ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি

প্রকাশিত: ০৮:০৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি

কালের বিবর্তনে দেশের গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এক কালের কৃষক-কিষানির ধান ভাঙ্গার প্রধান যন্ত্র ঢেঁকি। অতীতে গ্রাম বাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে চাল তৈরির জন্য কিংবা চালের আটা তৈরির জন্য একমাত্র ঢেঁকিই ছিল ভরসা। বর্তমানে ডিজিটাল যুগে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির কাছে ম্লান হয়ে গেছে আগের দিনের সেই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকির ব্যবহার। ৮০-৯০ দশকে জেলার গ্রাম এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের সারা বছরের ভাতের ঢেঁকিতে ছেঁটে প্রস্তুত করত। ভাদ্র মাসে আউস ও অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে রোপা আমন ধান ঘরে উঠলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই নানা রকম পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। আর এজন্য বাড়িতে বাড়িতে আটা কোটার ধুম পড়ে যেত। আমন ধান কাটা শেষে পৌষ মাসে ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গার শব্দে অনেকের রাতের ঘুম নষ্ট হতো। আবার ভোর বেলা ঢেঁকির শব্দে অনেকের ঘুম ভাঙত। ধান ভেঙ্গে চাল ছাঁটার জন্য মহিলারা আবার কখনও মহিলার পাশাপাশি পুরুষরাও ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধান ভাংতো। দু’জন মহিলা সারাক্ষণ ঢেঁকিতে পাড় দিত আর একজন ধানগুলোকে উনুতে (ভাঙ্গার গর্তে) এগিয়ে দিত। এভাবেই সারা রাত ধরে গ্রামের গৃহবধূরা তাদের সারা বছরের চাল ঢেঁকিতে ছেঁটে মাটির কুঠি কিংবা বাঁশের তৈরি ডোলে ভরে সংরক্ষণ করে রাখত। সে সময় ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত খেয়ে অধিকাংশ মানুষই যেমন তৃপ্তি পেত, তেমনি সুস্থ জীবনযাপন করত। বর্তমানে আধুনিক যুগে চাকচিক্যের আধিক্যে হারিয়ে গেছে সেই ঢেঁকি ছাঁটা চাল। এখন পাড়ায় পাড়ায় ধান ভাঙ্গা হাসকিং মিল এমনকি ভ্রাম্যমাণ মিল প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ভেঙে দেয়ায় ঝকঝকে চাল, খাটুনি কম ও সময় সাশ্রয় হওয়ায় সেকেলের ঢেঁকি আর কোথাও চোখে পড়ে না। সাপাহার উপজেলার কোঁচকুড়লিয়া গোয়ালপাড়া গ্রামের জনৈক বকুল হোসেনের উঠানে একটি ঢেঁকি পাতানো দেখতে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ঢেঁকির মালিক বকুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, মেশিনের তৈরি আটা দিয়ে সকল প্রকার খাবার বিশেষ করে পিঠা তৈরি হয় না। তাই অনেক সময় অনেক কিছু খাবার জিনিস তৈরি করতে হলে এখনও ঢেঁকির তৈরি আটা লাগে। তাই কালের সাক্ষী হিসেবে সে তাদের উঠানে ঢেঁকিটি এখনও পেতে রেখেছেন। বছরে অন্তত দু’এক বার তারা ও পাড়ার অনেকেই এই ঢেঁকিতে এসে আটা তৈরি করে থাকে। তবে আগেকার দিনের মতো ঢেঁকির আর কদর নেই। কোন দিন হয়ত সেও ঢেঁকিটি তুলে ফেলবেন। বর্তমান যুগে কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকির হয়তো আর দেখাই মিলবে না। আর কিছুদিন পরে নতুন প্রজন্ম হয়ত ঢেঁকির কথা শুনলে সেটি কি জিনিস, তা বুঝানো মুশকিল হয়ে পড়বে। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×