ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে

বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল স্বর্ণযুগে

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল স্বর্ণযুগে

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল থেকে ॥ উন্নয়নে আঞ্চলিক বৈষম্য বলে দীর্ঘদিন প্রচলিত ছিল বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে। কিন্তু বিগত নয় বছরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে ‘আঞ্চলিক বৈষম্য’ অপবাদটি লাঘব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অতি দ্রুত দক্ষিণাঞ্চল আজ উন্নয়নের স্বর্ণশিখরে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করেছেন। নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দর আজ দৃশ্যমান। শিল্পোদ্যোক্তা ও বিদেশীরা পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দরকে ঘিরে ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে কল-কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। শীঘ্রই গোটা দক্ষিণাঞ্চল অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম স্তম্ভে পরিণত হবে। উন্নয়নের সেই ধারাবাহিকতায় দেশের ৩১তম ‘শেখ হাসিনা সেনানিবাস’র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী জেলার লেবুখালীতে সেনানিবাসের উদ্বোধন করা হয়। এটি দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপত্তার নয়া দিগন্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে। প্রধানমন্ত্রী নতুন সেনানিবাসের উদ্বোধনের পাশাপাশি মাল্টিপারপাস হল, এসএম ব্যারাক, অফিস ভবনসহ ১৫টি স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ওইদিন বিকেলে বরিশালের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী ৪১টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ৩৩টি ভিত্তিফলক উন্মোচন করেছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পর্যায়ক্রমে দক্ষিণাঞ্চলের সকল উন্নয়নমূলক কাজ তার সরকার বাস্তবায়ন করে দেবেন। সেনাবাহিনীর নয়টি ডিভিশনের আওতায় দেশে ৩০টি সেনানিবাস থাকলেও এতদিন দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় কোন সেনানিবাস ছিল না। দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলায় বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে ২০০ কিলোমিটার দূরের যশোর সেনানিবাসের সহায়তা নিতে হতো। সেই বাস্তবতায় জাতীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তাসহ দক্ষিণ উপকূলের ছয় জেলার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার অংশে দেড় হাজার একর ভূমিতে সূচনা হয় ১৭ হাজার জনবলের নবনির্মিত ‘শেখ হাসিনা সেনানিবাস’। এছাড়া পটুয়াখালীর পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের কাজও চলছে পায়রায়। দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। একই সঙ্গে বিমানবন্দর নির্মাণেরও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে সরকারের নেয়া এসব মেগা প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘শেখ হাসিনা সেনানিবাস’টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক জেলার মুলাদী উপজেলার কৃতী সন্তান মোঃ মিজানুর রহমান জানান, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে সারাদেশেই দীর্ঘমেয়াদী অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি ছিল। ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে আসে ব্যাপক সাফল্য। বরিশাল-৩ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মিজানুর রহমান আরও জানান, এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এতে শেখ হাসিনার প্রতি দেশের আপামর মানুষেরও আস্থা বেড়ে যায়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার বলেন, স্বল্পোন্নত একটি দেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের নেপথ্য কারিগর শেখ হাসিনা। এই মুহূর্তে তার ওপরই দেশের সিংহভাগ মানুষের আস্থা। পদ্মা সেতুর মতো বিশাল প্রকল্প একসময় ছিল স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণের দ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘রেল যাবে বরিশাল’ দক্ষিণাঞ্চলবাসীকে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সে অনুযায়ী পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ভাঙা হয়ে বরিশাল থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের প্রাথমিক কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বলরাম পোদ্দার আরও বলেন, ভাল কাজের মূল্যায়ন সব দেশেই হয়। দেশের উন্নয়নে কাজ করলে অবশ্যই জনসমর্থন পাওয়া যায়। শেখ হাসিনা সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছেন। আগামী দিনে পদ্মা সেতু, পায়রা সমুদ্রবন্দর, শেখ হাসিনা সেনানিবাস দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের মূল সোপান হিসেবে চিহ্নিত হবে তাতে সন্দেহ নেই। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছেন। তাই দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে পদ্মা সেতু, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রেললাইন, কলাপাড়া আন্দারমানিক নদীর তীরে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্র, দশমিনায় এশিয়ার বৃহত্তম বীজবর্ধন খামারসহ অনেক কিছু দিয়েছেন। বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভোলা থেকে সরাসরি বরিশালে শিল্পায়নে গ্যাস সরবরাহ, ফরিদপুর থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত, বরিশাল দিনারেরপুল-লক্ষ্মীপাশা-দুমকী জেলা মহাসড়কের ১৪তম কিলোমিটারে রাঙ্গামাটি নদীর ওপর গোমা সেতু নির্মাণ, বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন, শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজকে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন, বরিশাল বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিকে উন্নিত, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদকে স্বতন্ত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, বরিশাল থেকে দ্বীপ জেলা ভোলার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগের জন্য সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভোলাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুতের আর কোন সমস্যা থাকবে না। ভোলায় ইতোমধ্যে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন গ্যাস পাওয়া গেছে। আরও তিনটি কূপ খনন হলে দুই ট্রিলিয়ন গ্যাস পাওয়া যাবে। ফলে গ্যাসভিত্তিক শিল্প ও কল-কারখানা গড়ে উঠলে দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা হবে দেশের মধ্যে উন্নত একটি জেলা। এখানকার উৎপাদিত পণ্য ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সেতুটি হলে পদ্মা সেতু দিয়ে মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় ভোলা থেকে ঢাকা যাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে ভোলাকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখানে শিল্পায়নের জন্য অনেক বড় বড় উদ্যোক্তা জমি ক্রয়ের চেষ্টা করছেন।
×