ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বসন্ত দিনের পুলক পাতায় পাতায় চলিতেছে কানাকানি...

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বসন্ত দিনের পুলক পাতায় পাতায় চলিতেছে কানাকানি...

কাকের শহর ঢাকা। এখানে কোকিল পাওয়া মুশকিল। তবে অনেকেই জেনে অবাক হবেন, বাংলা একাডেমির খোলা চত্বরে যে সবুজ বৃক্ষ, তার মগডালে অন্তত একটি কোকিল নীরবে নিভৃতে বাস করে। বসন্ত এসেছে, বসন্ত আসছে- কুহু ডাকে জানান দেয় সে। না, এবার এখনও কান পাতার সুযোগ হয়নি, হয়ত তাই শোনা হয়নি ডাকটি। তবে বসন্ত এসে গেছে। আগামীকাল মঙ্গলবার ১ ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। আহা, কী যে অপেক্ষা দিনটির জন্য! বছর ঘুরে আবার আসছে সেই দিন। কবিগুরুর ভাষায়- বসন্ত, দাও আনি,/ফুল জাগাবার বাণী- তোমার আশায় পাতায় পাতায় চলিতেছে কানাকানি...। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১১তম দিনে কানাকানিটা বেশ টের পাওয়া গেল। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে মনে হলো, বসন্তের হাওয়া বইছে! হাওয়া আগে থেকেই বইছিল। এখন মনেও পুলক। কবিতার সঙ্গে প্রেমের উপন্যাসের সঙ্গে উদ্যাপনের অপেক্ষা। বিকেলে যে মেয়েরা মৌসুমি ফুলে সেজে এসেছিল তাদের অনেকের হাতেই এদিন বই দেখা যায়। অন্য প্রকাশের প্যাভিলিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর তমা ও নূপুরের সঙ্গে। দুজনই ভিড় ঠেলে হুমায়ূন আহমেদের প্রেমের উপন্যাস কিনেছেন। কেন? জানতে চাইলে তমা বললেন, ‘গিফট করব।’ কাকে? না, সে কথা কিছুতেই বলতে রাজি হলেন না। নূপুর জানালেন, দুজনই তাদের প্রিয় মানুষের জন্য বই কিনতে এসেছেন। আগামীকাল দেখা হবে। তখন উপহার হিসেবে ভালবাসার মানুষের হাতে বই তুলে দেবেন তারা। ফাগুনের দিনে বাসন্তী রঙে সাজবে মেলা। সে প্রস্তুতিও কিছুটা দেখা গেল। অনেকেই হলুদ রঙে সেজে এসেছিলেন। ফুলের ক্রাউন পরেছিলেন মাথায়। তবে শাড়ি বা পাঞ্জাবি পরতে দেখা গেল না কাউকে। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শাড়ি পাঞ্জাবি তুলে রাখা আছে এখন। বসন্তের দিন পরে মেলায় আসবেন তারা। এখন অপেক্ষা। অমর একুশে গ্রন্থমেলাও অপেক্ষা করে আছে প্রিয় ঋতুর জন্য। নির্বাচিত বই ॥ জার্নিম্যান প্রকাশ করেছে ‘প্রাণের পত্রাবলী।’ বেলাল চৌধুরীকে লেখা দুই বাংলার কবি লেখকদের পত্রগুচ্ছ চমৎকার সাজিয়েছেন তারিক সুজাত। মাওলা থেকে এসেছে মহাদেব সাহার কাব্যগ্রন্থ ‘কোন মন্ত্রবলে অন্ধকারে আলো জ্বলে।’ কানাডা প্রবাসী কবি এখন খুব একটা ভাল নেই। তবে প্রচুর লিখছেন বলে জানা যায়। কবিতা গ্রন্থটি তার প্রবাস জীবনের সুখ দুঃখের অনুভূতি প্রকাশ করেছে। সুবর্ণ থেকে মেলায় এসেছে উপন্যাস ‘নিজের থেকে দূরে।’ ‘নিজের পরা নিলগত’ শিরোনামে এটি লিখেছিলেন অসমীয়া ভাষার লেখক নিরুপমা বরগোহাঞ্চি। ভাষান্তর করেছেন নুপর্ণা লাহিড়ী বড়ুয়া। অন্যপ্রকাশ থেকে মেলায় এসেছে ‘গণমাধ্যম ১৯৭১ ॥ বিশ্ব সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধ।’ বইটির লেখক মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হারুণ হাবীব। এতে দেশীয় ও রণাঙ্গনের সাংবাদিকতা নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। একই প্রকাশনী বের করেছে নাসরীন জাহানের শ্রেষ্ঠ গল্প। দিব্য থেকে এসেছে ‘উনিশ শতকের বাংলার মফস্বল।’ ব্রিটিশ রাজকর্মচারী জি. গ্রাহাম রচিত বইয়ের অনুবাদ করেছেন আখতার জাহান দোলন। একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে মেলায় এসেছে ‘লোকপুরাণ ও সংস্কৃতি।’ সম্পাদনা করেছেন ডঃ পল্লব সেনগুপ্ত। আবিষ্কার প্রকাশন থেকে মেলায় এসেছে ‘নেত্রকোনার লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি।’ প্রবন্ধ সংকলন। লেখক সঞ্জয় সরকার। সাংবাদিকতার পাশাপাশি নেত্রকোনা অঞ্চলের লোক সংস্কৃতির নানা দিক নিয়ে লেখালেখি করেন। অব্যাহত চর্চার অংশ হিসেবে এই নতুন বই। এতে নেত্রকোনার বাউল, বাউল কবি ও সাধক, ঘাটুগান, কবিগান, জারিগান, সারিগান, ভাটিয়ালী গান, ধামাইল গান, মেয়েলী গীত, ধামাইল গান, যাত্রাপালা, প্রবাদ-প্রবচন ও লোকছড়া বিষয়ক ১৩টি প্রবন্ধ রয়েছে। বইটির ভূমিকা লিখেছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক যতীন সরকার। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘রুশ বিপ্লবের শতবার্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। আলোচনা করবেন ডাঃ সারওয়ার আলী, সৈয়দ আজিজুল হক এবং ইমতিয়ার শামীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক পবিত্র সরকার। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ডিজিটাল পেমেন্টে বই বিক্রি বেড়েছে ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এবার ডিজিটাল পেমেন্ট চালু হওয়ায় দিন দিন বই বিক্রি বাড়ছে। মেলা মাঠের বিভিন্ন বুক স্টলের বিক্রেতারা রবিবার একথা জানিয়েছেন। শীর্ষস্থানীয় প্রকাশকরা জানান, বইপ্রেমীরা মেলায় আসতে শুরু করায় গত শুক্রবার থেকে তাদের বই বিক্রির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এবারের মেলায় দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ ডিজিটাল পেমেন্টের সুযোগ চালু করেছে। মেলায় বই ক্রেতারা বিকাশের মাধ্যমে বইয়ের মূল্য পরিশোধ করলে বিকাশ থেকে ভাল পরিমাণ টাকা ফেরত পাচ্ছেন। একটি নামীদামী প্রকাশনা সংস্থার বিক্রেতা বলেন, ‘এ বছর ডিজিটাল পেমেন্ট অনেক বইপ্রেমীকে তাদের পছন্দমতো বই কিনতে উৎসাহিত করেছে। অনেক প্রকাশক গত বৃহস্পতিবার থেকে অনেক বেশি বই বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ক্রেতা কিছু টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা থাকায় বিকাশ পেমেন্টের সুযোগ নিয়েছেন।’
×