ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ মিরপুর টেস্টে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। হার এড়ানোর চ্যালেঞ্জ। এত বেশি টার্গেট এরই মধ্যে হয়ে গেছে যে, টার্গেট অতিক্রম করতে বাংলাদেশের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে। চ্যালেঞ্জটা ব্যাটসম্যানদেরই নিতে হবে। দ্বিতীয়দিন শেষেই শ্রীলঙ্কা ৩১২ রানে এগিয়ে গেছে। এই এগিয়ে যাওয়াই এখন পর্যন্ত টার্গেট দাঁড় হয়ে গেছে। আজ দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের তৃতীয় দিনে শ্রীলঙ্কা যত বেশি রান স্কোরবোর্ডে জমা করতে থাকবে। টার্গেট ততই বাড়তে থাকবে। শুক্রবার বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যানই শুধু উইকেটে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। তিনি মেহেদী হাসান মিরাজ। আর কোন ব্যাটসম্যানই সেই যোগ্যতা দেখাতে পারলেন না। আর তাতে করে ১১০ রানের বেশি করতেও পারল না বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ২২২ রান করায় শুরুতেই ১১২ রানে পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে যখন রোশেন সিলভার অপরাজিত ৫৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০০ রান করল, বাংলাদেশের সামনে জিততে ৩১২ রানের টার্গেট এখনই দাঁড় হয়ে গেল। আজ টার্গেট যত বাড়বে বাংলাদেশের হারার শঙ্কা ততই বেড়ে চলবে। হাতে সময় মিলবে অনেক। আজ মাত্র ম্যাচের তৃতীয়দিন। কিন্তু সময় থাকলে কি হবে, উইকেট যেভাবে স্পিনার আর পেসারদের দখলে আছে তাতে করে শ্রীলঙ্কার স্পিনার ও পেসারদের সামনে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা কী নিজেদের মেলে ধরতে পারবেন? প্রথম ইনিংসে যেভাবে ইনিংস ধসে গেছে সেই একই পরিস্থিতি যদি দ্বিতীয় ইনিংসেও হয়, তাহলে হারই তো বরণ করে নিতে হবে। জেতার সুযোগও থাকছে। ম্যাচে যে ফল আসবে তা নিশ্চিত। ফল এখন যে দলের পক্ষেই যাক। নিজেদের পক্ষে রেজাল্ট নিয়ে আসার সম্ভাবনা বাংলাদেশেরও আছে। এ জন্য একমাত্র কাজ হচ্ছে উইকেট আঁকড়ে থাকা। ব্যাটসম্যানরা যদি উইকেট আঁকড়ে থাকতে পারেন তাহলে উইকেট পড়বে না। আর উইকেট না পড়লে রান আসবেই। যেহেতু সময়ের কোন বাধ্যবাধকতা থাকছে না। আরও তিনদিন হাতে থাকছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা যখন অলআউট হবে তখন থেকেই বাংলাদেশের সময় শুরু হবে। সেই সময় পর্যন্ত ব্যাটসম্যানরা যদি টিকে থাকতে পারেন তাহলে জয়ও আসবে। বোলিংয়ে দুই দলেরই খবর আছে। তা প্রথমদিনেই বোঝা হয়ে যায়। ম্যাচ থেকে রেজাল্ট বের করে নিতে তাই ব্যাটিং ভাল করার বিকল্প পথ খোলা নেই। শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে কম রান করলেও সেই রানই যেন বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষে অনেক হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় ইনিংসেও শ্রীলঙ্কা যেভাবে খেলছে তাতে বাংলাদেশের সামনে বড় টার্গেটই যে পড়বে তাতো এখনই বোঝা যাচ্ছে। দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা ধীরে ধীরে খেলেছেন। উইকেট বাঁচিয়ে রেখে যতক্ষণ পারেন এগিয়ে যাওয়ার ভাবনায় খেলেছেন। তাতে সাফল্যও পেয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। প্রথম উইকেটটি ১৯ রানে পড়লেও, রাজ্জাকের বলে মেন্ডিস আউট হলেও পরের তিনটি উইকেটে যে ছোট্ট ছোট্ট জুটি হয়, সেটিই শ্রীলঙ্কাকে অনেকদূর নিয়ে যায়। দ্বিতীয় উইকেটে দিমুথ করুনারতেœ-ধনঞ্জয়া ডি সিলভা মিলে ৩৪ রানের, তৃতীয় উইকেটে করুনারতেœ-দানুশকা গুনাথিলাকা মিলে ২৭ রানের, পঞ্চম উইকেটে দিনেশ চান্দিমাল-রোশেন সিলভা মিলে ৫১ রানের জুটি গড়েন। তাতেই স্কোরবোর্ডে রান ১৪৩ জমা হয়ে যায়। একেকজন ব্যাটসম্যান ব্যাট করতে এসেছেন, স্কোরবোর্ডে খানিক রান যোগ করে গেছেন। দেখতে দেখতে ২৫০ রানের ওপরে টার্গেট তখনই দাঁড় হয়ে যায়। দিনের শেষদিকে ৮ রানে ৩টি উইকেট তুলে নেয়া গেছে। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটে ষষ্ঠ উইকেটে সিলভা-নিরোশান ডিকভেলা মিলে যে ২৭ রানের একটি ছোট্ট জুটি গড়েছেন তাতেই টার্গেট ৩০০ রানের কাছাকাছি চলে যায়। এক রোশেন সিলভা যে অপরাজিত ৫৮ রানের ইনিংস খেলে ফেলতে পেরেছেন, তাতেই শ্রীলঙ্কা ৩০০ রানের বেশি টার্গেট বাংলাদেশের সামনে এখনই দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। আজ তৃতীয়দিন সিলভার সঙ্গে নামবেন লাকমাল (৭)। যিনি বোলার হয়েও সিলভার সঙ্গে উইকেট আঁকড়ে থাকা সম্ভব তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। নবম উইকেটে ২২ রানের জুটিও গড়েছেন। এ দুইজনের পর থাকছেন শুধু হেরাথ। আর খুব বেশিদূর যে শ্রীলঙ্কার না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি তা বুঝা যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা অলআউট হওয়ার পরই শুরু হয়ে যাবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের চ্যালেঞ্জও। যে চ্যালেঞ্জে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে ব্যর্থতাই মিলেছে। প্রথমদিন ৪ উইকেট হারিয়ে ৫৬ রান করে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ২২২ রান করায় ১৬৬ রানে পিছিয়ে ছিল। লিটন কুমার দাস ২৪ রানে ও মেহেদী হাসান মিরাজ ৫ রানে ব্যাট করছিলেন। দ্বিতীয়দিনে দুইজন মিলে শুরুটাও ভালই করেছিলেন। কিন্তু লিটন খুব বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। দ্বিতীয়দিন যখন স্কোরবোর্ডে আর ১৭ রান যোগ হয় লিটন (২৫) আউট হয়ে যান। এরপর মিরাজ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বল যেভাবে ঘুরতে থাকে তাতে উইকেটে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়ে। ব্যাটসম্যানরা তো সবসময় ব্যাটিংবান্ধব উইকেট পাবেন না। কখনও এমন কঠিন উইকেটেও খেলতে হবে। তখন নিজেকে মেলে ধরে যোগ্যতাও প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা প্রথম ইনিংসে তা করতে ব্যর্থ হন। চাপ আগে থেকেই ছিল। প্রথমদিন ৪ উইকেট পড়ে যাওয়াতেই বাকি ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ তৈরি হয়ে যায়। সেই চাপ ব্যাটসম্যানরা দ্বিতীয়দিনে সামলাতেই পারলেন না। মিরাজ-মাহমুদুল্লাহ জুটি যখন ৩৪ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে দলের ১০৭ রান হয় তখন অভিষিক্ত স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়ার ঘূর্ণি বলে বোল্ড হয়ে যান মাহমুদুল্লাহ (১৭)। এরপর তো যেন উইকেট পড়ার মিছিল শুরু হয়। ১০৭ থেকে ১১০; এই ৪ রানের মধ্যে ৫ উইকেটের পতন ঘটে যায়। যেখানে ১০৬ রান পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫ উইকেট ছিল। সেখানে ৪ রানেই পরের ৫ উইকেট খতম। আকিলা এক ওভারেই মাহমুদুল্লাহ, দ্বিতীয় টেস্টে ফেরা সাব্বিরকে আউট করে দেন। নিজের পরের ওভারে রাজ্জাককেও সাজঘরে ফেরান। ১১০ রানের সময় ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে তাইজুল ইসলাম রানআউট হওয়ার পর যখন পরের বলেই মুস্তাফিজুর রহমানকে এলবিডব্লিউ করে দেন দিলরুয়ান পেরেরা। তখন বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায়। সকালের সেশনটিও খেলতে পারেননি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। ২৪ ওভারও খেলতে পারেননি। মিরাজ একা ব্যাট হাতে ৩৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। প্রথমদিন নামার পর থেকেই উইকেট আঁকড়ে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তিনি যে রান করেন তা এই টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর হয়ে যায়। তাতেই বোঝা যাচ্ছে বোলিংবান্ধব উইকেটে কি বেহাল দশা বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানদের। বাংলাদেশ যখন অল্পতেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা যেন তখনই ম্যাচে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে। শ্রীলঙ্কার দখলে চলে যায় ম্যাচ। টার্গেট এত বেশি দাঁড় হয়ে গেছে যে এখন শ্রীলঙ্কার হাতেই আছে ম্যাচ। তবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা যদি চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন তাহলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সঙ্গে জয়ও অসম্ভব কিছু নয়। সেই চ্যালেঞ্জের মুখেই এখন পড়ে গেছে বাংলাদেশ।
×