ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমাধানের উদ্যোগ স্থানীয় সরকার ;###;বিভাগ ও পৌর কর্তৃপক্ষের

বগুড়ার নাগরিক ভোগান্তি ১৪টি

প্রকাশিত: ০৮:২২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বগুড়ার নাগরিক ভোগান্তি ১৪টি

সমুদ্র হক ॥ বগুড়া নগরীর নাগরিক ভোগান্তির ১৪টি সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। নাগরিক ভোগান্তি দূর করার সম্ভাব্য কাজগুলো নির্ধারণের পর পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে সেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে দায়িত্ব দিয়েছে জেলা প্রশাসন। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সুফিয়া নাজিম জানান, তিনি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকীকে সঙ্গে নিয়ে নগরীর সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছেন। কিছু সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু সমস্যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। বগুড়া পৌরসভা দেড় শ’ বছরের পুরোন। মাত্র তিন বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৬০ সালে পৌর এলাকার আয়তন দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার। এরপর ২ হাজার ৪ সালে আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে লোক সংখ্যা অন্তত সাড়ে পাঁচ লাখ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস ৭ হাজার ৭শ’৬৪জন। বাসাবাড়ির সংখ্যা প্রায় ৬৩ হাজার। যার বড় একটি অংশ বহুতল। চিহ্নিত ১৪টি সমস্যার মধ্যে রয়েছে : কঠিন বর্জ ব্যবস্থাপনা। যেখানে বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে। এসেছে ড্রেনেজ সমস্যা। ২০০৪ সালে বগুড়ার প্রধান সড়ক চওড়া করার সময় ড্রেনেজ ব্যবস্থায় গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই নগরী জলাবদ্ধতায় পরিণত হয়। আবার ড্রেন ভরে গেলে তার ময়লা তুলে রাস্তার ওপর রাখা হয় কয়েকদিন ধরে। আবর্জনা সংগ্রহের গাড়িগুলো সময়মতো আসে না। কখনও দিনের বেলা সাধারণের চলাচল বিঘœ করে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে। এ অবস্থায় পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে নগরীর হাজারও মানুষ। অন্যতম একটি সমস্যাপ্রধান সড়কগুলোতে নিত্যদিনের যানজট। যা নগরীকে গতিহীন করে রাখে। হালে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও ব্যাটারি চালিত ইজি বাইকের (অটো বা টোটো) সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছে। এর ওপর উপদ্রব হয়েছে ব্যাটারি চালিত রিক্সার। নগরীরর প্রধান সড়কগুলোর দুই ধারে এইসব যানবাহন (বিশেষ করে সিএনজি চালিত অটো রিক্সা ও ইজি বাইক) বিচ্ছিন্নভাবে দাঁড়িয়ে সড়ককে সঙ্কুচিত করে তোলে। ফুটপাথের ভাসমান দোকানগুলো অনেকটা রাস্তা দখল করে রাখে। রাস্তার ধারের বেশিরভাগ দোকান তাদের পণ্য ফুটপাথের ওপর রাখে। ফলে বিঘœ ঘটে জনচলাচলে। কাঁঠালতলায় একটি হোটেল রাস্তার ওপরে বড় গ্যাস সিলিন্ডার রেখে গ্যাসের চুলায় সকালের ও বিকেলের নাস্তা রান্না করে। যে কোন সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের শঙ্কা থাকার পরও তা বন্ধ হয়নি। নগরীর মধ্যে সড়ক দ্বীপের গাছগাছালির শাখাপ্রশাখা সময় মতো ছেটে ফেলা হয় না। এ অবস্থায় দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়ে যায়। নগরীর ফুটপাথে যত দোকান তার প্রায় সবই অবৈধভাবে বিদ্যুত সংযোগ নিয়েছে। ফিডার সড়কগুলোতে স্ট্রিট লাইট না থাকায় এলাকা অন্ধকারে ডুবে থাকে। জলেশ্বরীতলা এলাকার শহীদ জব্বার সড়কের ধারে বিচ্ছিন্নভাবে কোচিং সেন্টার গড়ে ওঠায় প্রায় দিনভর জনচলাচলে বিঘœ ঘটে। বিল্ডিং কোড না মেনে বহুতল ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে নগরীতে। এমনও অভিযোগ পাওয়া যায়, পৌরসভার এক শ্রেণীর কর্মচারী অট্টালিকার নকল নকশা তৈরি করে দিচ্ছে। যা দিয়ে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। এর কোন তদারকি হয় না। এইসব ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের কোন ব্যবস্থা থাকছে না। নগরীতে পার্কিং স্পট কম থাকায় মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেলগুলো প্রধান সড়কের ধারে পার্ক করে বড় জায়গা দখল করে রাখে। বগুড়া নগরীতে কার পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট জায়গার বড় অভাব। এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সুফিয়া নাজিম বলেন, বর্তমানে ৬টি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। এর মধ্যে বর্জ অপসারণ ও ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে। গলাপট্টি থেকে সাতমাথা এলাকা, ফতেহ আলী বাজার রোড, ফলপট্টি থেকে কাঁঠালতলা, ঠনঠনিয়া থেকে দত্তবাড়ি পর্যন্ত যানজট সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পৌর মেয়র মাহবুবর রহমান বলেন, নগরীর অভ্যন্তরে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা স্ট্যান্ডগুলো স্থানান্তরের পূর্বের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। দত্তবাড়ির স্ট্যান্ডকে ফুলবাড়ি এলাকায়, প্রেসক্লাবের সামনের সিএনজি চালিত অটোরিক্সা স্ট্যান্ডকে স্টেশনের ধারে, ইয়াকুবিয়া স্কুলের সামনের স্ট্যান্ডকে ঠনঠনিয়া বাস টার্মিনালের কাছে, পার্ক রোডের স্ট্যান্ডকে কারমাইকেল রোডের ধারে, চেলোপাড়া স্ট্যান্ডকে পূর্ব দিকে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিষয়টি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনকে জানানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হলে নাগরিক ভোগান্তি অনেক কমে যাবে।
×