ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

স্টাফ রিপোর্টর ॥ যে কোন জাতীয় আন্দোলন কিংবা বিপ্লব গড়ে তোলার জন্য আন্দোলনের আদর্শিক নির্দেশিকা সংবলিত ঘোষণাপত্রের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। পৃথিবীর ইতিহাসে মহৎ আন্দোলন পরিচালনার জন্য ও আন্দোলনের পেক্ষাপট তৈরিতে ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। এই উপলব্ধি থেকেই ভাষা আন্দোলনের আহ্বান ও দিকনির্দেশনা দিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিসের পক্ষ থেকে ১৮ পৃষ্ঠার পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু শীর্ষক ঘোষণা পত্র প্রকাশ করা হয়। ১৮ পৃষ্ঠার এই ঘোষণাপত্র সম্পাদনা করেন অধ্যাপক আবুল কাসেম। আজিমপুরস্থ তমদ্দুন মজলিশের অফিসে তিনি ভাষা আন্দোলনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, একেএম আহসান, নুরুল হক ভূইয়া, শামসুল আলম, আব্দুল মতিন খান চৌধুরী, ফজলুর রহমান ভুঁইয়া, কবি মোফাখখারুল ইসলাম। ঘোষণাপত্র পাঠ শেষে উপস্থিত নেতাকর্মীদের বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। ঘোপষণাপত্রে ভাষা আন্দোলনভিত্তিক জাতীয় আন্দোলন গড়ে তোলার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা সন্নিবেশিত করা হয়েছিল। তমদ্দুন মজলিসের পক্ষ থেকে অধ্যাপক আবুল কাসেমের লেখা ‘আমাদের প্রস্তাব’ নিবন্ধে ভাষা আন্দোলনের সুস্পষ্ট গাইড লাইন বা নীতিমালা নির্ধারণ করে হয়েছিল। এই নীতিমালার উপর ভিত্তি করেই সমগ্র ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং পরিচালিত হয়। ঘোষণাপত্রে তিনটি নিবন্ধ স্থান পেয়েছিল। এর মধ্যে আবুল কাসেমের ‘আমাদের প্রস্তাব’ ছাড়াও ড. কাজী মোতাহার হোসেনের লেখা ‘রাষ্ট্রভাষা ও পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা’ এবং আবুল মনসুর আহমদের ‘বাংলা ভাষাই হইবে আমাদের রাষ্ট্রভাষা।’ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ‘বাংলা না উর্দু’ শীর্ষক ভাষা-আন্দোলনের ঘোষণাপত্রে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের নীতিমালায় আদর্শিকা এবং নির্দেশিকা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়। উক্ত ঘোষণাপত্রে বাংলাকে কেন অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা উচিত তা যেমন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দেয়া হয় ঠিক তেমনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ না করলে দেশবাসীকে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করতে হবে তাও বলা হয়। সে আন্দোলন কিভাবে পরিচালিত করতে হবে সেই কৌশলগুলোও নির্ধারণ করে দেয়া হয়। পরিশেষে আন্দোলনের পরিণতি এমনকি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি মেনে না নিলে পূর্ব পাকিস্তান যে স্বাধীন হবে সে কথাও ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়।
×