ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রকেটের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রকেটের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ

রহিম শেখ ॥ বিকাশের পর এবার রকেটের বিরুদ্ধেও সাধারণ গ্রাহকদের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ বাড়ছে। ফোন কল বা খুদে বার্তার মাধ্যমে অত্যন্ত সূক্ষ্ম কায়দায় গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র। এছাড়া এ সেবার এটিএম বুথের মাধ্যমেও টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরাও এসব ঘটনার সঙ্গে রকেটের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা বলছেন। এ অবস্থায় অর্থ লেনদেনে গ্রাহকদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের। পুলিশের দাবি, এসব চক্রকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর। জানা গেছে, দ্রুততম সময়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে টাকা পাঠানোর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম এখন মোবাইল ব্যাংকিং। বর্তমানে এ সেবা ব্যবহার করেই মানুষ তাদের পরিবার পরিজন ও নিকটাত্মীয়ের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। এছাড়া এ সেবার মাধ্যমে রেমিট্যান্সের অর্থ প্রেরণ, বেতনÑভাতা ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধ সবই উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। মূলত ব্যাংকে গিয়ে অর্থ আদান-প্রদানের ঝামেলা এড়াতে প্রতিদিনই বাড়ছে বিভিন্ন ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার গ্রাহক। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেশ কিছু প্রতারক চক্র। গড়ে উঠছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট চক্র। থামানো যাচ্ছে না গ্রাহক হয়রানি। এক হিসাবে দেখা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকার লেনদেনই বেশি। সাধারণত যারা অল্প আয়ের মানুষ এবং যারা ব্যাংকে গিয়ে এ্যাকাউন্ট খোলার মতো দক্ষ নন, তাদের একটি বড় অংশ এ ব্যাংকিং সেবার দিকে ঝুঁকছেন। এতে একবারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা লেনদেন করা যায়। তবে কেউ চাইলে একাধিক এজেন্ট বা এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আরও অনেক বেশি টাকা লেনদেন করতে পারেন। তবে এই লেনদেনের তেমন কোন তথ্য থাকে না। এজেন্টের মাধ্যমে করলে যার কাছে টাকা পাঠানো হয়, তার মোবাইল নম্বর ছাড়া আর কোন তথ্যই থাকে না। আর সেটার সুযোগ নিয়েই মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে অবৈধ কাজে টাকা ব্যবহার হচ্ছে। ভুয়া মেসেজের মাধ্যমে এজেন্টরা যেমন টাকা দিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন, তেমনি গ্রাহকের টাকাও তুলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ভূরি ভূরি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্রে আসা একাধিক অভিযোগ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের অপরাধে মোবাইল ব্যাংকিং-এর সহায়তা নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, নোবেল লরিয়েটের সঙ্গে ডিনার প্রোগ্রাম, সুলভমূল্যে ফ্ল্যাট-প্লট প্রদান ও জিনের বাদশার কথা বলে অর্থ আদায়, অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়, মানবপাচার, চুরি, হ্যাকিং, ন্যাশনাল আইডি কার্ড জালিয়াতি, সিএনজি ও অটোরিক্সা ছিনতাই প্রভৃতি। অভিযোগ থেকে জানা যায়, সম্প্রতি রাকেশ সিনহা নামের এক গ্রাহকের রকেট এ্যাকাউন্ট থেকে একদিনে ২৯ হাজার ৫০০ টাকা এটিএম বুথের মাধ্যমে বের করে নেয়া হয়েছে। নাদির আক্তার নামে আরেক গ্রাহকের এ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ২২ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া পল্লব মিত্র নামের আরেক গ্রাহকের এ্যাকাউন্ট থেকে ১৪ হাজার ৫০০ টাকা তুলে নিয়েছে প্রতারক। রেকছানা খাতুন নামে এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, তার এ্যাকাউন্টে থাকা ৫৬ হাজার ৯৩ টাকার মধ্যে একদিনে ৩ বারে ৩৫ হাজার ৪৯৯ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারকরা। অভিযোগ করেও অর্থ ফেরত পাননি এসব গ্রাহকরা। এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ। বিভাগের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকিং সিস্টেম এবং মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমের সংযুক্ত রকেট এ্যাকাউন্টের দৈনিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা লেনদেনের সুযোগ রয়েছে কিন্তু একটি এ্যাকাউন্টে ৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির এ্যাকাউন্টে (পি২পি) দৈনিক সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা লেনদেনের সুযোগ রাখা হয়েছে কিন্তু প্রতারণার ক্ষেত্রে ৬০ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে। রকেটের মাধ্যমে প্রতারণার অভিযোগ ও নিষ্পত্তির তথ্য জানতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক কিন্তু এ বিষয়ে কোন লিখিত ডকুমেন্টস দেখাতে পারেনি রকেট কর্তৃপক্ষ। তবে গত বছর তারা ৩৮ গ্রাহকের অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানানো হয়। এর মধ্যে কিছু এ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রকেট। রকেটের পক্ষ থেকে বলা হয়, অভিযোগগুলোর মধ্যে অধিকাংশের ক্ষেত্রে প্রতারকরা ব্যাংকটির +১৬২১৬ নম্বরের অনুরূপ নম্বর থেকে গ্রাহককে বিভ্রান্ত করে প্রতারিত করেছে। প্রতারিত হয়ে গ্রাহকরা ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। সুতরাং এ বিষয়ে ব্যাংকের কিছু করার নেই। নিজের গোপন পিনকোড ব্যবহার করে লেনদেন হওয়ায় তাদের কিছু করণীয় নেই বলে গ্রাহককে জানিয়ে দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগের (রকেট ও এজেন্ট ব্যাংকিং) প্রধান সাইফুল আলম মোহাম্মদ কবীর বলেন, গ্রাহকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। কৌশলে তাদের প্রতারিত করছে একটি চক্র। গ্রাহকদের সচেতন থাকতে হবে। কোনভাবেই কাউকে নিজের গোপন পিনকোড দেয়া যাবে না। গ্রাহকের এ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত সব তথ্যই গোপন থাকে। এটি বাইরে প্রকাশ করা হয় না। আমাদের সিস্টেমও শক্তিশালী। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ১৮টি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রয়েছে। সর্বমোট নিবন্ধিত ৫ কোটি ৮৮ লাখ গ্রাহকের মধ্যে সচল এ্যাকাউন্ট ২ কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে গ্রাহক ও লেনদেনের দিক থেকে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রকেট। রকেট সূত্র জানায়, তাদের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দেড় কোটি। এর মধ্যে সচল এ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৬০ শতাংশ বা ৯০ লাখের মতো।
×