অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালির ফুলচাষীরা। খেত থেকে সময় মতো পর্যাপ্ত ফুল পেতে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা। এ তিন দিবসে ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দিনরাত ফুল ও ফুলগাছের পরিচর্যা করছেন ফুলচাষীরা। যশোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত গদখালির ছোট্ট এ ফুলের বাজার।
এখন থেকে গদখালির চাষীরা বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ফুল বাজারে সরবরাহ করছেন। দেরিতে ফুল ফোটাতে গোলাপের কুঁড়িতে পরিয়ে রাখছেন ‘ক্যাপ’। ফলে বসন্ত দিবস, ভালবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে ফুল বাজারে দেয়া নিশ্চিত হবে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওলাসসহ নানা রঙের ফুল। চোখ ধাঁধানো এই সৌন্দর্য কেবল মানুষের হৃদয়ে অনাবিল প্রশান্তিই আনে না, সমৃদ্ধিও এনেছে অনেকের জীবনে। গদখালি বাজারে জারবেরার স্টিক বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়, রজনীগন্ধা ২-৩ টাকায়, গোলাপ রং ভেদে ৫-১৫ টাকায়, গ্ল্যাডিওলাস ৩-১০ টাকায় ও এক হাজার গাঁদা মিলছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।
গদখালি ফুলচাষী কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রনি আহম্মদ জানান, গত বছর এই মৌসুমে ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল। এবার তা ছাড়িয়ে যাবে ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকা। ভালবাসা দিবসে রঙিন গ্ল্যাডিওলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধা ও গোলাপ বেশি বিক্রি হয়। আর গাঁদা বেশি বিক্রি হয় একুশে ফেব্রুয়ারি ও বসন্ত উৎসবে। ফলে সূর্য উঠার আগেই প্রতিদিন চাষী, পাইকার ও মজুরের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠছে গদখালির ফুলের বাজার। পাইকারদের কেনা ফুল সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে স্তূপ করে সাজানো হচ্ছে, পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
ফুলচাষী হাফিজা খাতুন হ্যাপি বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে যে ফুল বেচাকেনা হয় তার অন্তত ৭০ শতাংশই যশোরে উৎপাদিত। তবে এবারের ভালবাসা দিবসে ফুলের যেমন উৎপাদন বেশি, তেমনি চাহিদা অন্য যেকোন বছরের তুলনায় বেশি। তাই শহর-নগরের ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা ফুলের অর্ডার নিচ্ছি।
স্থানীয় ক্ষুদ্র পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, সামনে ভ্যালেন্টাইন ডে’তে ফুল বিক্রি বেশি হবে। বাজারে জারবেরা, গোলাপ, রজনীগন্ধা ফুলের চাহিদা বেশি। কৃষকরাও দাম ভাল পাবেন। হাড়িয়া নিমতলা গ্রামের আসলাম হোসেন বলেন, এক বিঘায় গোলাপ ও দুই বিঘায় গ্ল্যাডিওলাসের আবাদ করেছেন। এক বিঘা গোলাপ আবাদে খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রথম বছর চল্লিশ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে, তবে তাতে ৭-৮ বছর ফুল পাওয়া যাবে। প্রতি বছর দেড় লাখ টাকার ফুল বিক্রি করা যাবে।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপঙ্কর দাস বলেন, এ অঞ্চলে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে ৫০০ ফুলচাষী বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ করেছেন। বর্তমানে এটি ‘ফুলের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত। এবার শীতের তীব্রতা কম থাকায় ফলন ভাল হয়েছে। আর আবহাওয়া ভাল থাকায় ফুলের উৎপাদনও বেশি হয়েছে। ২০১৭ সালে শুধু গদখালি থেকে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছে। এ বছর তা অতিক্রম করবে বলে আশা করছি।