ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এক ছাদের নিচে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

এক ছাদের নিচে

আর দৌড়ঝাঁপ নয়। এ অফিস ও অফিস, এ টেবিল সে টেবিলে। ফাইল বগলদাবা করে শহরের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দৌড়ে বেড়ানোর ঝকমারি আর থাকছে না। দেশে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ না বাড়ার প্রধান কারণই হচ্ছে ২৭টি স্থানে ফাইল চালাচালি করে অবশেষে সম্মতি পেতে পেতে সব আশা-আকাক্সক্ষা মুখ থুবড়ে পড়ার দশা। বহুবার বলা হয়েছে, বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারণে হয়রানি বন্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু এ সবই বাতুলতা মাত্র। সরকার এই দুর্ভোগ লাঘব করতে চায় বলে প্রায়শই বলে আসছে। এবার সংসদে বিল পাস করেছে। দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের এক ছাতার নিচে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস বিল, ২০১৭‘ নতুন দিগন্ত তৈরি করতে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। এই আইন বিনিয়োগকারীদের জন্য সুসংবাদ বৈকি। একই ছাদের নিচে একই টেবিলে একই সঙ্গে ঝামেলামুক্তভাবে বিভিন্ন সেবাপ্রাপ্তি অভূতপূর্ব অবশ্যই। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, ‘কেন্দ্রীয় ওয়ানস্টপ সার্ভিস কর্তৃপক্ষ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোম্পানির নিবন্ধন, গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ, পরিবেশ ছাড়পত্র, জমির নামজারি, নির্মাণ অনুমোদন ইত্যাদি সেবা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করতে চাইলে এসব সংস্থার যে কোন একটিতে গেলেই চলবে। ২৭টি সেবার জন্য আর তাকে আলাদা সংস্থার কাছে যেতে হবে না। সরকারী কোন সংস্থার কোন কর্মচারী দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে বা সময়মতো আবেদন নিষ্পত্তি না করতে পারলে তা চাকরিতে তার অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। দেশে বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সেবা পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগও প্রবল। এসব কারণে বিশ্বব্যাংকের সহজ ব্যবসাসূচক ইনডেক্সে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৭তম। ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত হারে বিনিয়োগ পায় না। সে জন্য সরকার বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেবা দিতে বাধ্য করার জন্য নতুন আইন করল। উদ্যোক্তাদের জন্য এই ধরনের সুযোগ নিঃসন্দেহে কল্যাণকর। বিভিন্ন সময়ে দেশী- বিদেশী উদ্যোক্তারা সেবা পেতে দেরি এবং ঘুষ দিয়েও কাক্সিক্ষত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। তাদের দাবি, বাংলাদেশে ইউটিলিটি সুবিধা সহজপ্রাপ্য নয়। বরং দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। এমনও হয়েছে যে, ব্যাংকের অর্থায়নে স্থাপিত কোন কোন কারখানা গ্যাস-বিদ্যুত সংযোগ না পাওয়ার কারণে চালু করাই সম্ভব হয়নি। অথচ ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার ঠিকই তাকে বহন করতে হয়েছে। তার উৎপাদন শুরু না হলেও তথা ব্যবসা করতে না পারলেও তাকে ঠিকই ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হয়। এই অবস্থায় নয়া আইন নয়াদিগন্ত উন্মোচন করবে বৈকি। ওয়ানস্টপ সার্ভিস অবশ্য নতুন কোন বিষয় নয়, এর আগে বিলুপ্ত বিনিয়োগ বোর্ডেও এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। তখনও বলা হতো, বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ নিবন্ধনের পর বিনিয়োগ বোর্ডে বসেই অপরাপর সুবিধাগুলো পাবেন। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বিনিয়োগ বোর্ড এই সেবা দিতে সক্ষম হয়নি। তখন নতুন করে বিনিয়োগ উন্নয়নের পুরনো এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে। সে নিয়ে সংশয় থেকে যায়। সেবাদানকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ডিজিটালাইজড করা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে বিনিয়োগ উন্নয়নে তা বেশি কার্যকর হবে। আইন শুধু কেতাবে থাকলে হবে না, বাস্তবেও এর প্রয়োগ জরুরী।
×