ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও ৩৬ মামলা বিচারাধীন

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও ৩৬ মামলা বিচারাধীন

বিকাশ দত্ত ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় হলেও এখনও ৩৬টি মামলা চলমান রয়েছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দুদকের আইনজীবীর যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। এখন আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক চলছে । অসমাপ্ত যুক্তিতর্কের জন্য ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য রয়েছে। বকশীবাজারের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার খেলার মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে এ মামলাটি চলছে। অন্যান্য মামলার মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে তিনটিতে, একটি মামলার যুক্তি উপস্থাপন, সাক্ষীর জন্য একটি এবং ১৪টির অভিযোগ গঠন শুনানির অপেক্ষায়। বাকি ১৬টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ- দিয়েছে আদালত। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৫ আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে। এ আদেশের বিরুদ্ধে আসামি পক্ষের আইনজীবীগণ বলেছেন, সার্টিফায়েড কপি পেলেই জামিনের আবেদন করা হবে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তার বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে ১১-১৫ ফেব্রুয়ারি দেশের সব জেলার আইনজীবী সমিতি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লা মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, আজ আদালত খুলছে। আমরা রায়ের সার্টিফায়েড কপির জন্য চেষ্টা করব। কপি পেলেই বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য আবেদন করব। আস্তেধীরে এগুচ্ছি। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। রায় ঘোষণার দিনই আসামি পক্ষের আইনজীবী সার্টিফায়েড কপির জন্য আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, এ ছাড়া যে ৩৬ টি মামলা রয়েছে তাও আইনীভাবে মোকাবেলা করা হবে। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক রায় ঘোষণার দিনই বলেছিলেন, আমাদের সংবিধানে বলা আছে নৈতিক স্খলনের জন্য দুই বছরের অধিক সময় যদি কারো সাজা হয় তাহলে তিনি সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন না। হাইকোর্ট ও সুপ্রীমকোর্টের দুটি রায় আছে, যেখানে এ ব্যাপারে কিন্তু সুনিশ্চিত বলা হয়েছে আপীল যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মামলাটা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যায়নি সেজন্য দ-প্রাপ্ত হননি সেজন্য ইলেকশন করতে পারবেন, আবার আরেকটা রায়ে আছে পারবেন না। এখন উনার ব্যাপারে আপীল বিভাগ এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটা তাদের ব্যাপার। মামলার রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার পরে তারা আপীল করতে পারে এবং আপীল করার সঙ্গে সঙ্গে তারা বেল পিটিশনও দিতে পারে। সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে সংসদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি কেউ নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্য দুই বছরের কারাদ-ে দ-িত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে, তবে তিনি সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না। ৩০ জানুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দুদকের আইনজীবী যুক্তিতর্ক শেষ হযেছে। এখন আসামি পক্ষের যুক্তিতর্কের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। খালেদা জিয়া ছাড়া এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুনীতি মামলায় যুক্তিতর্কে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ক্রয়কৃত জমির দলিল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দলিলটিতে মোট সম্পদের মূল্য উল্লেখ রয়েছে ৬ কোটি ৫২ লাখ ৭ হাজার টাকা। কিন্তু দলিলে উল্লেখিত টাকা ছাড়াও অপর একটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির দলিলদাতাকে প্রদান দেখিয়ে লেনদেন করেছেন। অর্থাৎ তিনি অবৈধ উৎস থেকে প্রাপ্ত টাকা মিসেস সুরাইয়া খানকে প্রদান দেখিয়ে লেনদেন করেছেন। খালেদা জিয়া অন্য আসামিদের সহযোগিতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ উৎস থেকে ট্রাস্টের হিসাবে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধভাবে সংগ্রহ, জমা এবং উত্তোলন করে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ ২নং আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাই আমরা খালেদা জিয়াসহ চার আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের কারাদ- দাবি করছি। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। এদিকে ৮ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা আরও ১৪টি মামলার কার্যক্রম বকশীবাজারের সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা ও সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন থেকে মামলাগুলো সেখানেই চলবে। মামলাগুলো হলো দারুস সালামের নাশকতার আট মামলা,গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা,নাইকো দুর্নীতি মামলা,বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা,যাত্রাবাড়ী থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা ও মানহানির দুই মামলা । এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। ১৪টি মামলার মধ্যে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ৯টি, বিশেষ জজ আদালতের তিনটি ও ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের দুইটি মামলার বিচারকাজ বকশীবাজারের অস্থায়ী আদালতে চলবে। অন্যান্য মামলার মধ্যে তিনটিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। ভুয়া জন্মদিন পালন করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ২০১৭ সালের ১৭ নবেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। অপরদিকে ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট নড়াইলে একটি মানহানির মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। এছাড়া হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা একটি মামলায় ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ বেগম জেসমিন আরা। এ ছাড়া গুলশানে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় মামলা এবং বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা মানহানি মামলাসহ ১৬টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তার বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। শনিবার দুপুরে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন। জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা মনে করি বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়টি দেশের জনগণ কোনভাবেই স্বাভাবিক রায় হিসেবে মেনে নেয়নি। দলের চেয়ারপার্সনের কারাদ- হওয়ার পর বিএনপি ক্ষুব্ধ অবস্থানে থাকলেও অত্যন্ত সংযত ও সতর্কতার সঙ্গে সামাল দিচ্ছে এবং দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, সরকার তাদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে নানাভাবে উস্কানি দিচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে ১১-১৫ ফেব্রুয়ারি দেশের সব জেলার আইনজীবী সমিতি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহম্মেদ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার বিষয়টিকে রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট বলে অভিহিত করেছেন । দুর্নীতি নয়, বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে বেগম জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। কারাগারে ৫ আইনজীবী ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে যান পাঁচ আইনজীবী। এ পাঁচ আইনজীবী হলেন- এ্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও এ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান। কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে ব্যারিস্টার মওদুদ আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, নির্জন কারাবাস বলতে যা বোঝায়, ম্যাডামকে তা দেয়া হয়েছে। জনমানবহীন পরিবেশে রাখা হয়েছে। ডিভিশন দেয়া হয়নি। তার অভিযোগ, সাধারণ কয়েদীকে যা খেতে দেয়া হয়, খালেদাকেও তা-ই দেয়া হয়েছে।
×