ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জে ‘নানীর হোটেল’

প্রকাশিত: ০৮:০৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 কিশোরগঞ্জে ‘নানীর হোটেল’

কিশোরগঞ্জ শহরতলিতে ‘নানীর হোটেল’ নামে এক সফল নারী উদ্যোক্তার ভোজনালয় জমে উঠেছে গরুর মাংশের সুস্বাদু কালো ভুনার টানে। টানাটানির সংসার সামলাতে মাত্র ৮শ’ টাকা দিয়ে ৫ বছর আগে এখানে শুরু করা একটি ছোট্ট খাবারের দোকান থেকে এখন জমজমাট হোটেল। দৈনিক বিক্রি হয় ২০ হাজার টাকার খাবার। খেতে আসেন প্রশাসনের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ। হোটেলের মালিক রিনা বেগম। তাকেই সবাই ‘নানী’ বলে ডাকে। আর এর থেকেই তিনি হোটেলটিরও নাম দিয়েছেন ‘নানীর হোটেল’। দোকানের দেয়াল আর পিলারে প্লাস্টিক পেইন্ট দিয়ে নামটি লেখা রয়েছে। শহরতলির হয়বতনগর-নগুয়া বটতলা এলাকায় ওই হোটেলে গিয়ে দেখা গেছে, হোটেলের প্রতিটি টেবিল ভর্তি ভোজন রসিক ভোক্তার দল। হোটেলে ৭ কর্মচারী থাকলেও ভোক্তাদের উৎকৃষ্ট সেবা দিতে রিনা নিজেই তরকারি নিয়ে টেবিলে টেবিলে যাচ্ছেন। গ্লাসে পানি ঢেলে দিচ্ছেন। জিজ্ঞেস করছেন রান্না কেমন হয়েছে, আরও কিছু লাগবে কিনা ইত্যাদি। ভোক্তার বেশি চাপ পড়ে গেলে রিনা বেগম এভাবেই ক্যাশ ছেড়ে নিজেই নেমে পড়েন খাবার পরিবেশনে। এক ফাঁকে আলাপকালে নানী নামে পরিচিত রিনা বেগম জানান, তার বাসা আধা কিলোমিটার দূরে হয়বতনগর সাহেব বাড়ির কাছে। ঘরে বৃদ্ধ স্বামী সিরাজ মিয়া (৭৫) রয়েছেন। রিনার সাথেই সিরাজ মিয়ার প্রথম বিয়ে। বয়সের বেশ ব্যবধান নিয়েই তাঁদের বিয়ে হয়েছে। তাদের সংসারে দুই ছেলে রয়েছে, মেয়ে নেই। রিনা বেগম সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হোটেলে বসেন। আর রাতে হোটেলে বসেন তার বড় ছেলে মনির হোসেন। ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে। গরিবের সংসার। চলছিল ‘নুন আনতে পানতা ফুরোয়’ অবস্থায়। স্বামীর বয়স হয়েছে। গতর খাটিয়ে কিছু করার সামর্থ্য নেই। তাই সংসারের অন্যান্য চাহিদা মিটিয়ে স্বামী আর সন্তানদের মুখের গ্রাস রিনাকেই যোগান দিতে হবে। কিছু একটা করতে হবে। মাথায় এলো খাবারের দোকান করার। কারণ খাবারের চাহিদা আদিকাল থেকে ছিল, অনন্ত ভবিষ্যতেও থাকবে। মাত্র ৮শ’ টাকা পুঁজি নিয়ে ৫ বছর আগে বর্তমান নানীর হোটেলের পাশেই খাবারের ছোট্ট একটি দোকান দিয়েছিলেন বলে রিনা বেগম জানান। কখনো তিনি হাল ছাড়েননি, লেগে ছিলেন। আস্তে আস্তে পুঁজি জমাতে থাকলেন আর দোকানের পরিধি বাড়াতে থাকলেন। এখন তার হোটেল শহরের অনেক নামী-দামী লোকদের কাছে একটি লোভনীয় খাবারের দোকান। বিশেষ করে গরুর মাংসের কালো ভুনার জুড়ি নেই। এছাড়া মাছ, সবজি, ডালসহ অন্যান্য পদ তো আছেই। কফিরও ব্যবস্থা রয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্যও আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকে। হোটেলের আয় দিয়ে তাদের সংসার এখন বেশ ভালই চলছে। দৈনিক ২০ হাজার টাকার খাবার বিক্রি হয়। মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খাবার সাপ্লাইয়ের অর্ডারও আসে। হোটেলটি কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুর সড়কের ওপরে হবার কারণেও এর ব্যবসার সাফল্য পেতে সহজ হয়েছে। বর্তমান হোটেলটি আধাপাকা টিনশেড ভবনে। এখন সময় এসেছে হোটেলটি আরও বড় করার, আকর্ষণীয় করার। পাশেই একটি বড় পাকা ভবন হচ্ছে। সেটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে হোটেলটি সেখানে স্থানান্তর করবেন। তখন পরিবেশ আরো ভাল হবে, আকর্ষণীয় হবে। ফলে ব্যবসাও আরও ভাল হবে বলে নানী রিনা বেগমের প্রত্যাশা। লেখাপড়া না জানা একজন নিম্নবিত্ত অবহেলিত রিনা বেগম যেন এখন অনেকের কাছেই অনুকরণীয় এক নারী উদ্যোক্তা। -মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ থেকে
×