ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট

টেস্ট সিরিজ হারল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

টেস্ট সিরিজ হারল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টে ড্র করার পর মিরপুর টেস্টে ২১৫ রানের বড় ব্যবধানে হারে। এই হারে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ হারও নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। চট্টগ্রাম টেস্টে পাঁচদিন খেলা গেলেও মিরপুর টেস্টে আড়াই দিনও খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। দুই ইনিংসেই হাফ সেঞ্চুরিয়ান রোশেন সিলভার (৫৬ ও ৭০*) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কা প্রথম (২২২ রান) ও দ্বিতীয় ইনিংসে (২২৬ রান) সমানতালে রান করেছে। বাংলাদেশও দুই ইনিংসেই (১১০ ও ১২৩ রান) একই তালে রান করে গেছে। কিন্তু প্রতিবারই শ্রীলঙ্কা থেকে ১০০ রানের ওপরে পিছিয়ে থাকে। জিততে ৩৩৯ রানের টার্গেট যখন বাংলাদেশের সামনে দাঁড় হয়, এই টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে ব্যাটসম্যানরা শুধু ব্যর্থই হন। দুই ইনিংসে বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যানও হাফ সেঞ্চুরিয়ান দেখা পাননি। প্রথম ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজ সর্বোচ্চ অপরাজিত ৩৮ রান করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে মুমিনুল হক সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেছেন। শ্রীলঙ্কা কিংবা বাংলাদেশ, দুই দলের ইনিংসেই স্পিনারদের দাপট ছিল। তাতে বলতে গেলে বাজিমাত করেছেন অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা আকিলা ধনঞ্জয়া। তিনি প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস ধসে দেন। স্পিনারদের টেস্টে ব্যাটসম্যানদের গুরুত্ব অনেক। এমন উইকেটে স্পিনাররা সুবিধা পাবেনই। সেই সুবিধা নিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ওপর ঝেঁপে পড়বেন। উইকেট নেবেন। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমন টার্নিং উইকেটে ও ব্যাটিং করতে কঠিন উইকেটেও যে ব্যাটসম্যান নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন, তারই কদর থাকে। আর তাই সিলভা ম্যাচের নায়কও হয়েছেন। তিনি শুধু জেতা মিরপুর টেস্টেরই নায়ক নন, চট্টগ্রাম টেস্টের এক ইনিংসে ১০৯ রান করে টেস্ট সিরিজ সেরাও হয়েছেন। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ, নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানরা যা করতে পারেননি, ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সিরিজ খেলতে নেমেই তা করে দেখিয়েছেন সিলভা। তার অপরাজিত ৭০ রানের ইনিংসেই তো দ্বিতীয় ইনিংসে ২২৬ রান পর্যন্ত করতে পেরে ৩৩৯ রানের টার্গেট দিতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা। যে টার্গেট অতিক্রম করা বাংলাদেশের কাছে কঠিন তা আগেই ধরে নেয়া হয়েছে। কারণ কখনই ২৫০ রানের বেশি টার্গেটে খেলতে নেমে বাংলাদেশ টেস্টে জিততে পারেনি। এর আগে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রানের টার্গেটে জিতেছিল। সেটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ছিল। এবার শ্রীলঙ্কার কাছে এমন ব্যবধানেই হারল বাংলাদেশ। দ্বিতীয়দিন শেষে ২০০ রান করে ৩১২ রানে এগিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। তৃতীয়দিনে আরও ২৬ রান যোগ করে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ব্যাট করতে নেমে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে। রঙ্গনা হেরাথ ও আকিলা ধনঞ্জয়ার ঘূর্ণি বলগুলো যেন বুঝতেই পারেন না বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। এমন মুহূর্তে ব্যাটসম্যানদের উইকেট আঁকড়ে থাকার সঙ্গে