ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দিনে দু’শ’ যাত্রীর ফ্লাইট মিস ॥ শাহজালালের গোলচক্করে যানজট

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দিনে দু’শ’ যাত্রীর ফ্লাইট মিস ॥ শাহজালালের গোলচক্করে যানজট

আজাদ সুলায়মান ॥ ভদ্র লোক মি. স্মিথ, কানাডার নাগরিক। পেশায় অধ্যাপক। সম্প্রতি ঢাকায় এসে যানজটের শিকার হয়ে ফ্লাইট মিস করেন। এখন তিনি কানাডার আইন কানুন দেখিয়ে যেভাবে ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন, এয়ারপোর্টের আইন-কানুন সম্পর্কে প্রতিদিন যে ছবক দিচ্ছেন, তাতে শাহজালাল বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট চরম বিপাকে। কোর্ট না পারছে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে- না পারছে তা অস্বীকার করতে। বিপাকে পড়ে মি. স্মিথের ফোনের জ্বালায় শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফের ঘুম হারাম। তার অবস্থা- ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। শুধু যে স্মিথ একাই একটি ফ্লাইট মিস করছেন তা নয়। তার মতো এমন কমপক্ষে দুই শতাধিক যাত্রী প্রতিদিন হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট মিসের শিকার হচ্ছেন। শুধু বিমানবন্দর গোলচক্করের যানজটের দরুন এমনটি ঘটছে। এ বিষয়ে বার বার ঢাকা মহানগর পুলিশের সঙ্গে দেন দরবার করেও কোন ফায়দা হচ্ছে না। সিভিল এভিয়েশানের যৌক্তিক মতামতকে ট্রাফিক পুলিশ আমলেই নিচ্ছে না। অথচ ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি সিদ্ধান্তেই সমস্যার সমাধান করা যায়। শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজী ইকবাল বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন, শুধু গোলচক্করের ট্রাফিক পুলিশ যদি উত্তর-দক্ষিণে যাতায়াতকারী যানবাহনগুলো প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর সিগন্যাল দিয়ে থামিয়ে দু মিনিটের জন্য এয়ারপোর্ট টার্মিনাল থেকে বের হওয়া গাড়িগুলোকে রাস্তা ক্রস করার সুযোগ দেয়- তাহলেই যানজট অনেকটাই নিরসন হয়। কিন্তু এখন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে। হাইওয়ের দোহাই দিয়ে ট্রাফিক পুলিশ উত্তর-দক্ষিণে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে থামানো হয় টানা ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে টার্মিনালের ভিআইপি গেট থেকে কিংবা ক্যানপি থেকে বিদেশ ফেরত যাত্রীরা শুরুতেই আটকা পড়ছেন। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়েই তাদেরকে যানজটের মধ্যে গাড়িতে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দুটো সিগন্যাল মিস করলেই কমপক্ষে আধাঘণ্টা নষ্ট হয়। জানা যায়, শুধু গোলচক্করের যানজটের দরুন দৈনিক কমপক্ষে ২ শ’ যাত্রী ফ্লাইট মিসের ঘটনায় দেশ-বিদেশে তোলপাড় হলেও পুলিশের টনক নড়ছে না। এ সঙ্কট কিভাবে সমাধান করা যায় সে কৌশল ও কার্যকর পদক্ষেপ নিবে দূরের কথা ওই অঞ্চলের পুলিশের ডিসি প্রবীর কুমার যানজটের বিষয়টি স্বীকারই করতে চান না। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন-কোথায় দেখলেন যানজট। আমি তো কোন যানজট দেখি না। পুলিশের চোখে না পড়লেও প্রতিদিন দেশ-বিদেশী শত শত যাত্রী যানজটের শিকার হয়ে চরম ক্ষতির সন্মুখীন হচ্ছেন। শাহজালাল বিমানবন্দরের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিনই ফ্লাইট মিসের অভিযোগ আসছে। যাত্রীরা কে কিভাবে যানজটের শিকার হয় তার কয়েকটি লিখিত অভিযোগও রয়েছে। যারা দেশীয় যাত্রী তারা ফ্লাইট মিসের জন্য কাউন্টারের কিছ্ক্ষুণ চিৎকার চেঁচামেচি করেন। কেউ ভাগ্যকে দায়ী করে কপাল চাপড়ায়, কেউ নিজের ভাগ্যকে দোষে। কিন্তু