ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওষুধ খাতের উন্নয়নে শেখ হাসিনা সরকারের অবদান - অধ্যাপক আ ব ম ফারুক

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ওষুধ খাতের উন্নয়নে শেখ হাসিনা সরকারের অবদান - অধ্যাপক আ ব ম ফারুক

(গতকালের পর) আমাদের দেশে ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত অধিকাংশ কাঁচামাল আমাদেরকে আমদানি করতে হয়। ওষুধখাত ও দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এই বিদেশ-নির্ভরতা কমাতে হবে। ২০০০ সালের ‘দোহা ঘোষণা’ অনুযায়ী ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ট্রিপস্ চুক্তির পেটেন্ট ছাড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যাতে আমরা কাঁচামালে আর বিদেশনির্ভর না থাকি তার জন্য দেশে কাঁচামাল উৎপাদনের একটি পার্ক স্থাপনের জন্য ওষুধখাতের ক্রমাগত দাবির মুখে তখনকার সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু এর জন্য জমি খোঁজার নামে অনাবশ্যক সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৯ সালে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার তেতৈতলা গ্রামে এর জন্য ২০০ একর জমি চূড়ান্ত করে। ২০১৬ সালে এর জমি উন্নয়নের কাজ সমাপ্ত হয়। এই বিশাল এলাকায় ৪২টি কোম্পানিকে প্লট বরাদ্দ করা হয়। পরিবেশ দূষণের প্রশ্নে ট্যানারি শিল্পের মতো অবস্থা যাতে না হয় সেজন্য এখন এর বাধ্যতামূলক কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী মাস দুয়েক পর প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রথম ‘একটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়্যান্ট পার্ক (এপিআই পার্ক)’ উদ্বোধন করবেন। আশা করা যায়, এরপর এখান থেকে আন্তর্জাতিক মানের ঔষধি কাঁচামাল উৎপাদন শুরু হলে বিদেশ-নির্ভরতা অনেক কমে আসবে, ফিনিশড্ ড্রাগ ও এপিআই উভয়ের উৎপাদন ও রফতানি আরও বাড়বে। দেশে উৎপাদিত ও আমদানিকৃত ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ, বিতরণ, বিক্রি ও নিরাপদ ব্যবহার সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আগে কোন সরকারী সংস্থা ছিল না। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে দেশের প্রথম ‘ঔষধ প্রশাসন পরিদফতর’ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে দেশের ওষুধখাত প্রমিত নীতিমালা অনুযায়ী অগ্রসর হতে থাকে এবং সম্প্রসারিত হয়ে ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করে। ওষুধ খাতের ব্যাপক সম্প্রসারণের পাশাপাশি ব্যাপক রফতানি শুরু হওয়াতে এই পরিদফতরটিতেও বর্ধিত জনবল ও কার্যপরিধি বাড়ানোর প্রয়োজন দেখা দেয়। এ প্রেক্ষিতে যে বঙ্গবন্ধু ঔষধ প্রশাসন পরিদফতর গঠন করেছিলেন, সেটি তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে অধিদফতরে উন্নীত করেন এবং এর জন্য নতুন ৩৭০টি পদ অনুমোদন করেন। নতুন এই পদগুলোতে এখনও নিয়োগ চলছে। এছাড়া শেখ হাসিনা সরকার এই অধিদফতরটি যাতে তার মানউন্নত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ন্যাশনাল রেগুলেটরি এজেন্সি (এনআরএ)’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্সপেকশন কনভেনশন স্কিম (পিকস্) এর স্বীকৃতি পেতে পারে তার জন্য সহযোগিতা প্রদান করছে। এর ফলে আমাদের দেশের ওষুধের মান আরও উন্নত হবে এবং রফতানিতে উল্লম্ফন ঘটবে। ওষুধের মান সরকারীভাবে পরীক্ষার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি ওষুধ পরীক্ষাগার রয়েছে, যা কিছুদিন আগে পর্যন্ত উপযুক্তভাবে কার্যকর না থাকলেও বর্তমান সরকারের উদ্যোগে প্রচুর সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি অন্তর্ভুক্ত করে এগুলোর আধুনিকায়ন ও উন্নত করা হয়েছে। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এই পরীক্ষাগারগুলো অধিক মাত্রায় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে। ওষুধখাতে এ সরকারের আমলে আরেকটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো দেশে মডেল ফার্মেসির প্রচলন। এসব ওষুধের দোকানে বিদেশের মতো গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা কাজ করবে। তারা কোন নকল, ভেজাল, নিম্নমানের, মেয়াদোত্তীর্ণ, চোরাচালানকৃত ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন ওষুধ বিক্রি করবে না। প্যাকেটের গায়ে লেখা দামের চাইতে বেশি দাম রাখবে না। সবচেয়ে বড় কথা, এখান থেকে ক্রেতারা গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার বিষয়ে পরামর্শ পাবেন। এর ফলে রোগীরা ওষুধের ক্ষতি ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পাবেন। ওষুধের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য এসব ফার্মেসিতে ওষুধকে সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হবে। কেউ নিয়ম না মানলে সেই দোকানদারের মালিককে শাস্তি প্রদানেরও ব্যবস্থা রয়েছে। এটি যে জনগণের জন্য কী বিশাল উপকার তা ভুক্তভোগী রোগীরা উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত সারাদেশে ৩৪০টি মডেল ফার্মেসি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন লাখ লাখ। সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশ দেশের চাহিদা মিটিয়ে ১৪৫টি দেশে ওষুধ রফতানি করছে। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে উন্নত, উন্নয়নশীল, স্বল্পোন্নত ইত্যাদি সব ধরনের দেশ। এদের মধ্যে এমন দেশও আছে যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতা করেছিল, স্বাধীনতা লাভের পর বছরের পর বছর সর্বক্ষেত্রে অসহযোগিতা করছিল, আমাদেরকে স্বীকৃতি পর্যন্ত দিচ্ছিল না কিংবা ‘মিসকিন’ বলে আমাদের তাচ্ছিল্য করত। আজ তারাই আমাদের তৈরি ওষুধ খাচ্ছে, ‘মিসকিনদের’ দেশ থেকে ওষুধ আমদানি করছে। ওষুধের এই রফতানি আমরা অনেক গুণ বাড়িয়ে সেই অপমানের যোগ্য প্রত্যুত্তর দিতে পারি। গত বছরের ৩ হাজার কোটি টাকার ওষুধ রফতানির পরিমাণটিকে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাড়িয়ে এ বছর ৮ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারি। যদি কোন দৈবাৎ কারণে এ বছর এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নাও হয়, আমরা আগামী বছর তো তা অবশ্যই পারি। এর পরের বছর এই পরিমাণকে আরও বাড়াতে পারি। এভাবে একসময় আমরা বর্তমানের বাংলাদেশের প্রধান রফতানি খাত গার্মেন্টসকেও ছাড়িয়ে যেতে পারি। এক সময় পারি দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী খাত হতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রূপকল্প ২০২১’ এবং ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে আমরা ওষুধখাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারি। সরকার ইতোমধ্যে এপিআই পার্কে উৎপাদিত কাঁচামাল রফতানিতে ২০% ক্যাশ ইনসেনটিভ বা প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। একে অভিনন্দন। কিন্তু সেই সঙ্গে আবেদন করব যাতে তৈরি-ওষুধ রফতানিতেও একই ধরনের ইনসেনটিভ দেয়া হয়। সেই সঙ্গে দেয়া হয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আরও বিভিন্ন রকমের নন্-ক্যাশ ইনসেনটিভ। এর ফলে ওষুধখাত থেকে রফতানি আরও গতি পাবে। এভাবে বিশেষ করে ভারত ও গণচীনের সাফল্য এর উদাহরণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাঁর সরকার ওষুধখাতে এর আগেরবারেও বলিষ্ঠ অবদান রেখেছিলেন। সে সময় প্রথম তিন বছর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন প্রয়াত এ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন ইউসুফ। এর পরের প্রায় দু’বছর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন শেখ সেলিম এমপি। এই দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন যে তাঁরা সরকারের পক্ষ থেকে নানা রকম উৎসাহ ও সুবিধাদি প্রদান করায় বাংলাদেশের ওষুধখাত তখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে গিয়েছিল। ফলে প্রথমবারের মতো ওষুধের দেশজ উৎপাদন দেশের বার্ষিক অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৫% পূরণ করতে পেরেছিল। আর রফতানিকে নানাভাবে উৎসাহ দেয়াতে বাংলাদেশ থেকে তখন রফতানি হতো প্রায় পৌনে দুশো কোটি টাকার ওষুধ। অতীতের কোন সরকার এই সাফল্য দেখাতে পারেনি। আমাদের দেশের অনেক ওষুধ কোম্পানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশগুলোর কাছ থেকে আন্তর্জাতিক মানবিষয়ক সনদ অর্জন করেছে। ফলে বিদেশে সেসব কোম্পানির ওষুধ রফতানিতে সুবিধা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো আমাদের দেশে এমন কিছু কোম্পানিও আছে যারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জিএমপি গাইডলাইন না মেনে ওষুধ উৎপাদনে নিয়োজিত রয়েছে, এমনকি অত্যন্ত উচ্চ প্রযুক্তিগত সুবিধায় তৈরি করতে হয় এমন সব এন্টিবায়োটিক, এন্টিক্যান্সার ড্রাগ এবং হরমোন সমানে তৈরি করে যাচ্ছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ী যখন যে সরকার আসে সে সরকারী দলের আশ্রয়ে গিয়ে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ পায়, প্রমিত উৎপাদন সুবিধা না থাকলেও কিছু অসৎ ছোট-বড় কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ওষুধ যেনতেন প্রকারে উৎপাদনের অনুমতি পায় এবং এই অনৈতিক অনুমতির সদ্ব্যবহার করে বছরের পর বছর ধরে তারা অত্যন্ত নিম্ন মানের এন্টিবায়োটিক, এন্টিক্যান্সার ও হরমোনজাতীয় ওষুধ তৈরি করছে। নিম্ন মানের এসব ওষুধ ব্যবহারের ফলে অসহায় রোগীদের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়, এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়, ক্যান্সারের