রানও স্কোরবোর্ডে যোগ করার কথা। অথচ যেন টেস্ট নয়, ব্যাটসম্যানরা টি২০ খেলতে নেমেছেন এমন ভাব! এই স্টাইলে খেলতে গিয়ে ১২৩ রানেই সব খতম হয়ে গেছে। ত্রিশটি ওভারও পুরো খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। তাতে বোঝা যাচ্ছে, এক সেশনও পুরো খেলতে পারেনি। তৃতীয়দিনের শুরুতেই অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এরপর একটু বিরতি পড়ে। তারপর বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ব্যাট করতে নামতেই সকালের সেশন শেষ হওয়ার আগেই তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস সাজঘরে ফেরেন। দুপুরের সেশন শুরু হতেই মুমিনুল হকও যখন আউট হয়ে যান, তখনই যেন হারের শঙ্কা ভালভাবে জেগে যায়। এরপরও মুশফিকুর রহীম, লিটন কুমার দাস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, সাব্বির রহমানরা ব্যাটিংয়ে থাকেন। তাই ভরসাও থাকে। মিরাজ যে দ্বিতীয়দিন শেষেই বলেছিলেন, এই উইকেটে রান করা সম্ভব। টার্গেট যতই হোক জেতাও সম্ভব। এ জন্য ব্যাটসম্যানদের ধৈর্য ধরে খেলতে হবে। উইকেট বুঝে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সেই কাজটি মিরাজ নিজেও করতে পারলেন না। বাকিরাও আসা-যাওয়ার মিছিলে যুক্ত হলেন। এমনই অবস্থা হলো ৬৪ রানের মধ্যে তামিম, ইমরুল, মুমিনুল আউট হওয়ার পর ৭৮ রানে লিটন সাজঘরে ফেরেন। এরপর মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ মিলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও পারেননি। ১০০ রান হতেই যেই মাহমুদুল্লাহ আউট হয়ে গেলেন, ১২৩ রানের মধ্যে নেই আরও ৫ উইকেট। ১০০ রান থেকে ১২৩ রানের মধ্যে যে শেষ ৬ উইকেট পড়ে বাংলাদেশের, চারটি উইকেটই শিকার করেন আকিলা। অভিষেক টেস্টেই নিজেকে মেলে ধরলেন। তার বোলিং যেন কোনভাবেই বুঝতে পারেননি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। তাতে করে বড় হারই হয়েছে নিয়তি। তাইজুলকে আউট করে যখন বাংলাদেশের ইনিংস শেষ করে দেন রঙ্গনা হেরাথ তখন ৪১৫ উইকেট শিকার করেন। বামহাতি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেন হেরাথ। গত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে দেশের মাটিতে এমন হার দেখেনি বাংলাদেশ। গত বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এরচেয়েও বড় হার হয়েছে। গত বছর মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মাটিতেও একটি টেস্টে ২৫৯ রানের হার আছে। একই বছর ভারতের বিপক্ষে হায়দরাবাদেও ২০৮ রানের হার আছে। কিন্তু দেশের মাটিতে ২০১৫ সালের মে মাসে যে পাকিস্তানের কাছে ৩২৮ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ, এরপর এমন হার হয়নি। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি টেস্টে ইনিংস ও ২৫৪ রানে হারা ম্যাচটি আড়াইদিনে শেষ হয়েছিল। এরপর শনিবার হলো। দেশের মাটিতে টেস্টে সুসময়ই যাচ্ছিল বাংলাদেশের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জেতার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও জেতা গেছে। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ড্র করা গেছে। কিন্তু যে চালে, স্পিন উইকেট তৈরি করে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে ডোবানো গেছে, সেই একই চালে এবার শ্রীলঙ্কাকে বিপাকে ফেলতে গিয়ে নিজেরাই বিপদে পড়েছে। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা যে এমন উইকেটে খেলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তারাও নিজ দেশে এমন উইকেটেই খেলে। এমন সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশকে তাই হারিয়েই দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাংলাদেশকে টেস্ট সিরিজেও হারিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
×