ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জেলখানায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাত

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জেলখানায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্বজনদের  সাক্ষাত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এতিমদের টাকা আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করেছেন তার ভাই বোনসহ চার স্বজন। তারা খালেদা জিয়াকে বাড়ির তৈরি করা খাবার দিয়েছেন। কারাগারে খালেদা জিয়ার ডিভিশন দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। যদিও কারাগারে প্রবেশের পর থেকেই তিনি ডিভিশনের সব সুবিধা পাচ্ছেন। কারা সূত্রগুলো বলছে, কারাগারে খালেদা জিয়া প্রথম রাত সাধারণ বন্দী হিসেবে কাটালেও তাকে ডিভিশনের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে। রায়ে খালেদা জিয়ার জেল হওয়া এবং ঢাকায় রাখার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তাড়াহুড়ার কারণে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে শুরু করে সবকিছুই অত্যন্ত সতর্কতা ও যতেœর সঙ্গে করা হচ্ছে। শুক্রবার রাতেই বিএনপি চেয়ারপার্সনকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডে-কেয়ার সেন্টারের খোলামেলা পরিবেশে স্থানান্তর করা যায় কিনা, এজন্য জোরালো চেষ্টা চলছে। কারা সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া কারাগারে স্বাভাবিক ও সুস্থ আছেন। কথাবার্তা কম বলেন। বেশির ভাগ সময় পায়চারী করে কাটান। অস্বাভাবিক কোন কিছুই তার মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি। খুবই স্বাভাবিক রয়েছেন তিনি। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যেই মেহেরুনন্নেছা নামের একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত চিকিৎসককে কারাগারে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো যায় কিনা সে বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। বৃহস্পতিবার দুর্নীতির দায়ে দ-িত হন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তাকে ওইদিনই ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের কার্যালয়ে রাখা হয় তাকে। শুক্রবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে দেখতে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে যান তার পরিবারের চার সদস্য। এরা হচ্ছেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ও ছেলে অভিক এস্কান্দার এবং খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিনা ইসলাম। তারা শুক্রবার বিকেল তিনটা নাগাদ কারাগারের সামনে যান। পরে তারা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কারা অধিদফতরের উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ চারজনকে ভেতরে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়। জানা গেছে, সাক্ষাত শেষে তারা বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে কারাগার এলাকা ত্যাগ করেন। তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলেননি। কারাগারে খালেদা জিয়াকে তারা বাড়ির তৈরি করা খাবার দেন। এর আগে দুপুরে জেলগেটে ফল নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চান বিএনপি নেত্রী এ্যাডভোকেট আরিফা জেসমিন, নেত্রকোনা জেলা মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রেহানা তালুকদার ও সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি উম্মে কুলসুম রেখা। তবে কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করার অনুমিত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে তারা ফেরত যান। ফেরত গেলেও তারা তাদের নিয়ে যাওয়া ফলগুলো কারা কর্তৃপক্ষকে খালেদা জিয়ার কাছে পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করেন। কারা কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার কারণে সেসব ফল পৌঁছে দিতে আবারও অপারগতা প্রকাশ করেন। বছর দেড়েক আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সব বন্দী কেরানীগঞ্জে স্থাপিত নতুন কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরনো কারাগারটিতে জাদুঘর তৈরির পরিকল্পনা চলছে। কারাগারে কেউ নেই। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার আচমকা দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কোথায় রাখা হয়, সে বিষয়ে রীতিমতো গলদঘর্ম অবস্থা হয় কারা অধিদফতরের। নিরাপত্তার কারণে তড়িঘড়ি করে খালেদা জিয়াকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারেই রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এদিকে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার পর পাল্টে যায় পুরো এলাকার চিত্র। কারাগারে আশপাশে প্রতিটি রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলে। পুরো এলাকায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। চকবাজার, বেগমবাজার, আবুল হাসনাত, নাজিমুদ্দিন ও উমেশ দত্ত রোডের আশপাশের এলাকা এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নজরদারির মধ্যে। রাস্তায় ঘন ঘন কাঁটাতারের বেঁড়া ফেলে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব। পুরো এলাকায় সার্চ লাইট লাগানো হয়েছে। কারাগারের পাশে থাকা ওয়াচ টাওয়ারগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শক্তিশালী বাইন্যুকুলার হাতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। চারদিকে তীক্ষè নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে পুরো এলাকা। উঁচু ভবনের ছাঁদে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।
×