ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

‘যে সময়কে ধরতে চেয়েছিলাম’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

‘যে সময়কে ধরতে চেয়েছিলাম’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রকাশিত হলো দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছোট মেয়ে মাহজাবিন আহমদ মিমি রচিত নিবন্ধ গ্রন্থ ‘যে সময়কে ধরতে চেয়েছিলাম’। একই আয়োজনে এই লেখকের দুটি পুনর্মুদিত কাব্যগ্রন্থ এবং সম্পাদিত ‘অন্য আলোয় তাজউদ্দীন আহমদ’ শীর্ষক স্মৃতিচারণমূলক সংকলনগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। শনিবার বিকেলে ফার্মগেটের খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের থ্রি ডি সেমিনার হলে এই প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং শহীদকন্যা ডাঃ নুজহাত চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন মাহজাবিন আহমদ মিমি। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শহীদকন্যা শমী কায়সার ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত । প্রধান অতিথির বক্তব্যে গ্রন্থটি সম্পর্কে আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন বইটির শিরোনাম যথার্থ হয়েছে। কারণ, এই সময়টি খুব কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত হারিয়ে যায় বর্তমান, থাকে শুধু অতীত ও অনাগত ভবিষ্যত। সেই বর্তমানকে লেখক ধরতে চেয়েছেন তার বইয়ের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, সকলকে খেয়াল রাখতে হবে ইতিহাস যেন কোনভাবে বিকৃতির সুযোগ না পায়। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস পরিবর্তন লজ্জার। ভবিষ্যতে যেন অতীতের মতো কিছু না ঘটে, সেটা আমাদের ভাবতে হবে। তাই সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে বর্তমানকে । বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, তার (মিমি) কবিতা পড়লে মনে হয় বুঝেছি কিনা জানি না, তবে অনেক আনন্দ হয়। তাকে আরও নিয়মিতভাবে লিখতে হবে। কারণ, তিনি ভাল লিখতে পারেন। আর যারা লিখতে পারেন তাদের নিয়মিত লেখা চালিয়ে যাওয়া উচিত। সভাপতি শামসুজ্জামান খানের বক্তব্যে উঠে আসে তাজউদ্দীন আহমদের কথা। তিনি বলেন, তাজউদ্দীন একজন মহান নেতা ছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের স্থপতি। তিনি যদি ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব না দিতেন, ডায়েরি না লিখতেন তাহলে ভাষা আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস লেখা সম্ভব হতো না। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাজউদ্দীনের সম্পর্ক তুলে ধরে বলেন, একে অন্যের সম্পূরক ও পরিপূরক ছিলেন তাজউদ্দীন ও বঙ্গবন্ধু । বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের আদর্শ নিয়ে যদি আমরা এগুতে না পারি, জনমতকে শক্তিশালী না করতে পারি তাহলে সামনে আমাদের আরও বিপদ অপেক্ষা করছে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নৃত্য উৎসব শুরু ॥ দেশের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত যেন ফিরে পাচ্ছে তার হারানো গৌরব। সারারাত ধরে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের নির্যাসে আনন্দের উৎস খুঁজে নেয় তরুণ প্রজন্ম। তেমনি করে প্রবীণদের সঙ্গে সমানতালে নবীন শিল্পীরাও নিজের সমর্পিত করছেন সঙ্গীতের এই ধারায়। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের নবজাগরণ ঘটে যাওয়ার সাক্ষ্যবহ তেমনই এক আয়োজন অনুষ্ঠিত হলো শনিবার। কখনও সুরের মোহময়তায় নিমজ্জিত হলেন শ্রোতারা। কখনওবা মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সমন্বিত নাচের নান্দনিকতায় মুগ্ধ হলেন দর্শকবৃন্দ। শ্রবণ ও দর্শনের প্রশান্তিতে সুন্দর প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নৃত্য উৎসব। নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের অংশগ্রহণে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত তিন দিনের উৎসবটির সূচনা হয় শনিবার সন্ধ্যায়। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় উৎসব উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে ছিল শাস্ত্রীয় আঙ্গিকের নৃত্য-গীতে সজ্জিত প্রথম দিনের পরিবেশনা। শুরুতেই ভরতনাট্যম নাচের সৌন্দর্যে শ্রোতা-দর্শকের নয়ন রাঙিয়েছেন শুক্লা সরকার। এরপর সেতারের সুমধুর সুরে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন রিনাত ফৌজিয়া। ধ্রুপদ রাগের আশ্রয়ে কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশনা করেন অসিত রায়। নৃত্যাঞ্চলের শিল্পীদের পরিবেশিত কত্থক নৃত্য নয়ন জুড়িয়েছে দর্শকের। সমবেতভাবে তবলার লহরা শুনিয়েছেন জাকির হোসেন ও সবুজ আহমেদ। সারেঙ্গীর বাদন শুনিয়েছেন মতিয়ার রহমান। ধ্রুপদ রাগে কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করেন সৌমিতা বোস। গৌড়ীয় নৃত্যের সৌন্দর্যে দর্শককে আলোড়িত করেছেন র‌্যাচেল প্রিয়াঙ্কা প্যারিস। সুর, তাল ও লয়ের বৈভবে সম্মেলক কণ্ঠে খেয়াল ও মালকোষ পরিবেশন করে সরকারী সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেতারের সুমধুর সুরে উৎসব রাঙিয়েছেন ফিরোজ খান। প্রিয়াংকা গোপ ও সানী জুবায়ের পরিবেশন করেছেন ঠুমরি। রাগাশ্রয়ী সুরের আশ্রয়ে বাঁশিতে পরিবেশনা উপস্থাপন করেন বংশীবাদক মোঃ মনিরুজ্জামান। কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন ফিফা চাকমা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও আতিয়া খান কেয়া। আজ রবিবার একই ভেন্যুতে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে দ্বিতীয় দিনের উৎসব। এদিন কণ্ঠসঙ্গীতে শোনা যাবে বেহালা, বাঁশি, সেতার ও সানাইয়ের সুরেলা শব্দময় যন্ত্রসঙ্গীত। দেখা যাবে মণিপুরীসহ নানা আঙ্গিকের শাস্ত্রীয় নৃত্য। একুশের অনুষ্ঠানমালার তৃতীয় দিন ॥ একুশের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ো সেøাগানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে একুশের অনুষ্ঠানমালা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত দুই সপ্তাহব্যাপী এ অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন ছিল শুক্রবার। বিকেল থেকে রাত অবধি চলা আয়োজনে পরিবেশিত হয় নৃত্য-গীত, কবিতা ও পথনাটক। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। একক কণ্ঠে গান শোনান কানন বালা সরকার, সফিউল আলম রাজা, সেলিম রেজা, শান্তা সরকার ও আসিফ ইকবাল সৌরভ। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে চারুকণ্ঠ ও আবৃত্তি একাডেমির বাচিকশিল্পীরা। একক কণ্ঠে আবৃত্তি পরিবেশন করেন জি এম মোর্শেদ, শ্যামলী সুলতানা, আনোয়ার পারভেজ ও মাসুম আহমেদ। শিশু সংগঠন পরিবেশনা উপস্থাপন করে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যমঞ্চের শিল্পীরা। পথনাটক পরিবেশন করে নাট্যযোদ্ধা ও বাঙলা নাট্যদল। আজ রবিবার অনুষ্ঠানের চতুর্থ দিন। বিকেল সাড়ে চারটা থেকে শহীদ মিনারে শুরু হবে অনুষ্ঠান। এদিনের আয়োজনে পরিবেশিত একক ও দলীয় সঙ্গীত, একক ও দলীয় আবৃত্তি, শিশু-কিশোর পরিবেশনা, নৃত্য এবং পথনাটক।
×