ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভিনন্দন

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অভিনন্দন

দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের জন্য বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন মোঃ আবদুল হামিদ। মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আমাদের অভিনন্দন ও অভিবাদন। উল্লেখ্য, তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি একটানা অনেক দিন স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। দেশে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন। এ দিক দিয়ে দেখলে দেশে একটি ব্যতিক্রমী ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলোÑ এটা বলা যায়। ছাত্রজীবন থেকেই মোঃ আবদুল হামিদ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন। তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ হিসেবে। দেশের ১০টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ৭ বার কিশোরগঞ্জের একটি আসন থেকে অর্থাৎ একই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে জাতীয় সংসদে তিনি ডেপুটি স্পীকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় উপনেতা ছিলেন। মোঃ আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ওই বছরের ১৪ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকার সময় তিনি প্রথম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০ মার্চ থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ওই বছর ২৩ এপ্রিল তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। সংবিধান অনুযায়ী একজন দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি পদটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রধান। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার এই মডেলটি ব্রিটেনে চালু রয়েছে। ব্রিটেনে সব হয় রানীর নামে, কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতা প্রকৃতপক্ষে মন্ত্রিসভার বা সংসদের। বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধানমন্ত্রীও নিয়োগ করেন। সংসদ নির্বাচনে কোন দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হলে আবশ্যিকভাবে সেই দলের নেতাকেই প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে হয় বলে রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমতাটি আলঙ্কারিক। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত এবং তিনি সংবিধান ও আইন বলে তাঁর ওপর অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব সম্পাদন করেন। বাংলাদেশের আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সব শাখার আনুষ্ঠানিক প্রধান এবং বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হলেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) ধারা অনুসারে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতি সবসময় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে কার্যনির্বাহ করে থাকেন। সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হলে বা সংসদ অধিবেশন চালু না থাকলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইন তৈরি করতে পারেন এবং সেসব অধ্যাদেশ সংসদে গৃহীত আইনের মতোই কার্যকর বলে গণ্য হয়। এটা ঠিক যে, দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে ন্যায় ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দেশের জনগণ বিবেচনা করে থাকেন। তিনি রাষ্ট্রের অভিভাবক। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরিতেও ভূমিকা রেখে থাকেন। যদিও এমন নজির খুব বেশি দেখা যায় না। সুরসিক সজ্জন বিনয়ী মানুষ হিসেবে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সময়ে তিনি যশোরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষণদান করছিলেন। সংবাদটি অবগত হওয়ার পর স্বভাবসুলভভাবে তিনি রসিকতাও করেন। সর্বজনের কাছে গ্রহণীয় এমন একজন রাষ্ট্রপতি বিগত দু-তিন দশকে জাতি আর পায়নি। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির দীর্ঘায়ু ও সুস্থ-সুন্দর জীবন কামনা করি।
×