চিকিৎসার বদলে বরং বিরূপ প্রতিক্রিয়া হিসেবে নতুন নতুন ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। নকল ভেজাল নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনের সমস্যাটি অনেক পুরনো বিধায় আইনের ফাঁক-ফোকরের বিষয়গুলো অসাধু ব্যবসায়ীদের জানা। অন্য পেশার কর্মকর্তাদেরকে তারা সহজেই ফাঁকি দিতে পারে। এর ফলে অনৈতিকতার সমস্যার সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের ধূর্ততার সমস্যা যোগ হয়ে একটি অসুস্থ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সে কারণে বাংলাদেশে ২০১০ সালে নিম্নমানের প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় ঘটনায় জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্যবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ সেলিম এমপির উদ্যোগে যে বিশেষজ্ঞ পরিদর্শন দল গঠিত হয়, তারা বাংলাদেশের সবগুলো ওষুধ কারখানা অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জিএমপি গাইডলাইন অনুযায়ী পরিদর্শন করে। দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু করার সুযোগকে ভিত্তি ধরে এবং অসাধু কতিপয় কোম্পানির নানা প্রলোভনকে উপেক্ষা করে অত্যন্ত সততার সঙ্গে বিশদ পরিদর্শন রিপোর্ট প্রদান করে। দেশ থেকে নকল-ভেজাল-নিম্নমানের ওষুধ নির্মূলে শেখ সেলিমের আন্তরিক দৃঢ়তায় পুরো রিপোর্টটি স্থায়ী কমিটি কর্তৃক গৃহীত হওয়ার পর করণীয়গুলো চিহ্নিত করে এগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই স্বাস্থ্য ও ওষুধখাতের যথাযথ উন্নয়নে নানাবিধ প্রচেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছেন। তিনিও জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে সংসদীয় কমিটির সুপারিশসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরকে নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্দেশ বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে নানা ঘটনার পর শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট ও আপীল বিভাগের চূড়ান্ত নির্দেশে সরকার অবশেষে নিম্নমান, নকল ও ভেজাল ওষুধ নির্মূলে ৬২টি কোম্পানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। সরকারের গৃহীত এসব ইতিবাচক উদ্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম। দেশে ও বিদেশে এর ফলে বাংলাদেশের ওষুধখাতের ভাবমূর্তি অনেক উন্নত হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এতদিন খুব উজ্জ্বল ছিল না। তারা মনে করত বাংলাদেশ হচ্ছে অতিদরিদ্র, খরা, প্রবল বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, মঙ্গা ইত্যাদির দেশ। তারা অবাক হতো যে এই দেশ আবার ওষুধ রফতানি করে কীভাবে! কিন্তু সরকার এখন দেশে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমিয়েছে। মঙ্গা এখন ইতিহাসে স্থান নিয়েছে। কর্মসংস্থান ও আয় বাড়ানোর নানাবিধ প্রচেষ্টার ফলে মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। এসব কারণে দেশের ভাবমূর্তিও আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে খরা, অতিবৃষ্টি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি কমেনি, বরং বেড়েছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে রাজপথে পেট্রোল বোমা নামের অত্যন্ত অমানবিক ও ঘৃণ্য সন্ত্রাস। কোন নেতার সামান্যতম মানবিক বোধ থাকলে, দেশের মানুষের প্রতি সামান্যতম মায়া থাকলে এরকম নিষ্ঠুর পেট্রোল বোমার সন্ত্রাস চালিয়ে মানুষ পুড়ানো সম্ভব হতো না। সেই সঙ্গে কিছু ধর্মব্যবসায়ীর ইন্ধনে ধর্মের নামে জঙ্গীবাদ যেভাবে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে থাবা বিস্তার করছে তাতে দেশের ভাবমূর্তি আরও ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। পেট্রোল বোমার অগ্নিসন্ত্রাস আর ধর্মীয় জঙ্গীবাদ আমাদেরকে এগুতে দিচ্ছে না। এগুলোর অবসান যত দ্রুত হয় ততই আমাদের ওষুধ শিল্পের জন্য ও দেশের জন্য ভাল। সরকার ঘোষণা করেছে যে, আগামী কয়েক বছর পর দেশের ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। উপরোল্লিখিত সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তির উন্নয়ন ঘটলে সরকারের এই ডবল ডিজিট প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ করতে আমরা ওষুধখাতও অংশীদার হওয়ার সুযোগ পাব। দেশরতœ শেখ হাসিনার সরকার ওষুধখাতের উন্নয়নে এ পর্যন্ত ইতিবাচক যেসব অবদান রেখেছেন তার জন্য তাঁকে দেশের ফার্মাসিস্টদের তথা ওষুধখাতের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘ওষুধবর্ষ ২০১৮’ সফল হোক। (সমাপ্ত) লেখক : অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]
×