ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেমন আছে সাগর-রুনীর একমাত্র সন্তান মেঘ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কেমন আছে সাগর-রুনীর একমাত্র সন্তান মেঘ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে দেখতে বেড়ে উঠছে নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর একমাত্র ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। এ জন্য স্কুলের পাঠের ফাঁকে মেতে ওঠে ক্রিকেটে। স্কুল আর প্রিয় ক্রিকেট নিয়ে সময় কাটে তার। পিতা-মাতার কথা মনে পড়ে। তবে ভালভাবে স্মরণ করতে পারে না সেদিনের স্মৃতি। আস্তে আস্তে ঘটনার স্মৃতি মন থেকে মুঁছে যাচ্ছে। হাজার মনে করলেও যেহেতু পিতা-মাতাকে ফেরত পাওয়া যাবে না, এ জন্য মেঘ আর সেসব স্মৃতি মনে করতে চায় না। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের রশিদ লজের বাড়ির চতুর্থ তলার ভাড়া ফ্ল্যাটে নির্মমভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনী। তাদের একমাত্র সন্তান মেঘ ঘটনার সময় বাসায় ছিল। সে ফোন করে নানার বাসায় খবর দেয়। পরে লাশ উদ্ধার হয়। রুনীর ভাই নওশের আলম রোমানের দায়ের করা মামলাটির তদন্ত করছে র‌্যাব। র‌্যাব জানিয়েছে, হত্যাকা-ের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৪৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পৃথক পৃথক তদন্ত হচ্ছে। হত্যাকা-ের রহস্য উৎঘাটন হবে বলে তারা আশাবাদী। ঘটনার পর থেকেই মেঘ তার নানির ইন্দিরা রোডের বাসায় বসবাস করছে। ঘটনার ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। মেঘের বয়স এখন এগারো বছর। মেঘের কথা পরিষ্কার, সে যেহেতু আর পিতামাতাকে ফেরত পাবে না, এ জন্য আর এ বিষয়ে সে কথা বলতে নারাজ। বলতে গেলে তার খারাপ লাগে। ঘটনার সময়কার স্মৃতিও তার কাছে আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে আসছে। অনেক কিছুই সে ভালভাবে মনে করতে পারে না। সে এখন স্কুল আর ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত। বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে মেঘ। বলছে, এ জন্য ভর্তি হয়েছে ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড ক্রিকেট একাডেমিতে। শুক্রবার শনিবার দুইদিন নিয়ম করে অনুশীলনে ব্যস্ত থাকে। পড়াশোনা করছে গুলশান-২ এ অবস্থিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল (বিআইটি) স্কুলে। সেখানে সে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। রবি থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর সোয়া দুইটা পর্যন্ত স্কুলে থাকতে হয়। মেঘ বলেছে, ক্রিকেট খেলতে তার খুবই ভাল লাগে। তার ফিজিক্যাল ফিটনেস (শারিরীক সক্ষমতা) খুবই ভাল। গতির বল করি। ক্রিকেটের সব সামগ্রীর তার আছে। মেঘের মামা রোমান বলছিলেন, বিকেএসপিতে ভর্তি হতে চায় মেঘ। সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। নিয়মিত লেখাপড়ার প্রতি আমরা বেশি মনোযোগ দিয়েছি। তবে মেঘের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া হবে। মেঘ ক্রিকেটার হতে চায়। নিয়মিত খাবার খায়। তবে বিশেষ কোন খাবারের প্রতি মেঘের দুর্বলতা নেই। চকোলেট ও আইসক্রিমের প্রতি কিছুটা আসক্তি রয়েছে তার। তিনি আরও বলছিলেন, শুধু সাংবাদিক বা অন্যান্য মানুষ নয়, মেঘ তার পিতামাতার বিষয়ে কথাবার্তা বলতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অস্বস্তি বোধ করে। এ নিয়ে তাকে সাধারণত কোন সময় বিরক্ত করে না পরিবারের কেউ। এমনকি মেঘের সামনে এ বিষয় নিয়ে পরিবারের কেউ সাধারণত আলাপও তুলেন না। আমরা বিষয়টি ভুলে যেতে চাই। মেঘও বিষয়টি ভুলে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করুক, এটাই চাই আমরা। এছাড়া আর কোন উপায় নেই। এ নিয়ে আলাপ আলোচনা করলে অহেতুক শিশু মনে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। পরিবারের সদস্যরা হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় চরম হতাশা প্রকাশ করেন।
×