কানাডার নাগরিক যারা সেদেশের যানজট পুলিশ ও আইনশৃৃঙ্খলার বাস্তবতায় শাহজালালে এসে যখন যানজটের শিকার হয়ে ফ্লাইট মিস করেন- তখন তিনি আর এটা ছেড়ে দিতে রাজী নয়। স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে চান না। কানাডার মতোই তিনি ক্ষতিপূরণ চেয়ে বসেন। স্মিথও নাসরীনের ঘটনা দুটো ব্যাখ্যা করে গোটা বিমানবন্দরের চিত্র তুলে ধরেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, মাসখানেক আগের ঘটনা। কানাডার নাগরিক হোটেল রিজেন্সিতে রাত পৌনে নয়টায় ইতিহাদের ফ্লাইট ধরার প্রয়োজনীয় সময় নিয়েই এয়ারপোর্টের দিকে রওনা হন। প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যেই তিনি গোলচক্করের কাছে আটকা পড়েন। এই যে বসে রইলেন-তিনি আর একইঞ্চিও সামনে এগুতে পারেননি। যখন তিনি চেক-ইন কাউন্টারের পৌঁছলেন ততক্ষণে সব ক্লোজড। এতে ক্ষুব্দ হয়ে দৌড়ে আসেন আমার অফিসে। তার বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে আমি তাকে শান্ত করার জন্য প্রথমে চা, পরে কপি, প্রাণের চানাচুর, বিস্কুট ও সবশেষে আরসের নুলডস এনে খাইতে দেই। ভাবলাম ভোজনে দেবতা তুষ্ট- এবার হয়ত তিনি চলে যাবেন। কিন্তু না তিনি উল্টো ক্ষতিপূরণ চেয়ে বসেন-ডলারে। এই ফ্লাইট মিস করায় কত ডলার তার ক্ষতি হয়েছে- তারও ব্যাখ্যা দিলেন। সেই রাতে উনাকে বুঝালাম, যানজটের জন্য এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই দায়ী নয়। আপনি পুলিশে যোগাযোগ করুন। তিনি কনভিন্সড হয়ে চলে গেলেন। কিন্তু দুদিন পর গভীর রাতে তিনি কানাডা থেকে আবারও ফোন করে জানতে চান, তার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে। আমি প্রথম প্রথম এটা সেটা বলে পার ফোন রেখে দিতাম। কিন্তু তিনি তাতে দমার মতো নন। এখনও ফোন করেন একই আব্দার নিয়ে । এই ফোনের জ্বালায় এখন কানাডা কোড নম্বরের সব ফোন ধরাই ছেড়ে দিয়েছি। অপর ভুক্তভোগী নাসরীনের অভিযোগ আরও মারাত্মক। কানাডা প্রবাসী এই বাংলাদেশী নারী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পরিবারের তিন সদস্যকে নিয়ে একটি প্রাইভেট কারে শাহজালালের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তারও ফ্লাইট ছিল রাত পৌনে নয়টায় ইতিহাদের। যথা সময়ে তিনি বিমানবন্দরের গোলচক্করের কাছাকাছি এসেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। উত্তরা থেকে গোলচক্কর এসে তিনি সোজা পশ্চিম দিকে যেতে উদ্যত হন। তখন দেখেন সামনে ব্যারিকেড যা আগের দিনেও খোলা ছিল। কেন এটা বন্ধ করা হলো এই নিয়ে তিনি কর্তব্যরত ট্রাাফিক কনস্টেবলের কাছে জানতে চান। তাকে বলা হয়-এটা উপরের নির্দেশ। আপনাকে খিলক্ষেত ওভার দিয়ে ঘুরে আসতে হবে। নাসরীন যুক্তি দেখান এতটা পথ ঘুরে এলে ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে। তখন কনস্টেবলের কড়া জবাব, তাহলে গাড়ি ছেড়ে হেটে যান। নাসরীন সেটা করতেও রাজী ছিলেন কিন্তু সঙ্গে ৬টা লাগেজ। এতগুলো লাগেজ হাতে নিয়ে গোলচক্কর থেকে টার্মিনালে যাওয়া কি আদৌ সম্ভব? এত অনুনয় বিনয় করার পরও তাকে এই পয়েন্ট দিয়ে যেতে দেয়নি পুলিশ। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তিনি গাড়ি নিয়ে কুড়িল বিশ্বরোডের ফ্লাইওভার ঘুরে ৪০ মিনিট পর যখন টার্মিনালে পৌঁছলেন ততক্ষণে চেক-ইন কাউন্টার ক্লোজড। এ নিয়ে তিনি হৈচৈ করেন। তিনিও ছুটে যান ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে, সেখান থেকে শাহজালালের পরিচালকের দ্বারে। পুলিশের বাড়াবাড়ি আর যানজটের দরুন ফ্লাইট মিস করায় তিনি যে ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছেন সেটার দাবি জানিয়েছেন আবেদন করেন তৎকালীন বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের