ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম কৌশলগত অংশীদার হওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে এ খবর প্রচার হতেই শেয়ার মার্কেট বেড়েছে ২.৫ শতাংশ

ঢাকা স্টকে চীন

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঢাকা স্টকে চীন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত অংশীদার হওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। গত তিন দিন ধরেই প্রধান বাজারে এটিই ছিল সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। চীনের শীর্ষ দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর ২৫ শতাংশের মালিক হলে নতুন বিনিয়োগসহ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতি আস্থা বাড়বে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজারের কর্তাব্যক্তিরা। তবে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও এই ডিএসইর অংশীদারিত্ব পেতে শেষ পর্যন্তও হাল ছাড়ছে না ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসএই)। এরই অংশ হিসেবে রবিবার স্টক এক্সচেঞ্জটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিস্টার ভিকরাম লিন অঘোষিত বাংলাদেশ সফরে আসেন। এই দিনে তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড কমিশনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ দর বেশি পাওয়ায় বরাদ্দকৃত ২৫ শতাংশ শেয়ার চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকেই দেয়ার পক্ষে রয়েছে। জানা গেছে, গত বুধবার ডিএসইর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি শেয়ার ২২ টাকা এবং ৩৭ মিলিয়ন ডলারের কারিগরি সহায়তার আশ্বাসে সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের গঠিত কনসোর্টিয়ামকেই শেয়ার বরাদ্দের বিষয়ে অঘোষিত সিদ্ধান্ত আসে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদে। এর বিপরীতে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই), যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক এবং বাংলাদেশের ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠানগুলোর কনসোর্টিয়ামটি প্রতিটি শেয়ারের দর প্রস্তাব করে ১৫ টাকা করে। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানটিও কারিগরি সহায়তার বিষয়টি প্রস্তাব করে। সবমিলে ডিএসইর পর্ষদ সাংহাই কনসোর্টিয়ামকেই যোগ্য মনে করে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পছন্দ ছিল এনএসইর কনসোর্টিয়ামটি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে সেটিও খোলাখুলিভাবে ডিএসইকে জানানোও হয়েছিল। কিন্তু শনিবার ডিএসইর পর্ষদ তা না রেখে সাংহাইকেই যোগ্য মনে করে। এদিকে সাংহাই ও সেনজেনকে ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ডিএসইর সদস্যরা। তাদের মতে, ডিএসইর এই শেয়ারের সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে। এনএসই অন্যায্যভাবে এই শেয়ার পেতে যাচ্ছে। এদিকে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর ইস্যুতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে তলব করেছে। বিকেল তিনটায় কমিশন ভবনে যান ডিএসইর শীর্ষ এ দুই ব্যক্তি। সেখানে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর বিষয়ে কথা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএসইর একাধিক পরিচালক। ডিএসইর সাবেক সভাপতি এবং ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, শনিবার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামকেই অংশীদার হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ‘আর্থিক ও কারিগরি দিক বিবেচনা করে শেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবকেই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাবে এবং প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। আর স্বাভাবিকভাবেই বিদেশী বিনিয়োগ বাড়লে স্থানীয় বিনিয়োগও বাড়বে। সব মিলিয়ে বাজার আরও ভালর দিকে যাবে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিক মানের একটি শক্তিশালী বাজারে পরিণত হবে। এমন আভাস পেয়েই বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হয়েছেন, বাজার চাঙ্গা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে এ সব প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। চীনা কনসোর্টিয়াম ৯৯০ কোটি টাকায় ডিএসইর ৪৫ কোটি বা ২৫ শতাংশ শেয়ার (প্রতিটি ২২ টাকা দরে) কিনে নেয়ার প্রস্তাব করেছে। সেসঙ্গে ডিএসইর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা (৩৭ মিলিয়ন ডলার) খরচ করবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও একজন পরিচালক বলেন, শেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রস্তাবই আমাদের কাছে যুগোপযোগী মনে হয়েছে। তাদেরকে কৌশলগত অংশীদার করতে পারলে ঢাকার পুঁজিবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে বলে আমরা মনে করি। ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনে মালিকানায় আসার পর এ কনসোর্টিয়াম তাদের প্রতিনিধিকেও ডিএসইর পর্ষদে বসাবে। তখন ডিএসইর চেহারা আমূল পাল্টে যাবে, বলেন এক পরিচালক। জানা গেছে, চীনের প্রধান তিনটি স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে সাংহাই ও শেনজেন রয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে। বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের সেরা ১০টি স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাতেও রয়েছে তারা। সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন দুই দশমিক দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। অপরদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ৫১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বড় এ দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার হলে দেশী-বিদেশী কোম্পানির তালিকাভুক্তি এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আরও আস্থাশীল হয়ে উঠবে বলে মনে করেন ডিএসইর এই পরিচালক। এছাড়া কৌশলগত অংশীদাররা এলে ঢাকার বাজারে পণ্যের ভিন্নতাও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ১৮০ কোটি শেয়ারের মধ্যে ২৫ শতাংশ কৌশলগত অংশীদারদের কাছে বিক্রি করা যাবে। ৩৫ শতাংশ বিক্রি করতে হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। বাকি ৪০ শতাংশ থাকবে স্টক হোল্ডার বা মালিকদের কাছে। উন্নত প্রযুক্তি সুবিধা, ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসা উন্নয়নে পরামর্শক সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে কৌশলগত অংশীদার নিতে চায় ডিএসই। এর আগেও একবার কৌশলগত অংশীদারের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল ডিএসই কর্তৃপক্ষ। তখন দেশী-বিদেশী কয়েকটি কোম্পানি দরপত্র জমা দিলেও ডিএসইর কাছে ওইসব প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তা বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে কৌশলগত বিনিয়োগকারী নেয়ার জন্য ২০১৫ সালে এক বছর সময় দিয়ে চিঠি ইস্যু বিএসইসি। পরে ৬ মাস করে আরও দুই বার সময় বাড়িয়েছে কমিশন। যা আগামী মার্চ মাসের ৮ তারিখ শেষ হচ্ছে। চীনের স্টক এক্সচেঞ্জকে ২৫ শতাংশ শেয়ার কেনার অনুমোদনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার খবরে ডিএসইর প্রধান সূচক একদিনে ২.১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ০৯৩ পয়েন্টে। এই দিনে লেনদেনও বাড়ে। ডিএসইতে এই দিনে গত ৩২ মাসের সর্বোচ্চ একদিনে সূচক বাড়ে। এর আগে গত ২০১৫ সালের ২৫ মে ডিএসইর সূচক একদিনে বেড়েছিল ১৩০.৪৩ পয়েন্ট।
×