সড়কে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ২০০৩ সালে ভূমিধসের পর জাইকা প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় ঘরবাড়ি ও সড়ক রক্ষায় শক্তিশালী বাঁধ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক (অবসরপ্রাপ্ত) সাধন দাস জানান, সোমবারের ভূমিধসের ঘটনা নিয়ে এখানে চারবার ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একই এলাকায় অনুরূপ ভূমি দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ মাটি ভরাট করে সড়কটি মেরামত করে। স্থানীয়রাও মাটি ভরাট করে তাদের কিছু জমি উঁচু করেছিল। ২০১৪ সালেও ওই এলাকায় অনুরূপ ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ সোমবার চতুর্থবারের মতো আবারও একই এলাকায় ভূমি দেবে যাওয়ার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এর আগে ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই এলাকায় প্রথমবারের মতো ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা আরও জানান, অপরিকল্পিতভাবে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে একাধিকবার ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ভূমিধসের খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমিসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে সিমিন হোসেন রিমি এমপি ওই সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত এ অংশে পাইলিংসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাকছুদুল ইসলাম জানান, কাপাসিয়া-শ্রীপুর সড়কের কিছু অংশ এলাকা দেবে গেছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সড়ক চলাচল স্বাভাবিক করতে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে কাপাসিয়া-শ্রীপুর সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে।
×