কাছে। মন্ত্রী পরিচালক শাহাজালাল গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজী ইকবাল করিমের কাছে রেফার করে আবেদনটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার নির্দেশ দেন। তারপর থেকে নাসরীন এখনও আশায় আছেন ক্ষতিপূরণ লাভে। তিনিও ফোন করেন পরিচালককে প্রায়ই। এতটা পথ পাড়ি দিয়ে শুধু গোলচক্কর এসে ফ্লাইট মিসের এমন ভুক্তভোগীর শিকার শত শত। আবার আধা ঘণ্টায় কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে দুই ঘণ্টাতেও টার্মিনাল থেকে বেরিয় গোলচক্কর ক্রস করতে না পারার অভিযোগও ততোধিক। দেশের বিশিষ্ট এভিয়েশান বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী রববার রাত পৌনে নয়টায় কলকাতা থেকে ঢাকায় আসার পর এয়ারপোর্ট বের হয়েই আটকা পড়েন যানজটে। ভিআইপি গেট থেকে গোলচক্কর পেরুতেই দুই ঘণ্টা শেষ। বসে দেখলেন কিভাবে নিশ্চল গাড়ি সামনে পেছনে বায়ে ডানে। প্রতি বিশ মিনিট পর দুচারটা গাড়ি সামনে এগিয়ে গেছে সিগন্যাল ফেলার পর। বিক্ষুব্দ চিত্তে আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, এই যানজট কৃত্রিম। পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলেই গোলচক্করের যানজট অর্ধেকে কমিয়ে আনা সম্ভব। পুলিশ যদি প্রতি ৫ মিনিট পর ১ মিনিটের জন্য টার্মিনাল থেকে বের হয়ে আসা গাড়িগুলো গোলচক্কর পার হওয়ার সিগন্যাল দেয় তাহলেই এই জটিলতা এড়ানো যায় । এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ প্রতি সকাল সন্ধ্যায় বিমানবন্দরের উড়োজাহাজ ওঠানামার পিকআওয়ারে গোলচক্কর অচল হয়ে যায়। ট্রাফিক পুলিশ উত্তর দক্ষিণের গাড়িগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সিগন্যাল দেয়। তাদের কাছে শাহজালাল বিমানবন্দরের দেশী-বিদেশী যাত্রীদের কোন গুরুত্বই নেই। অভিযোগ রয়েছে টাকার বিনিময়ে আন্তঃজেলা বাস মিনিবাসকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এমনকি সম্প্রতি উত্তরা থেকে আসা ঢাকামুখী বাস গুলোকে পূর্ব পাশের বাইপাস দিয়ে চলার নির্দেশ জারি করা হলেও সেটাও বাস্তবায়ন করতে পারছে না। পুিলশের সামনে দিয়েই মাঝের মূল সড়কেই বাস চলাচল করতে দেয়া হয়। এই রাস্তাটা বিমানবন্দরমুখী যাত্রীদের যানবাহনের জন্য প্রাাধান্য দেয়ার নির্দেশও অমান্য করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, গোলচক্করের ভয়াবহতা যানজটের মূল কারণ পুলিশের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, বিমানবন্দরের প্রবেশ ও বের হওয়ার মুখেই অবাধে বাস মিনিবাসের পার্কিং করার জন্য এই জটলাকে আরও ভয়াবহ করে তুলে। শাহজালাল থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গাড়িগুলো পড়ে অবৈধভাবে বাস পার্কিংয়ের কবলে। আন্তঃজেলার বাস মিনিবাস কেন এখানে অবৈধভাবে পার্কিং করা হয়- এ নিয়ে পুিলশের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে প্রশ্ন তুলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজী ইকবাল করিম। কিন্তু এতেও পাল্টা যুক্তি দেখিয়েছে, যাত্রীদের সুবিধার্থেই এখানে বাস থামানো হয়। জানা যায়, শাহজালালের গোলচক্কর পয়েন্টে যানজট নিয়ে এ পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে সিভিল এভিয়েশান। প্রতিটি বৈঠক থেকেই বিমানবন্দরের কর্তারা প্রতি ৫ মিনিট পর পর কমপক্ষে ১ মিনিট টার্মিনালের গাড়ি ছাড়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। সর্বশেষ এ বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবন করে পুলিশ সদর তা বাস্তবায়ন করার জন্য একটি নির্দেশও দেয়। তারপরও পুলিশ সেটা বাস্তবায়ন করছে না। এ সম্পর্কে সিভিল এভিয়েশানের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল নাইম হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, গোলচক্করের যানজটে আমরা প্রতি ৫ মিনিট পর পর অন্তত এক থেকে দেড় মিনিট টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার সিগন্যাল চাচ্ছি। