ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিফাত কান্তি সেন

বেড়িয়ে আসুন তিতাস-বিধৌত জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বেড়িয়ে আসুন তিতাস-বিধৌত জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের চারপাশ দিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য নদ-নদী। তিতাস একটি উল্লেখযোগ্য নদীর নাম। যা কিনা বাংলাদেশের মধ্যে-পূর্বাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী একটি নদী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পাশ ঘেঁষেই বয়ে গেছে চমৎকার নদী তিতাস। প্রিয় পাঠক ৬৪ জেলার রূপ রস আর সৌন্দর্য্য নিয়ে লেখার নিমিত্তে আমরা আজ হাজির হয়েছি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্তপুরে! আমরা অল্পকথায় জানাতে চেষ্টা করব ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সম্ভাবনার কিছু গল্প। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা মতভেদ। লোকমুখে শোনা যায়, সেন বংশের রাজত্বকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অভিজাত ব্রাহ্মণকুলের অভাবে পূজা-অর্চনায় বিঘœ ঘটত। এই কারণে নাকি রাজা লক্ষণ সেন আদিসুর কন্যকুঞ্জ থেকে কয়েকটি ব্রাহ্মণ পরিবারকে এ অঞ্চলে নিয়ে আসেন। ধারণা করা হয় সে থেকেই এ অঞ্চলের নাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া। শিক্ষা-সাহিত্য, শিল্প সংস্কৃতি সব মিলে এক সমৃদ্ধ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সুর স¤্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আয়াত আলী খাঁসহ অনেক জ্ঞানী আর গুণীর জন্মধন্য জেলা এটি। জাতীয় অর্থনীতিতেও এ জেলা অবদান রেখে চলেছে। তিতাস গ্যাস ফিল্ড, সালদা গ্যাস ফিল্ড, মেঘনা গ্যাস ফিল্ড দেশের এক-তৃতীয়াংশ গ্যাস সরবরাহ যোগায়।এছাড়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম তাপ বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র ওই জেলার আশুগঞ্জে অবস্থিত। আশুগঞ্জে আরও রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম সার কারখানা। প্রিয় পাঠক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য গতভাবে ও সমৃদ্ধ। রয়েছে সুপরিচিত নদী তিতাস। এছাড়া সেখানে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ হয়ে থাকে। আজ আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন স্থানের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব। তিতাস নদী ‘তিতাস’ নামটি শুনলে যে কেউ বলে দিতে পারে এটি একটি নদীর নাম। অদ্বৈত মল্লবর্মণের বিখ্যাত উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ কে না জানে এই উপন্যাসের কথা! তিতাস পাড়ের জেলে সম্প্রদায়ের জীবন-সংগ্রামে গল্প এই উপন্যাস। পরে অবশ্য তিতাস একটি নদীর নাম শিরোনামে একটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করা হয়। তিতাস বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে প্রবহমান নদী বিশেষ। নদীটির উৎপত্তি হয়েছে ভারতের অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরায়। তিতাস নদীটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা দিয়ে নদীটি প্রবেশ করে শাহবাজপুর টাউন অঞ্চলের সীমানা ঘেঁষে এটি আরও দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে ভৈরব-আশুগঞ্জের সীমানা ঘেঁষে দেশের বৃহত্তম নদী মেঘনার সঙ্গে এসে মিশেছে। হরিপুর বড়বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসির নগর উপজেলাস্থ হরিপুর ইউনিয়নে অবস্থিত জমিদার বাড়ি, ‘হরিপুর বড়বাড়ি’। ১৮ শ’ শতাব্দীতে স্থাপত্যশৈলিটি নির্মাণ করেন জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরী। ঐতিহাসিক প্রাসাদটি প্রায় ৫ একর জমির উপর নির্মিত যাতে রয়েছে ৬০টি কক্ষ। এসব কক্ষে রয়েছে নাট্যশালা, দরবার হলো, গুদাম গোশালা, রন্ধনশালা, প্রমোদের কক্ষ, মঠ, মন্দির ইত্যাদি দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলী। ইতিহাস বলে হরিপুরের জমিদারগণ ত্রিপুরার প্রভাবশালী জমিদারগণের উত্তরসূরি ছিলেন। ১৩৪৩ বাংলার ১২ চৈত্র তারিখে কৃষ্ণ প্রাসাদ রায় মারা যান। পরবর্তীতে এ বাড়িটির অধিকারী হন হরিপদ রায় চৌধুরী ও শান্তি রায় চৌধুরী। তাঁদের কাছ থেকে আবার জমিদারি আসে উপেন্দ রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরী। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর তাঁরা এ দেশ থেকে চলে গিয়ে ভারতে নিবাস গড়েন। হরিপুরের জমিদার বাড়িটি এখন একটি পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
×