ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কলাপাড়ার সেই শিশুটি এখন সুস্থ সবল

প্রকাশিত: ০৮:০৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 কলাপাড়ার সেই শিশুটি এখন সুস্থ সবল

এখন আর পাঁজরের হাড় গোনা তো দূরের কথা দেখাও যায় না। বাইরে থেকে মনে হয় সুস্থ এক নিরোগ শিশু। খেলছে, হাঁটছে, হাসিখুশি মুখাবয়ব। কিশোরী মা কারিমা বুকে টেনে নিয়েও যেন পূর্ণতা পায়। উচ্ছ্বল হাসিখুশি মা ও ছোট্ট রহমান। ২০১৬ সালে অক্টোবরে ধুলাসারের চরচাপলী গ্রামে কারিমাদের নিত্য অভাবের সংসারে কিশোরী কারিমার এই কোলের শিশুটির শরীরে ছিল না দেখতে পারার মতো রোগাক্লিষ্ট শারীরিক অবয়ব। পাঁজরের হাড় গোনা যেত দূর থেকে। জেগে ছিল শরীরের শিরা উপশিরাগুলো গাছের শেকড়ের মতো। সবসময় কান্না করত। কারিমার স্বামী রুহুল আমিন ছিল উদভ্রান্ত। ছন্নছাড়া। কখনও জেলের কাম করত। নিত্য অভাবের সংসারে কোন ধরনের যোগান দিত না। কোনকিছু বোঝার কিংবা সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন সক্ষমতার বয়স ছিল না কারিমার। সেই বয়সে স্বামী-সংসার। তারপর সন্তান। রোগাক্লিষ্ট এই সন্তানের বেঁচে থাকার মতো ভরসা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিল কিশোরী মা কারিমা। কারিমার মা মাহিনুর অনেক সন্তানের মা হওয়ায় তাঁদের বিপদাপন্ন সংসারের বোঝা ছিল ওই শিশু রহমান। টাইফয়েড, নিউমোনিয়াসহ ঠা-াজনিত নানা রোগে জাপটে ধরেছিল। এক কথায় যমের ঘরের দোরগোড়ায়; এমন শঙ্কায় ছিল কারিমা। মা হয়ে কারিমার এই সন্তানের বুকের দুধ খাওয়ানোর সক্ষমতাও ছিল না। কারণ সেও ছিল ভয়াবহ অপুষ্টির শিকার। এ বিষয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। স্থানীয় যুবলীগ নেতা মশিউর রহমান বিভিন্ন ধরনের তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করেন গণমাধ্যমকর্মীসহ ওই পরিবারকে। বিষয়টি সমাজসেবা অধিদফতরের পটুয়াখালীর উপ-পরিচালক শীলা রানী দাসের নজরে আসে। তিনি তাৎক্ষণিক ওই পরিবারকে দশ হাজার টাকার সরকারী অনুদান দেয়ার ব্যবস্থা করেন। যা দিয়ে রোগাক্লিষ্ট শিশু তিন মাস বয়সী রহমানের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। এরপরে আজ দেড় বছরের রহমান। যেন তরতাজা রোগমুক্ত এক সবল শিশু। মায়ের কোলে খিলখিল করে হাসছে। যেন কারিমার কাছে তার সেই রহমান এক নতুন রহমান। এখন বয়স ১৮ মাস। তাকে নিয়ে এখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করছে কারিমা। স্বামী রুহুল আমিনও অনেক সংযত। কোন অভিব্যক্তি প্রকাশের মতো সচেতন নয় কারিমা, শুধু এইটুকু বললো, ‘আমনেরা যা করলেন হেইডা কেউ আর করে নায়। তয় এহনও খাইতে কষ্ট অয়।’ তবে এই হতদরিদ্র কারিমার ভাগ্যে জোটেনি প্রধানমন্ত্রীর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কোন সুযোগ-সুবিধা। -মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে
×