কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর আউং সান সুচির সঙ্গে আজ রবিবার বৈঠকে বসছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। এই বৈঠকের মধ্যে দিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এখনই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করলেও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিন্ন মত পোষণ করে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরাতে না পারলে পরে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। শনিবার তিনি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে মিয়ানমার গেছেন। মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির সঙ্গে নেপিডোয় তিনি রবিবার বৈঠকে বসবেন।
বরিস জনসন মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ড সফরে যাবেন। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রেউত চার সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের বিষয়ে শনিবার যুক্তরাজ্যের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বরিস জনসন মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির সঙ্গে রবিবার বৈঠকে বসবেন। এই বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে তিনি আলোচনা করবেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যেন দ্রুত হয়, সে বিষয়ে জোর দেবেন বরিস জনসন।
ঢাকায় আসার পরে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যাকে একটি মানবিক সঙ্কট বলে জানিয়েছেন। এই সঙ্কট সমাধানে সবাই মিলে কীভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচি ও অন্যান্য আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান বরিস জনসন।
এদিকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পাঠানোর মতো নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারা অভিমত প্রকাশ করেছিলেন। বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূতও অভিমত প্রকাশ করেছিলেন, রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি না হলে, সেখানে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো উচিত হবে না। তাদের ফেরত পাঠানোর আগে সেখানে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি জরুরী। তবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এসে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বরিস জনসন বলেছেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দেরি হলে এই ইস্যু হয়ত জটিল হবে। সে কারণে দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জোর দেন তিনি। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া উচিত বলেও অভিমত প্রকাশ করেন বরিস জনসন।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর সহিংসতার মুখে গত ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনে গত মাসে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। এরপর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেসসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের এখনই সেখানে ফেরত পাঠানো সময়োচিত সিদ্ধান্ত হবে না বলে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়। এর মধ্যেই ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বললেন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন শুক্রবার ঢাকায় আসেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন বরিস জনসন। বৈঠক শেষে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে আমরা অবহিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে এই সঙ্কট সমাধানের জন্য আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বরিস জনসন ২০১৬ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এর আগে লন্ডনের মেয়র পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। গত এক দশকে প্রথম কোন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এলেন বরিস জনসন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: