ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ইরানী বিপ্লবের ৩৯তম বার্ষিকীতে ছয় দিনব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 ইরানী বিপ্লবের ৩৯তম বার্ষিকীতে ছয় দিনব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইরানের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ইসলামী বিপ্লব। উদ্যাপিত হলো সেই বিপ্লবের ৩৯তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে শুরু হলো ছয় দিনব্যাপী ইরানী চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। ১১টি ধ্রুপদী চলচ্চিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত এ উৎসব। সেই সঙ্গে উদ্বোধনী আয়োজনে ছিল ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের স্বাধীনতা, জাতীয় সক্ষমতা ও অগ্রগতি’ শীর্ষক আলোচনা। শুক্রবার বিকেলে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ আয়োজনের সূচনা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোঃ আবদুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজি দেহনবী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম এবং বুয়েটের সাবেক শিক্ষক ও নাট্যব্যক্তিত্ব ড. ইনামুল হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। আলোচনায় বক্তারা বলেন, ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইমাম খোমেইনির প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী সংঘটিত হয়। এই বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা এবং বিজাতীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তাঁবেদার মুহাম্মদ রেজা শাহ ও তার সরকারের পতন ঘটে। ইসলামী বিপ্লবের আগে বিদেশী শক্তির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল রাজতান্ত্রিক সরকার। ইরানের জনগণের স্বার্থের চেয়ে বিদেশীদের স্বার্থই প্রাধান্য পেত এই সরকারের কাছে। তাই স্বাধীনতা ও ইরানী জাতির ভাগ্যের ওপর বহিঃশক্তির কর্তৃত্বের অবসান ঘটানো ছিল বিপ্লবের মূল উপজীব্য। এই বিপ্লবের মাধ্যমে মুক্তি, স্বাধীনতা ও ইরানের জনগণের চাওয়া পাওয়ার প্রতিফলন ঘটে। বক্তারা আরও বলেন, আট বছর ধরে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে, এক যুগের বেশি সময় আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা-অবরোধ আরোপ করে ইরানকে সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে নতজানু এবং আত্মসমর্পণে বাধ্য করার অপচেষ্টা রুখে দেয় ইরানী নেতৃত্ব। ফলে বিপ্লব পরবর্তী ৩৯ বছরে ইরানে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পারমাণবিক বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব ধরনের জ্ঞানগবেষণা এবং সুস্থ সংস্কৃতি ও শিল্পকলাচর্চা, রুচিশীল চলচ্চিত্র নির্মাণসহ জনজীবনের সবক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি অর্জিত হয়েছে। আলোচনা শেষে প্রদর্শিত হয় ইবরাহীম হাতামিকিয়া নির্মিত ইরানী চলচ্চিত্র ‘বডি গার্ড’। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য বিনা দর্শনীতে চলবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১১টা ও বিকেল ৩টার পৃথক সময়সূচীতে প্রদর্শিত হবে চলচ্চিত্র। আজ শনিবার সকালে দেখানো হবে কামাল তাবরীযী নির্মিত ছবি ‘সুইট টেস্ট অব ইমাজিনেশান’। বিকেলে প্রদর্শিত হবে ইরাম গাদেরি নির্মিত বাংলা ডাবিংকৃত চলচ্চিত্র ট্রিক (তারাজ)। তৃতীয় দিন রবিবার সকালে দেখানো হবে ভাহিদ মোসাইয়্যানের ছবি ‘ফোর্থ চাইল্ড’। বিকেলে প্রদর্শিত হবে সাইরাস আলভান্দ নির্মিত বাংলায় ডাবিংকৃত ছবি ‘ভূমিকম্প‘। সোমবার সকালে দেখানো হবে আবুল হাসান দাউদী নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ক্রেজি লুক’। বিকেলে প্রদর্শিত হবে একই কিয়োমার্স পুরআহমাদ নির্মিত ছবি ‘হোয়ার আর মাই সুজ’। মঙ্গলবার সকালে দেখানো হবে সাইয়্যেদ রেযা মীর কারিমির ছবি ‘এ কিউব অব সুগার’। বিকেলে প্রদর্শিত হবে ভাহিদ মোসাইয়্যানের ছবি ‘গোল চেহরে’। বুধবার সমাপনী দিনের সকালে দেখানো হবে গোলাম হোসাইন লুতফি নির্মিত বাংলা ডাবিংকৃত ছবি ‘চোর-পুলিশ’। বিকেলে প্রদর্শিত হবে সাইয়্যেদ রেযা মীর কারিমির ছবি ‘টুডে’। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর চিকিৎসা সহায়তায় কঞ্জুসের প্রদর্শনী ॥ নাটক মানে নিছক বিনোদন নয়, হতে পারে সমাজের প্রতি অঙ্গীকার। সেই দায়বোধ নিয়ে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর জন্য মঞ্চস্থ হলো দর্শকসমাদৃত নাটক কঞ্জুস। জটিল রোগে আক্রান্ত এই মুক্তিযোদ্ধা ভাস্করের চিকিৎসা সহায়তায় দেশের সর্বাধিক মঞ্চস্থ নাটকটির মঞ্চায়ন হলো আরেকবার। প্রখ্যাত ভাস্করের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য প্রযোজনাটির মঞ্চায়ন করে লোক নাট্যদল (বনানী)। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে পরিবেশিত হয় দর্শক নন্দিত প্রযোজনাটি। ফরাসী নাট্যকার মলিয়েরের কমেডি ‘দ্য মাইজার’ অবলম্বনে কঞ্জুস নাটকের রূপান্তর করেছেন তারিক আনাম খান। নির্দেশনা দিয়েছেন কামরুন নূর চৌধুরী। প্রযোজনাটিতে মেলে ধরা হয়েছে পুরানো ঢাকার বাসিন্দাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জীবন ও সংস্কৃতি। উর্দু ও বাংলা ভাষার মিশ্রণে বিশেষ ভাষায় কথা বলে এই জনগোষ্ঠী। তাদের জীবনধারার আবহ তৈরি করার জন্য এ নাটকে ব্যবহৃত হয়েছে পুরানো দিনের জনপ্রিয় সব হিন্দী গান। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র কঞ্জুস বা হাড়কিপ্টে হায়দার আলী খানের বয়স ষাট পেরিয়ে সত্তরের ঘরে। তার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে কাযিম আলী খান ও মেয়ে লাইলি বেগম। কোন এককালে সমুদ্র ভ্রমণে গিয়ে তার মেয়ে লাইলির সঙ্গে পরিচয় হয় বদিউজ্জামানের। প্রেমের দাম দিতে গিয়ে বদি মিয়া হায়দার আলী খানের খাস চাকর হয়ে যায়। এদিকে হায়দার আলী খানের ছেলে কাযিম আলী খান প্রেমে পড়ে পাশের বাড়ির মর্জিনা বেগমের। কাযিমের সঙ্গে মর্জিনার প্রেম যখন তুঙ্গে তখন হায়দার আলীর চোখ পড়ে মর্জিনার ওপর। গোলাপজান ঘটকের মাধ্যমে লাইলির সঙ্গে হায়দার আলীর বিয়ের কথাবার্তা এগোতে থাকে। কাযিম তার আব্বা হুজুরের এ হেন আচরণে তিক্ত-বিরক্ত হয়। কাযিম হাড়কিপ্টে হায়দার আলীর টাকা খসানোর মতলব আঁটে। এভাবেই হাসি-খুশি ও মিলনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নাটক। নাটকে হায়দার আলীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবদুল্লা আল হারুন। কাযিম চরিত্রে রূপ দিয়েছেন জাহিদুর রহমান পিপলু। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভিনসেন্ট ইউজিন গোমেজ, সামসাদ বেগম, মনিকা বিশ্বাস, জান্নাতুল মিষ্টি, বাসুদেব হালদার, আনোয়ার কায়সার, কামরুন নূর চৌধুরী, সুধাংশু নাথ প্রমুখ। দ্বিতীয় দিনের একুশের অনুষ্ঠানমালা ॥ একুশের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ো সেøাগানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে একুশের অনুষ্ঠানমালা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত দুই সপ্তাহব্যাপী এ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ছিল শুক্রবার। ছুটির দিনের বিকেল থেকে রাত অবধি চলা আয়োজনে পরিবেশিত হয় নৃত্য-গীত, কবিতা ও পথনাটক। সম্মেলক কণ্ঠে গান শোনায় আনন্দন ও ওস্তাদ মমতাজ আলী খান সঙ্গীত একাডেমির শিল্পীরা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন মিনা বড়ুয়া, নিলুফার বানু লিলি, এসএম মেজবাহ ও শ্রেয়সী রায়। কবিতার শিল্পীত উচ্চারণে দলীয় আবৃত্তি উপস্থাপন করে সাম্প্রতিক ও স্বরকল্পন আবৃত্তি চক্রের বাচিক শিল্পীরা। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন গোলাম সারোয়ার ও পলি পারভিন। শিশু সংগঠন পরিবেশনায় অংশ নেয় সপ্তকলির আসর। বৃন্দ নৃত্য পরিবেশন করে পুষ্পাঞ্জলি কলা কেন্দ্র ও নটরাজের নৃত্যশিল্পী। সব শেষে ছিল সুবচন নাট্য সংসদ ও রঙ্গপীঠ নাট্যদলের পথনাটক পরিবেশনা। আজ শনিবার তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল সাড়ে চারটায়। পরিবেশিত হবে একক ও সম্মেলক সঙ্গীত, একক আবৃত্তি, দলীয় আবৃত্তি, শিশু-কিশোর পরিবেশনা, নৃত্য এবং পথনাটক পরিবেশিত হবে। সার্জেন্ট জহুরুল হক স্মরণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ॥ নবীন প্রজন্মকে স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে কাজ করছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সেই কর্মসূচীর ধারাবাহিকতায় করার জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক স্মরণে তার পরিবারের সহায়তায় প্রতিবছর আয়োজন করে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আগারগাঁওয়ের জাদুঘর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো এ বছরের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত শিশুরা নিজ পছন্দ অনুযায়ী বিষয়ে এবং পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর কিশোর-কিশোররে ছবি আঁকার বিষয় ছিল ‘স্বাধীনতা’। দুপুরে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শিল্পী আবদুল মান্নান, মোঃ মনিরুজ্জামান, অশোক কর্মকার, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর এবং জাদুঘরের দুই ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলী ও জিয়াউদ্দিন তারিক আলী।
×