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ সেটা মানছে না। নানা অজুহাত দেখাচ্ছে। এ নিয়ে ঢাকা মহানগর পুিলশের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। তারাও কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। এখন আরও উচ্চ পর্যায়ের অর্থাৎ আন্তঃ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ ইস্যুটি তোলা হবে। সেখানে যদি কিছু হয়। এছাড়া থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আর কোন অপসন দেখছি না। তবে থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে মিল রেখে মেট্রোরেলের প্রকল্পের সংযোগ রাখা যায় সেই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ওই অথরিটি সেটা গ্রহণ করেছে। এতে একটা আশার সঞ্চার হয়েছে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপি উত্তরা জোনের ডিসি প্রবীর কুমার বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, কোথায় দেখলেন যানজট। আমার চোখে তো তা পড়ে না। এ প্রতিনিধি প্রতিদিনই সকাল ও সন্ধ্যায় যানজটের শিকার হন এটা চ্যালেঞ্জ করলে প্রবীর কুমার স্বীকার করেন- তাহলে হয়ত সাধারণ যানজট হতে পারে। এটা সব সময় না। প্রতি ৫ মিনিট অন্তর ১ মিনিট বিমানবন্দর থেকে বের হওয়া গাড়ির জন্য ছেড়ে দেয়ার পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবীর কুমার যুক্তি দেখান এই বলে- এটা সম্ভব নয়। গোলচক্করের পূর্বেই রয়েছে রেলগেট। সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হয়। ট্রাফিক পুলিশের ডিউটি সঠিকভাবে তদারকি না করার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন মিটিংয়ে আছি। পরে ফোন করুন। প্রবীর কুমারের এহেন যুক্তিকে খোড়া ও হাস্যকর দাবি করে বিমানবন্দরে কর্মরত একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, মূলত ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনে গোয়ার্তুমি, উদাসীনতা, একগুয়েমি ও অপেশাদার মনোভাবের জন্যই এই সঙ্কট। উত্তরা জোনের কর্মকর্তাদেরকে কখনই অধস্তনদের দায়িত্ব তদারকি করতে দেখা যায়নি। শুধু গোলচক্করের যানজটের দরুন ২ শ’ যাত্রী গড়ে ফ্লাইট মিস করায় দেশ-বিদেশে যেভাবে দুর্নাম হচ্ছে সেটা আমলেই নিচ্ছে না পুলিশ। বার বার এ ইস্যুটা পুিলশের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে তোলা হলেও তা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। পুলিশের উচ্চ পর্যায় থেকে যদি এ বিষয়টা একটুও তদারকি করত তাহলেও এখানকার ট্রাফিক পুলিশ আরও সচেতন ও আন্তরিক হতো। এখন পরিস্থিতি দেখে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি পুলিশ অনৈতিক উদ্দেশ্যেই এ সঙ্কট জিইয়ে রেখেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ জনকণ্ঠকে বলেন, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এ সঙ্কট নিরসনে সাময়িক দুটো পদক্ষেপ নেয়া যায়। এক গোলচক্কর পয়েন্টে আরও দক্ষতার সঙ্গে পুলিশকে তৎপর রেখে প্রতি ৫ মিনিটের সিগন্যাল ছাড়া। দ্বিতীয়টি হচ্ছে- টার্মিনালের দক্ষিণ দিয়ে চলা বিশেষ সড়কটি বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে আইএসএসবি গেট দিয়ে ঢুকে ক্যান্টনমেন্টের যে রাস্তাটি এমইএস পৌঁছেছে সেটা শুধু যাত্রীসাধারণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় খুলে দেয়া। এতে সাময়িক সমাধান দেখা যায়।
×