ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মূল কাজ শুরুর আগে সমীক্ষা প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মূল কাজ শুরুর আগে সমীক্ষা প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ছে

আনোয়ার রোজেন ॥ মূল প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ছে প্রস্তুতিমূলক প্রকল্পের। বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এজন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও সম্ভাবতা সমীক্ষা (ফিজিবিলিটি স্টাডি) পরিচালনায় ২০১৬ সালের শুরুতে তিন বছর মেয়াদী প্রকল্প নেয় বিদ্যুত বিভাগ। শেষ বছরে এসে প্রকল্পের কাজ অর্ধেক সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারশেন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) আরও এক বছর সময় বাড়াতে চাইছে। একই সঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণ, পূর্ত কাজ ও পরামর্শক ব্যয় বাবদ আরও ২১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। তবে এসব খাতে ব্যয় বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশন বলছে, প্রকল্পের বিভিন্ন কম্পোনেন্টের, বিশেষ করে পরামর্শক ব্যয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। পরামর্শক নিয়োগের পর ৭ মাসে খরচ হয়েছে মাত্র ২৭ লাখ টাকা। অথচ প্রকল্পের মূল প্রস্তাবে পরামর্শ সেবার জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিপিজিসিবিএলে এ অস্বাভাবিক পরামর্শক ব্যয়ের চাহিদা ছেঁটে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ। সংশোধিত ডিপিপিতে পরামর্শক ব্যয় নামিয়ে এনেছে চার কোটি ৩৩ লাখ টাকায়। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় এ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ, রাস্তার ড্রইং ও ডিজাইন প্রণয়ন ও এজন্য পরামর্শ সেবা গ্রহণের বিষয়টি মূল প্রকল্পে ছিল না। সভার জন্য তৈরি কার্যপত্রে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, এপ্রিল ২০১৭ সাল হতে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে এবং অক্টোবর ২০১৭ পর্যন্ত ১৮ জন-মাস পরামর্শ সেবার জন্য ২৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু পরামর্শ সেবা নিয়োগ ও ব্যয়ের আগে পরিকল্পনা কমিশনের নীতিগত সম্মতি নেয়া হয়নি। তাছাড়া এ্যাপ্রোচ রোড তৈরির বিষয়টি এতটা টেকনিক্যাল নয় যে, এজন্য এত বেশি সংখ্যক পরামর্শক প্রয়োজন হবে। কিন্তু সংশোধিত ডিপিপিতে ১২৬ জন-মাস পরামর্শকের সংস্থান ও এক কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দসহ অঙ্গটি নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার কোন প্রয়োজন নেই বলে পরিকল্পনা কমিশন মনে করে। তাই সংশোধিত প্রস্তাবে এটি অনুমোদন দেয়ার সুযোগ নেই। বিদ্যমান পরিপত্র অনুযায়ী অঙ্গটি ডিপিপি হতে বাদ দিয়ে সীমিত আকারে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে আলাদাভাবে এ কার্যক্রম করা যেতে পারে। ডিপিপিতে পরামর্শক ব্যয় ৩০ কোটি ১৮ লাখ টাকার সংস্থান ছিল, সংশোধিত প্রস্তাবে এটি ২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা হ্রাস করে চার কোটি ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতের ব্যয় কমার কারণ এবং মূল ডিপিপিতে কেন এত বেশি খরচ ধরা হয়েছিল তা সভাকে অবহিত করা এবং এ অঙ্গের বাস্তব অগ্রগতি তুলে ধরার কথা বলা হয়। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম-প্রধান (শিল্প ও শক্তি বিভাগ) কাজী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রকল্পের পরামর্শক সেবা বাবদ মূল ডিপিপিতে ৩০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এটা কমিয়ে চার কোটি ৩৩ লাখে নামিয়ে আনা হয়েছে। আমরা সব সময় চেষ্টা করি, পরামর্শক সেবা যত কমানো যায়। শুধু পরামর্শ সেবা খাত নয়, আমরা সব সময় অন্যান্য খাতের ব্যয়ও যৌক্তিকভাবে কমানোর চেষ্টা করি। তবে অধিকাংশ প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেশি হয়ে থাকে। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পরামর্শক ব্যয়ে অতিরিক্ত খরচ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে পরামর্শক ব্যয় কমানোরও নির্দেশ দেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে বুধবার সিপিজিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেমের মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তবে সারাদিনই নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এদিকে প্রকল্পটির পরামর্শক খাতে ব্যয় কমলেও বাড়ছে অন্যান্য খাতে। মূল ডিপিপিতে এক হাজার ৩৩৪ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত প্রস্তাবে আরও ৯৪ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া পুনবার্সন ও ক্ষতিপূরণ খাতে নতুন করে আরও প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল ডিপিপিতে এজন্য বরাদ্দ ছিল ৬৪ কোটি টাকা। এছাড়া পূর্ত কাজ, ভূমি উন্নয়ন, স্লোপ প্রোটেকশন ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, বিদ্যুত সরবরাহের জন্য লাইন নির্মাণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৮১৫ কোটি ৮৪ কোটি টাকা। সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে এক হাজার ২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে ৯৮৭ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হবে ৩৯ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে নেয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। মূল প্রকল্পে সিঙ্গাপুরের প্রায় ১০০ কোটি ডলার বা আট হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের কথা রয়েছে। এজন্য প্রস্তুতিমূলক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এক বছর সময় বাড়িয়ে মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর।
×