ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টেকসই উন্নয়নের ভাবনা ও দুর্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

টেকসই উন্নয়নের ভাবনা ও দুর্ভাবনা

টেকসই উন্নয়নের প্রথম ধাপ মানুষকে সন্তুষ্ট রাখা। বর্তমান সরকারের প্রভূত উন্নয়নের পরও মানুষ খুশি না। কেন না? এর মূল কারণ আমরা সবাই জানি। রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের বড় দল। তাদের নেতা-কর্মী বা সমর্থকের অভাব নেই। সঙ্গে এটাও মানতে হবে যে, গাছ যত বড় তার শাখা-প্রশাখা আর ঝামেলাও তত বেশি। তাই বড় গাছকে কেটে ছেঁটে পরিষ্কার করে রাখতে হয়। দলে তেমন কোন শুদ্ধি অভিযান চলে না। আর একটা কথা মানতে হবে মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে যে কোন বড় খেলোয়াড়ের আলসেমি এসে যায়। আর সে হয়ে ওঠে অমনোযোগী। একসময় তার ভেতরের বল যেমন কমে যায় তেমনি সে হারিয়ে ফেলে সামনে যাবার বা সংগ্রাম করার শক্তি। আওয়ামী লীগ এখন সে রোগে ভুগছে। কারণ, তার মাথার ওপর শেখ হাসিনার ছায়া আর প্রশাসন নির্ভরতা। কে না জানে দলের চেয়েও এখন মানুষের ভরসা শেখ হাসিনায়। এটা তাঁর অর্জন। সবাই বিশ্বাস করেন তিনি আন্তরিক। তিনি মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে দেশ চালান। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি তাঁর মতো সাহসী নেতা দেখা যায়নি। তাই বলে এটা বলা যাবে না সরকারের মন্ত্রী বা কর্তাদের ওপর মানুষ খুব বেশি ভরসা করে। বলতে গেলে ভরসার জায়গাটা এখন তলানীতে এসে ঠেকেছে। যে কারণে প্রায় বিলীনের মুখে থাকলেও বিএনপিকে ভয় পাচ্ছে, ভয় পেতে হচ্ছে তাদের। বাস্তবতা এড়িয়ে কেবল স্তাবকতা কোন সমাজে কোন দেশে কোন সরকার বা দলকে ছাড় দেয়নি। সাধারণ মানুষ বিএনপি বা খালেদা জিয়াকে চায় এমন তারা বলেনি। তাদের চাওয়া খুব সহজ। একটা দেশে ঘটনার পাশাপাশি অঘটনও থাকে। কিন্তু আমরা অঘটন বলি কোনটাকে? যেটা হঠাৎ করে ঘটে যায়। তাও দু-একবার। পরে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয় যাতে সে অপঘটনা আর ফিরতে না পারে। কিন্তু কি দেখছি আমরা? সাধারণ মানুষের প্রাণ তাদের পরিবার। তাদের ভরসা তাদের সন্তানরা। সেই নতুন প্রজন্ম আজ হুমকির মুখে। একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসে অভিভাবকের চোখের ঘুম হারাম। একবার দু’বার ঠিক আছে। কিন্তু বার বার কেন? আর সেটা ঠেকানো যাচ্ছে না কি কারণে? আমরা সচরাচর বলে থাকি বাম নেতারা সৎ। সৎ অসৎ জানি না, বেগম মতিয়া চৌধুরীর বেলায় এমন কা- ঘটেনি। কারণ নিশ্চয়ই তাঁর ব্যক্তিত্ব আর জ্বলে ওঠার সাহস। আপনি মন্ত্রী হলে আপনার সেই ব্যক্তিত্ব থাকা চাই বৈকি। ভাল মানুষ সৎ মানুষ সরল মানুষ এগুলো অভিধা। সমাজে বিরল এমন মানুষ দরকার বৈকি। কিন্তু কাজে কঠোর না হলে সরকার বা দেশচালনা করা যায়? না মন্ত্রণালয়? ডাল মে যে কালাই থাক না কেন এতদিন ধরে তার বসবাস আর তাকে বের করে আনতে না পারা এখন মানুষের অবিশ্বাস আর সন্দেহকে ভারি করছে। এগুলো জনশাসন ও সরকারের ভাবমূর্তির অন্তরায়। সঙ্গে যোগ হয়েছে রাস্তায় ভিআইপি লাইন করার ঘোষণা। এর প্রয়োজন আছে কি নেই সে তর্কে যাব না। বিদেশের মতো সমাজ না আমাদের। চাইলেও অনেক নামী মানুষ সাধারণ জীবনযাপন করতে পারেন না। এদেশে দীর্ঘ চর্চার ফলে মানুষ মানুষকে মানুষের বাইরে আর কিছু না ভাবাটা রপ্ত করে নিয়েছে। সিডনিতে আমি বহু সেলিব্রেটি এমনকি প্রাক্তন প্রিমিয়ারকেও এক রাস্তা পার হয়ে যেতে দেখে গিয়ে কথা বলেছি। সেটা আমাদের সমাজে অসম্ভব। যেখানে পেট্রোলবোমা বা যানে আগুন দেয়া উল্লাস সেখানে কেউই নিরাপদ না। কিন্তু মানুষের নাভিশ্বাসের কথাও মনে রাখতে হবে। ঢাকায় গেলে দেখি চলাচল করা যায় না। একটার বেশি কাজ করা অসম্ভব। একটা কাজও করা যায় না। মানুষ এর ভেতরে অফিস যায়। এর ভেতরেই কাজ করে। বসবাস করে। খুব স্বাভাবিকভাবে তাদের মেজাজ থাকবে সপ্তমে। তাদের জীবনের প্রতিটি দিন যেখানে যন্ত্রণার সেখানে তাদের বিপদ বাড়িয়ে কেউ আলাদা লেইনে ছুটে যাবে অনায়াসে এই ঘোষণা কি কারণে মানুষকে খুশি করবে? তাই কেন জানি মনে হবে উন্নয়নের অনেক ব্যাপার যেমন ধোয়াশা অনেক ঘোষণাই অপরিকল্পিত। অথচ আওয়ামী লীগের জন্য এখন মূল চ্যালেঞ্জ আছে অন্য জায়গায়। কৌশলে আবারও একাত্তরের ঘাতকদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে বিএনপি। যারা ফাঁসিতে গেছে তাদের ভেতর সবচেয়ে যিনি ঘৃণ্য সেই সাকাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে। এটা তাদের পরিকল্পনার অংশ। আছে জনমনে নানা বিভ্রান্তি। ওবায়দুল কাদের সক্রিয়। তিনি কর্মঠ মানুষ। কিন্তু সব বিষয়ে কথা না বলাটাও বলার চাইতে অধিক হয় মাঝে মাঝে। তাঁদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সে জায়গাটা ক্রমেই যেন হালকা হয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের জানা আছে তারা না থাকলে এদেশের সরকারের কাছে মানুষের কি চাওয়ার থাকে আর সরকার কি দেয়? সে কারণে তাদের ওপর ভরসার বিষয়টা নষ্ট হলে তাদের যত লোকসান তার বেশি কঠিন লোকসানে পড়ে মানুষ। আজ যখন উন্নয়ন হচ্ছে। সত্যি আগে বাড়ছে বাংলাদেশ কেন জানি হাতে ধরে ইস্যু তুলে দিচ্ছেন তারা। টেকসই উন্নয়ন আর শেখ হাসিনাকে সামনে রেখে এগুতে পারার কথা হলেও পথ যেন কঠিন বন্ধুর হয়ে উঠছে ক্রমশ। বাংলাদেশের মানুষ যেভাবেই হোক শান্তি চায়। খালেদা জিয়ার ইস্যু সরকারকে কতটা সাহায্য করবে বা ভোগাবে তার বিচার সময়ের হাতে। কিন্তু একটা কথা মনে রাখা দরকার শান্তির কোন বিকল্প নেই। হানাহানি মারামারি আর কতকাল নেবে মানুষ? মানুষেরও সহ্যের একটা সীমা আছে। উন্নয়ন যেভাবেই হোক যানজট চলছে। চলছে নেগেটিভ রাজনীতি। মাঠপর্যায়ে আওয়ামী নেতারা ব্যবসা-বাণিজ্য নিবে যতটা আগ্রহী নেতৃত্বের ব্যাপারে ততটাই উদাসীন। ঘর গোছানোর কাজ ফেলে রেখেছে তারা। এই ফেলে রাখাটা একদিন কাল হতে পারে। শেখ হাসিনার উদ্ভাস আর প্রজ্ঞা দিয়ে যতটা এগিয়েছে ততটা ধরে রাখতে হলে সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে। রাজনীতিকে মুক্ত করার পাশাপাশি বিএনপিকে দায়িত্বশীলতায় ফিরিয়ে আনা দরকার। সেটা তারা না করলে মানুষই তাদের পরিত্যাগ করবে। কিন্তু আমাদের সমাজ চায় মানুষের মঙ্গলের রাজনীতি। সেটা না হলে উন্নয়ন টেকসই হবে না। আজ টেকসই উন্নয়ন বা দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের পথ না খুললে একদিন এই অর্জনগুলো মুক্তিযুদ্ধের মতো বিপাকে পড়ে আসল চেহারা হারাতে পারে। সাবধানতা কি দেখব আমরা? দেখব কি ধৈর্য আর সহিষ্ণুতার রাজনীতি? উন্নয়ন বাংলাদেশকে উজ্জ্বল করুক এটাই চাওয়া আমাদের।
×