ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন সাজে গোপালপুরের ২০১ গম্বুজ মসজিদ

প্রকাশিত: ০৮:০৪, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নতুন সাজে গোপালপুরের ২০১ গম্বুজ মসজিদ

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ২০১ গম্বুজের মসজিদ নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে। মসজিদের মিনারের উচ্চতা ৪৫১ ফুট (১৩৮ মিটার), যা ৫৭ তলা ভবনের সমান। গম্বুজ থাকছে ২০১টি। আর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত বাংলাদেশে নির্মাণ করা হচ্ছে এমনই এক মসজিদ। সবকিছু ঠিকমতো শেষ হলে এটি হবে বিশ্বের দ্বিতীয় উঁচু মিনারের মসজিদ। জানা যায়, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে ঝিনাই নদীর তীরে অবস্থিত ২০১ গম্বুজ মসজিদ সুদৃশ্য এ মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে বিগত ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি। মসজিদের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের মা রিজিয়া খাতুন। চলতি ২০১৮ সালের শেষ দিকে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং আগামী ২০১৯ সালের প্রথম দিকে পবিত্র কাবা শরীফের ইমামের ইমামতির মাধ্যমে মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি হেলিপ্যাড। ডিজাইন ও কারুকার্যের দিক থেকে মসজিদটি একটি ভিন্ন সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে গড়ে উঠছে। মসজিদের টাইলসসহ ফিটিংস এর যাবতীয় শোভা বর্ধনের শৌখিন কারুকার্য খচিত পাথরসমূহ বিশ্বের কয়েকটি দেশ ঘুরে সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্রুতগতিতে মসজিদের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। শৈল্পিক স্থাপনা হিসেবে এ মসজিদটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের প্রতীক হবে। নির্মাণাধীন এ মসজিদ বাংলাদেশকে বিশে^ নতুনভাবে পরিচিত করে তুলবে। এখানে দেশী-বিদেশী পর্যটক, ওলি-আউলিয়া ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আগমন ঘটবে বলে মনে করছেন এর উদ্যোক্তারা। বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনারটি মরক্কোর কাসাব্লাংকায় দ্বিতীয় হাসান মসজিদে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৬৮৯ ফুট (২১০ মিটার), যা ৬০ তলা ভবনের সমান। তবে এটি ইটের তৈরি নয়। ভারতের দিল্লীর কুতুব মিনার বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ইটের তৈরি মিনার। এটির উচ্চতা ৭৩ মিটার বা ২৪০ ফুট। ৩৭৯টি সিঁড়ি রয়েছে এতে। মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক হুমায়ুন কবির জানান, নির্মাণাধীন অবস্থাতেই এই ২০১ গম্বুজ মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় শুরু হয়েছে। প্রায় ১৫ বিঘা জমির ওপর এ মসজিদ কমপ্লেক্সে থাকবে অত্যাধুনিক সব সুবিধা। মিহরাবের দুই পাশে লাশ রাখার জন্য হিমাগার তৈরি করা হবে। পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার পরও মসজিদটিতে শতাধিক ফ্যান লাগানো হবে। মসজিদের ছাদের মাঝখানে থাকবে ৮১ ফুট উচ্চতার একটি বড় গম্বুজ, এর চারদিকে থাকবে ১৭ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ২০০টি গম্বুজ। মূল মসজিদের চার কোণে থাকছে ১০১ ফুট উচ্চতার চারটি মিনার। পাশাপাশি থাকবে ৮১ ফুট উচ্চতার আরও চারটি মিনার। ১৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪৪ ফুট প্রস্থের দ্বিতল মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে পারবেন একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি। দেয়ালের টাইলসে অঙ্কিত থাকবে ৩০ পারা পবিত্র কোরআন শরীফ। যে কেউ বসে বা দাঁড়িয়ে মসজিদের দেয়ালের কোরআন শরীফ পড়তে পারবেন। আর মসজিদের প্রধান দরজা তৈরিতে ব্যবহার করা হবে ৫০ মণ পিতল। আজান প্রচারের জন্য মসজিদের দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হবে উঁচু মিনারটি। উচ্চতার হিসেবে মিনারটি হবে প্রায় ৫৭ তলার সমান অর্থাৎ ৪৫১ ফুট। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে পৃথক দুটি পাঁচতলা ভবন। সেখানে থাকবে দুস্থ নারীদের জন্য বিনামূল্যের হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। মসজিদের নির্মাতা বাংলাদেশ ব্যাংক এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের (সিবিএ) সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি দেশের প্রয়োজনে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, মানবতার কল্যাণে তরুণ বয়স থেকেই সাধ্যমতো কাজ করছি। দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে সততার সঙ্গে জনতা ব্যাংক লিমিটেডের নির্বাচিত সিবিএ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার নতুন করে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। বাকি জীবন মহান আল্লাহতায়ালার সেবায় ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। -ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল থেকে
×