ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে সরকার॥ রিজভী

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে সরকার॥ রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাদন্ড দিয়েছে অভিযোগ করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনগণের প্রতিরোধের মুখে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পার করতেই খালেদা জিয়া ও বিএনপির বিরুদ্ধে সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তবে কোন ফর্মূলাতেই সরকার মসনদ রক্ষা করতে পারবে না। কারণ, সারা দেশের মানুষ আজ জেগে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জেল হবে, তাকে কারাগারে যেতে হবেই’ এমন কথা সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও সরকারদলীয় নেতারা ২ বছর ধরেই বলে আসছেন। রায় ঘোষণার পরও দেখা গেছে, সরকারের মন্ত্রীদের দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে আদালতের রায়ের হুবহু মিল রয়েছে। রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে সাধারণ কয়েদীর মতো রাখা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে, যা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা জানতে চাই, আমাদের চেয়ারপার্সন কেমন আছেন? তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর মধ্য দিয়ে সরকার দেশকে নরকের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রিজভী বলেন, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে কেবল আদালতকে ব্যবহার করে নয়, সমস্ত রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলায় সাজা দেয়ার ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ দেশের সাধারণ মানুষ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেয়া রায় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এছাড়া এ রায়ের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন সংগঠন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পার করতেই শেখ হাসিনা আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, যত জেল-জুলুম-নির্যাতন করুন না কেন, দেশের জনগণের কাছে আপনার স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে গেছে। কোন ফর্মূলাতেই আপনার মসনদ রক্ষা করতে পারবেন না। বিএনপি এখন আগের চেয়েও বেশি ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে ২৮ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার হয়েছে। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করছি। খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালের জনসভায় দাম্ভিকতার সঙ্গে বলেছেন- ‘কোথায় আজ খালেদা জিয়া’। তাঁর এই বক্তব্যে মনে হয়েছে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ঢুকিয়ে তিনি আত্মতৃপ্তি পেয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে উল্লাসের সুর ধ্বনিত হয়েছে। প্রতিহিংসার বিচারে সারা দেশ যখন বিঘ্ন বেদনায় মুষড়ে পড়েছে তখন প্রধানমন্ত্রীর উল্লাসে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে রায় দেয়া হয়েছে সেটি ফরমায়েশি রায়। রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী কতটা প্রতিশোধ পরায়ণ সেটা আগেও আপনারা দেখেছেন। খালেদা জিয়াকে এক কাপড়ে কিভাবে তার স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছে। কিভাবে বালুর ট্রাক দিয়ে বার বার তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। আর এ সরকারের মানসিক নির্যাতনে অকালে ঝরে গেল খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। এভাবে অনেক নির্যাতন হয়েছে এই নেত্রীর ওপরে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ মামুন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, জাসাস সহ-সভাপতি শাহরিয়ার ইসলাম প্রমুখ। খালেদার মামলার রায় সম্পর্কে বিদেশী গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ব্রিফ করেন ফখরুল ॥ খালেদা জিয়ার মামলার রায় সম্পর্কে বিদেশী গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ব্রিফ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে দলের ক’জন সিনিয়র নেতাকে সঙ্গে নিয়ে বিদেশী গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ব্রিফ করেন তিনি। পরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোসহ দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থতি তুলে ধরা হয়েছে। জানা যায়, বিএনপি মহাসচিবের ব্রিফিংয়ে অংশ নেন বিবিসি’র সিনিয়র রিপোর্টার কাদির কল্লোল, ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি’র ব্যুরো চীফ শফিকুল আলম, মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’র ব্যুরো চীফ জুলহাস আলম, জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের ব্যুরো চীফ হারুন উর রশীদ ও ভারতীয় গণমাধ্যম জি মিডিয়ার ব্যুরো চীফ রাজীব খানসহ আরও ক’জন। তবে দেশীয় কোন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিকে এ ব্রিফিংয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ব্রিফিংয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নওশাদ জমির প্রমুখ।
×