ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার জেল

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদা জিয়ার জেল

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন দেশ বারবার বিশ্বে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। খালেদা জিয়া ও তাঁর বড় ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বহু অভিযোগ উঠেছে। শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সুনির্দিষ্টভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে, যেটির রায় পেতে প্রায় এক দশক লেগে গেল। শেষ পর্যন্ত রায় হয়েছে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী জেলে গেছেন। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ বৃহস্পতিবার সরকারী অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি তাঁর পুত্র ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও চারজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সর্বমোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানা দিতে বলেছে। পিনপতন নীরবতার মধ্যে বিচারক জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে ৪০৯ ও ১০৯ ধারার অপরাধ প্রমাণ হয়েছে। সামাজিক অবস্থান ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় খালেদা জিয়ার সাজা কমানো হয় বলে রায়ে উল্লেখ করে আদালত। মোট ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের বিশেষ অংশ পাঠ করেন বিচারক। রায়ের পর বিকেলে খালেদা জিয়াকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। জনমনে জিজ্ঞাসা হলোÑ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে আসা বিদেশী অনুদান কাকে দান করা হয়েছিল, কিভাবে? দ্বিতীয়ত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের এতিমখানার অবস্থান ও অস্তিত্ব কোথায়? কতজন এতিম আছেন সেখানে? এসব প্রশ্নের উত্তর থেকেই বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় সম্পর্কে বাস্তবতা অনুধাবন করা যাবে। তবু একটি মহল অপপ্রচার চালিয়ে আসছে যে, ‘নির্বাচনের বছর’ বিবেচনায় রেখে সরকারের তরফ থেকে এই মামলায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে জেল দেয়া হয়েছে। আমরা আইনের শাসনের কথা বলি। কিন্তু সেই আইন যখন আমাদের স্বার্থকে আঘাত করে, বেআইনী কা-কারখানাকে শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয় তখন আমরা তাকে ‘অন্যায্য, অন্যায়’ হিসেবে দেখি দেশে সাম্প্রতিককালে আইনের শাসন সুদৃঢ় রয়েছে। জাতির পিতাকে হত্যাকারীরা এবং মুক্তিযুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকারীরা দণ্ড পেয়েছে। এমনকি র‌্যাবের মতো এলিট ফোর্সের কতিপয় বিপথগামী সদস্যের গর্হিত অপরাধের বিচারও হয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে বহাল থেকে দুর্নীতির মতো অপরাধ করে যে ছাড় পাওয়া যায় না জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে সেটাই প্রমাণ হলো। এই রায় বরং দেশের মানুষকে স্বস্তি ও গৌরব দেবে। প্রসঙ্গত জাতীয় সংসদে দেশের সিনিয়র নেতারা প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, দুর্নীতি, হত্যা, অর্থ পাচার ও জঙ্গীবাদ চালিয়ে আর পার পাওয়া যাবে না। দলীয় নেত্রীর দুর্নীতির মামলার রায় শোনার জন্য আদালত যাত্রায় দলটির নেতাকর্মীরা সহযাত্রী হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দলীয় কর্মীরা সহিংস আচরণ করবে, যানবাহন জ্বালিয়ে দেবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াবে এটা অস্বাভাবিক, অনাকাক্সিক্ষত। এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যথাসময়ে প্রস্তুতি গ্রহণ না করা হলে বিএনপির পক্ষ থেকে রাজধানীতে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হতো। যাহোক, শেষ পর্যন্ত রায় হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের সুযোগও আছে। আইনী প্রক্রিয়ার বাইরে অর্থাৎ আদালতের বাইরে জনপথ উত্তপ্ত ও উত্তাল করে কোন লাভ পাওয়া এক্ষেত্রে অসম্ভব। রায়কে কেন্দ্র করে নতুন কোন হঠকারী ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের অবতারণা করা হলে তা দেশবাসী প্রতিরোধ করবেÑ এটা সুনিশ্চিত।
×