ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না॥ নাসিম

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বিএনপি আমাদের যে দোষারোপ করছে এটা ঠিক নয়। একটি রায়কে কেন্দ্র করে আদালত যা করার তা করেছে। কেউ যদি কোন কারণে সংক্ষুব্ধ হন তার অধিকার আছে উচ্চ আদালতে যাওয়ার। হাইকোর্টে যেতে পারে, সুপ্রীমকোর্টে যেতে পারে। সেই অধিকারটা এখনও বাংলাদেশে আছে। তবে বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে যে রায় সেটি জনপ্রত্যাশিত বলেও নিজের মতের কথা জানান তিনি। শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতির অষ্টম চাঁপাই উৎসব-২০১৮ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সরকার কোন ব্যক্তি বা দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চায় না। আমরা সবাইকে নির্বাচনে দেখতে চাই। কারণ, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। এবার একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। খালেদা জিয়া কারাগারকে ভয় পাচ্ছেন মন্তব্য করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আপনি ভয় পান কেন? ভয় পাওয়ার তো কিছু নেই। আপনি কাঁদেন কেন? যিনি সত্যিকারের রাজনীতিবিদ, তিনি জেলকে ভয় পান না। তিনি বলেন, জীবনে রাজনীতি করতে গিয়ে আমি কত জেল খেটেছি নিজেও জানি না। আপনাদের সব আমলেই আমি জেল খেটেছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শক্ত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে জঙ্গীর উত্থান বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই কোন কোন ক্ষেত্রে মালেশিয়া, শ্রীলঙ্কা এমনকি ভারতকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা কোন প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। একটি রায়কে কেন্দ্র করে অনেক বাজে কথা বলা হচ্ছে। তা বলবেন না। মানুষকে ধোঁকা দেবেন না। বোকা বানাবেন না। কেউ সংক্ষুব্ধ বা অসন্তুষ্ট হলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। আদালত আদালতের আইন অনুযায়ী কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পরও জাতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনকি আমিও পিতা হত্যার বিচার পাইনি। শুধু তাই নয়, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে এরশাদ থেকে শুরু করে খালেদার সময়ে। কেউ বলেননি, খুনীদের হত্যার বিচার শুরু করা উচিত। বরং খুনীদের বিভিন্ন পর্যায়ে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু হচ্ছে, সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক হচ্ছে। সবাইকে ফ্রি ওষুধও দেয়া হচ্ছে। নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির উন্নতি হচ্ছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন হচ্ছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, নতুন ও নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করবেন না কেউ। সবাই খেয়াল রাখবেন। তিনি বলেন, সমিতির প্রোগ্রাম করা খুব কঠিন হলেও বর্ণিল সমাবেশে আজকে যে অষ্টম চাঁপাই উৎসব হচ্ছে তা খুবই আনন্দের। এক সময়ে উত্তরবঙ্গ অবহেলিত থাকলেও চাঁপাইয়ের চাল আজ দেশ-বিদেশেও বিখ্যাত। বিষমুক্ত ও ফরমালিনমুক্ত আম সরবরাহ করা হলে চাঁপাইয়ের চেহারা আরও পাল্টে যাবে। প্রশাসনের মানুষ লাঠি ধরার আগে নিজেই ঠিক হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক উন্নতি হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিক্ষাদীক্ষায়, খেলাধুলায় অনেক এগিয়েছে। তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ আর পিছিয়ে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রহনপুর হয়ে ভারতে এ বছরই ট্রেন চালু করা হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তাই ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলের জন্য একাত্মতা ঘোষণা করছি। রায় জনগণের কাছে অত্যন্ত প্রত্যাশিত- হাছান ॥ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমানকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতের রায়ে দেশে কোন রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়নি। বিএনপি নেতারা আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করলেও কোথাও মানুষের মধ্যে কোন ধরনের আতঙ্ক বা থমথমে পরিবেশ নেই। কারণ, এ রায় ছিল জনগণের কাছে অত্যন্ত প্রত্যাশিত। এই রায়ের মাধ্যমে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, আইনের দৃষ্টিতে যে সবাই সমান ও আইনের উর্ধে যে কেউ নন, তা প্রমাণিত। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়- আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার’ শীর্ষক এক আলোচনা প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও দলের অন্যতম মুখপাত্র ড. হাছান মাহমুদ এ কথা বলেন। হাছান মাহমুদ বলেন, এই মামলার রায় খালেদা জিয়ার কর্মের ফল। এখানে সরকারের কোন হাত নেই। মামলাটি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের করা। এই মামলায় যে সরকারের হাত নেই, তা হলো- ২০১৪ সালে আমরা (আওয়ামী লীগ) দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসব, তা তো আমরা জানতাম না। মামলা স্বভাবিক প্রক্রিয়ায় চলেছে। যে বিষয় নিয়ে মামলা তাতে অল্প সময়েই বিচার কার্য সম্পন্ন হতে পারত। সেই মামলা তারা (বিএনপি) ১০ বছর প্রলম্বিত করেছে। বারবার সময় নিয়ে আদালতকে হেনস্থা করেছেন। রায়ের দিন রায় ভ-ুল করার জন্য সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অপচেষ্টা চালিয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারেক রহমানকে। যিনি দুর্নীতির দায়ে দ-প্রাপ্ত একজন ফেরার আসামি। এতেই প্রমাণিত, বিএনপি দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দানকারী একটি দল। বিএনপি অন্যান্য দুর্নীতিবাজদের দলে রাখার জন্য সাত ধারা সংশোধনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে বিএনপি দুর্নীতিবাজদের একটি প্ল্যাটফর্ম। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগ নেতা লায়ন চিত্তরঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির (জেপি) নির্বাহী সম্পাদক সাদেক সিদ্দিকী, সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আমিন রুহুল, মিনহাজ উদ্দিন মিন্টু, সংগঠনের নেতা মিজানুর রহমান বিটু, ইদ্রিস আহমেদ মল্লিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভা পরিচালনা করেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ঢাকা বিভাগীয় শাখার সহসভাপতি নওশের আলী।
×