ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লুসি হেলেনের সহায়তায় এগিয়ে এলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 লুসি হেলেনের সহায়তায় এগিয়ে এলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ নারী লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হোল্টের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। লুসি হেলেন ৫৭ বছর ধরে বাংলাদেশে বসবাস করছেন। প্রতি বছর ভিসা নবায়নের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ১৫ বছরের মাল্টিপল বাংলাদেশী ভিসাসহ লুসি হেলেনের হাতে তার পাসপোর্ট তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বাসস’কে জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জনসভার আগে ১৫ বছরের মাল্টিপল ভিসাসহ লুসি হেলেনের হাতে তার পাসপোর্টটি তুলে দেন।’ প্রেস সচিব বলেন, পাসপোর্ট হস্তান্তরের সময় প্রধানমন্ত্রী ৮৭ বছর বয়সী মানবতাবাদী লুসি হেলেনের সঙ্গে কথা বলেন। লুসি হেলেন বর্তমানে বরিশাল শহরে অক্সফোর্ড মিশনে কর্মরত রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় লুসি হেলেন অভিভূত হয়ে পড়েন।- খবর বাসস জন হোল্ট ও ফ্রান্সিস হোল্টের কন্যা লুসি ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সেন্ট হেলেন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে তিনি ১৯৬০ সালে প্রথম বাংলাদেশ সফর করেন। সে বছর তিনি বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে যোগ দেন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের শিক্ষা দেন। এরপর তিনি আর স্বদেশে ফিরে যাননি। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের প্রতি ভালবাসার টানে এখানেই থেকে যান। এরপর তিনি যশোর, খুলনা, নওগাঁ, ঢাকা এবং গোপালগঞ্জে ৫৭ বছর ধরে কাজ করেন। ২০০৪ সালে অবসর নেয়ার পর তিনি বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে ফিরে আসেন। অবসর জীবনে তিনি ইংরেজী শিক্ষা দেন এবং দুস্থ শিশুদের মানসিক প্রণোদনা দেন। পাশাপাশি দুস্থ শিশুদের জন্য সামর্থবানদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে লুসি হেলেনের অসামান্য অবদান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আহত মানুষের সেবা-শুশ্রƒষা করেছেন। সে সময় তিনি যশোর ক্যাথলিক চার্চে কর্মরত ছিলেন। তিনি শিশুদের ইংরেজী শিক্ষা দিতেন। যুদ্ধ শুরু হলে লুসি ছাড়া অন্য সবাই স্কুল বন্ধ করে দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে খুলনা চলে যায়। ভয়ঙ্কর ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি পাশের ফাতেমা হাসপাতালে যান এবং যুদ্ধাহত বেসামরিক নাগরিকদের সেবা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা একজন বিদেশী মহিলার এমন আগ্রহ দেখে অবাক হন এবং তাকে এ ব্যাপারে সম্মতি দেন। এরপর থেকে তিনি যুদ্ধাহত মানুষদের সেবা দিতে শুরু করেন। গত ১৬ ডিসেম্বর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লুসিকে সম্মাননা প্রদান করে। লুসির এখন শেষ ইচ্ছা, তিনি বাংলাদেশের মাটিতেই সমাহিত হবেন এবং মৃত্যুর পূর্বে তিনি এ দেশের নাগরিকত্ব কামনা করেন। তিনি বলেন, প্রতি ভিসা নবায়নের জন্য তাকে প্রচুর টাকা খরচ করতে হয় বলে তিনি বেশ কয়েকবার এ দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘গতবছর আমি ভিসা নবায়নের জন্য ৩৮ হাজার টাকা খরচ করেছি। আমি বর্তমানে প্রতি মাসে অবসরভাতা বাবদ মাত্র ৭৫ পাউন্ড (সাড়ে সাত হাজার টাকার মতো) পাই।’
×