ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশের ব্যর্থতা দায়ী!

খালেদার গাড়িবহরে হঠাৎ অনুপ্রবেশ ও সংঘর্ষ তদন্ত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদার গাড়িবহরে হঠাৎ অনুপ্রবেশ ও সংঘর্ষ তদন্ত হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এতিমদের টাকা আত্মসাতের মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জেল হওয়ার প্রতিবাদে শনিবারও ঢাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন। মিছিলকালে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতিসহ অন্তত আট জনকে আটক করেছে। বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় রমনা ও শাহবাগ থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় আরও ছয়টি পৃথক মামলা হয়েছে। দায়েরকৃত ১১ মামলাই দায়ের করেছে পুলিশ। পৃথকভাবে দায়েরকৃত এসব মামলায় এজাহার নামীয় আসামির সংখ্যা প্রায় ৮শ’ । অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে আচমকা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর অনুপ্রবেশ ও সংঘর্ষের ঘটনা সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়া গুলশান থেকে বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতে হাজিরার জন্য বের হন। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর এফডিসি গেটের কাছাকাছি পৌঁছার পর কয়েকশ’ নেতাকর্মী তার গাড়িবহরে যোগ দেন। গাড়িবহর মগবাজারে পৌঁছলে গাড়িবহরে যোগ হওয়া নেতাকর্মীর সংখ্যা দাঁড়ায় অন্তত পাঁচ হজারে। এর মধ্যে কিছু নেতাকর্মীকে পুলিশ রমনা থানার সামনে আটকাতে সক্ষম হয়। বাকিদের অনেকেই বকশীবাজারের স্থাপিত বিশেষ আদালত পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে যেতে সক্ষম হন। গাড়িবহরে যাওয়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের এফডিসি মোড়ে, মগবাজার মোড়ে, কাকরাইলের কাছে, মৎস্যভবন ও হাইকোর্টের সামনে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গাড়িবহরে দলের তরফ থেকে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল নেতাকর্মীদের নিয়ে যোগ দেন। প্রায় বকশীবাজার পর্যন্ত যান তিনি। এরই মধ্যে সোহেলের লোকজনের সঙ্গে দফায় দফায় পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ সোহেলকে আটকের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। আচমকা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে নিমিষেই সটকে পড়েন এই বিএনপি নেতা। তার হদিস জানার চেষ্টা করছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, গাড়িবহরে এফডিসি গেট, কাওরানবাজার, মগবাজার, মৎস্যভবন ও পুরানাপল্টন এলাকা থেকে যেসব লোক ও নেতাকর্মী যোগ দিয়েছিলেন, তাদের নেপথ্যে ছিলেন হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। তিনিই মূলত তার লোকজনদের বিভিন্ন জায়গায় ছদ্মবেশে অবস্থান করিয়েছিলেন। এরপর আচমকা গাড়িবহরে সেইসব লোকজন যোগ দিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটান। এটি পুলিশের বড় ধরনের ব্যর্থতা। কারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশে থাকা কোন জঙ্গী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী খালেদা জিয়ার ওপর হামলা চালালে পুলিশের ওই মুহূর্তে কিছুই করার ছিল না। সারা বিশ্বে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াকে নিরাপত্তা দেয়ার ব্যর্থতা প্রমাণিত হতো। আবার সুপরিকল্পিতভাবে নিরাপত্তা না দেয়ার দায়ভারও পড়ত। যদিও অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনা ঘটেনি। ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হতো। ঘটনাটি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় শুক্রবার রমনা থানায় ৩টি ও শাহবাগ থানায় ২টি মোট ৫টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। দায়েরকৃত এসব মামলায় সরকারী কাজে বাধা, মারধর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় ৩৬৮ জন নেতাকর্মীকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। দলটির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে আসামি করা হয়েছে এসব মামলায়। মামলায় অজ্ঞাত আরও হাজারখানেকেরও বেশি জনকে আসামি করা হয়েছে। রমনা মডেল থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম জানান, দায়ের করা তিনটি মামলায় ১৬০ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। আর শাহবাগ মডেল থানার ওসি আবুল হাসান জানান, দায়েরকৃত দুইটি মামলায় ২০৮ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। পাঁচটি মামলায়ই আরও অন্তত হাজারখানেক জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এদিকে শুক্রবারও রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিলকালে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় ২টি, মিরপুর মডেল থানায় ১টি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ১টি, বংশাল থানায় ১টি ও কোতোয়ালি থানায় ১টিসহ মোট ৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের আসামি করেছে পুলিশ। মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে প্রায় দুইশ’ জনকে। আর অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে অন্তত ১২শ’ জনকে। এদিকে শনিবারও দুপুরে বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন। নয়া পল্টনের মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক। মিছিলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শহীদুল ইসলাম বাবুল, হারুনুর রশীদ, আ ক ম মোজাম্মেল হক, খান রবিউল ইসলাম রবিসহ অনেকেই। নয়া পল্টন থেকে শুরু হওয়া ওই মিছিল ফকিরাপুলের কাছে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশের ধাওয়ায় মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। দুপুর সোয়া একটার দিকে হাউজ বিল্ডিংয়ের গলি থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করে। মিছিলে যোগ দেন যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুসহ অনেকেই। বিজয়নগর থেকে বের হওয়া মিছিল থেকে আটক হন ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ নবীসহ অন্তত আটজন ।
×