ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেরানীগঞ্জে ভূমিদস্যুর কবলে সরকারী সম্পত্তি

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কেরানীগঞ্জে ভূমিদস্যুর কবলে সরকারী সম্পত্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ১০ ফেব্রুয়ারি ॥ কেরানীগঞ্জ উপজেলায় শত শত একর খাস জমি এক শ্রেণীর ভূমিদস্যুর দখলে চলে গেছে। অবৈধভাবে দখল করে এসব জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে বাড়িঘর, দোকান-পাট এমনকী বহুতল ভবন পর্যন্ত। সরকারী জমি উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে ভূমি অফিস। ইতোমধ্যে সরকারী জমির তালিকা ও উদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করেছে উপজেলা ভূমি অফিস। বেশ কিছু জমি উদ্ধারও করা হয়েছে। জানা যায়, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা সার্কেল ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ সার্কেল নামে দুটি ভূমি অফিস রয়েছে এই উপজেলায়। ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে মডেল থানা সার্কেল ও ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ সার্কেল গঠিত। দুটি ভূমি অফিসের আওতায় কয়েক শ’ একর সরকারী জমি রয়েছে। এসব জমির বেশিরভাগই ভূমিদস্যুরা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। অনেকেই আবার ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মালিকানা দাবি করছে। সরেজমিন দেখা যায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আগানগর তরিকউল্লাহ রোডের দুই পাশে কয়েক কোটি টাকর সরকারী জমি দখল করে বাড়িঘর, দোকান, কারখানা ভাড়া দিয়েছেন স্থানীয়রা। ইস্পাহানী আবাসিক এলাকায় সরকারী জমিতে শতাধিক বহুতল বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। দখলদাররা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এসব জমি দখলের মাধ্যমে বাড়িঘর করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জিনজিরার তহসিলদার মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, জিনজিরা তহসিল অফিসের পাশে বিপুল পরিমাণ সরকারী সম্পত্তি রয়েছে। একটি ভূমিদস্যু চক্র দখল করে দোকানপাট গড়ে তুলেছে। এ ছাড়াও রোহিতপুর তহসিল অফিসের সামনের জমিটি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে একটি ভূমিদস্যু চক্র। কেরানীগঞ্জ মডেল থানা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই ভূমি অফিসের আওতায় প্রায় ৩০০ একর সরকারী সম্পত্তি রয়েছে। এসব জমি শনাক্তকরণ ও তালিকা তৈরির জন্য কানুনগো মীর মোয়াজ্জেম হোসেন, নাজির রাকিব হোসেন চয়ন ও নামজারি সহকারী ফজলুর রহমানকে নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০০ একর সরকারী সম্পত্তি শনাক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ভূমি অফিসের আওতায় শুভাঢ্যা, কোন্ডা ও বাস্তা ইউনিয়নে কয়েক শ’ একর সরকারী জমি বেদখল হয়ে আছে। কোন্ডা ইউনিয়নে শতাধিক ইটভাঁটি রয়েছে। এসব ইটভাঁটির বেশিরভাগের বিরুদ্ধে খাস জমি ও খালের তীর দখল করা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রয়েছে অর্ধশতাধিক হাউজিং কোম্পানি। এসব হাউজিং কোম্পানির দখলে রয়েছে শত শত একর সরকারী জমি। তবে হাউজিং কোম্পানিগুলো প্রভাবশালী হওয়ায় এসব জমি উদ্ধারে ভূমি অফিসকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কেরানীগঞ্জ মডেল থানা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) পারভেজুর রহমান বলেন, কেরানীগঞ্জে খাল-বিল, নদী-নালা ও সরকারী সম্পত্তি এক শ্রেণীর ভূমিদস্যু দখল করেছে। সরকারী সম্পত্তির ওপর অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশানুযায়ী সরকারী সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য অবৈধ দখলদার ও সরকারী সম্পত্তির তালিকা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে সাইন বোর্ড টানানো হয়েছে। কিছু কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সরকারী জমি উদ্ধার করে বাউন্ডারি দেয়া হচ্ছে। বাকিগুলোও উচ্ছেদ করা হবে।
×